কপ-২৬ সম্মেলন: কয়লাভিত্তিক জ্বালানি ব্যবহার বন্ধের দাবি টিআইবির

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

অক্টোবর ২৮, ২০২১, ০৪:২২ পিএম

কপ-২৬ সম্মেলন: কয়লাভিত্তিক জ্বালানি ব্যবহার বন্ধের দাবি টিআইবির

কয়লাভিত্তিক জ্বালানির ব্যবহার বন্ধসহ নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসারের দাবি জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

যুক্তরাজ্যের গ্লাসগোতে আসন্ন কপ-২৬ জলবায়ু সম্মেলন উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (২৮ অক্টোবর) টিআইবি আয়োজিত ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ডা. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, বাংলাদেশে যে পরিমানে মিথেন গ্যাস উৎপাদন করছে তা নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলে শীর্ষ পরিবেশ দূষণকারী দেশগুলো থেকে আমরা যে ক্ষতিপূরণ পেয়ে থাকি, তা পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে।

এছাড়া সম্মেলনে ২০২১ সালের পর যেন আর কোন কয়লা ভিত্তিক প্রকল্প হাতে না নেওয়া হয়, সে আহ্বান জানোনো হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশ ২০২৫ সালের মধ্যে 'রিলিভেল এনার্জি' তে যাবার সক্ষমতা আছে। তবে সঠিক প্রযুক্তি ও বিনিয়োগের অভাবে তা এখনো কার্যকর হচ্ছে না। 

ডা. ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, 'ক্ষতিকারক দেশগুলোর উন্নয়নশীল দেশগুলোকে ১২০ বিলিয়ন ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। মনে রাখতে হবে এটা কোন অনুদান নয়।'

সম্মেলনে আরও জানানো হয়েছে, বর্তমানে বাংলাদেশ মিথেন গ্যাস উৎপাদনে প্রথম সারিতে অবস্থান করছে। এ ধরনের কথা যখন উঠে আসে তখন আন্তর্জাতিক পর্যায়েও সমালোচনা হয়। যেমন: রামপাল প্রকল্প। এসব আমাদের ক্ষতিপূরণ পাবার সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়। খেয়াল রাখতে হবে, আমরা যেন সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হয় না উঠি।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, প্রাক-শিল্পায়ন সময় থেকে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার জন্য ১৯৬টি দেশ প্যারিস চুক্তিতে সম্মত হয়। কিন্তু প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নে এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রদত্ত অঙ্গীকার প্রতিপালনে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও শুদ্ধাচার নিশ্চিতে ঘাটতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। প্যারিস চুক্তির পর ছয় বছর অতিবাহিত হলেও দেশগুলো চুক্তি বাস্তবায়নের পথরেখা চূড়ান্ত করতে পারেনি।

এতে বলা হয়, এরই মধ্যে বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১ দশমিক ২ ডিগ্রি বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু তাপমাত্রা বৃদ্ধি হ্রাসে সবচেয়ে বড় বাধা কার্বন নিঃসরণকারী কয়লাসহ জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার, রপ্তানি এবং এ খাতে বিশ্বব্যাপী অর্থায়ন বৃদ্ধি পাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী শিল্পোন্নত দেশসমূহ প্রতিবছর ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রতিশ্রুত উন্নয়ন সহায়তার অতিরিক্ত নতুন ১০০ বিলিয়ন ডলার জলবায়ু তহবিল দিতে ব্যর্থ হয়েছে।

২০৫০ সালের মধ্যে ‘নেট-জিরো’ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, কয়লার ব্যবহার বন্ধ, প্রতিশ্রুত জলবায়ু অর্থায়ন, বর্ধিত স্বচ্ছতা কাঠামো ও প্যারিস রুলবুক চূড়ান্ত করাসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে এ বছর কপ-২৬ এ আলোচনা হবে। যুক্তরাজ্যের গ্লাসগোতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এ জলবায়ু সম্মেলনকে প্যারিস চুক্তি পরবর্তী সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জলবায়ু সম্মেলন হিসেবে বিবেচিত এবং সমঝোতায় পৌঁছানোর শেষ সুযোগ বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, প্যারিস চুক্তিতে তাপমাত্রা বৃদ্ধি ঠেকাতে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার কমানোর কথা থাকলেও বাস্তবচিত্র উল্টো। উন্নত দেশগুলো ২০৩০ সাল নাগাদ জীবাশ্ম জ্বালানি উৎপাদন ও ব্যবহার ১১০ ভাগ বাড়ানোর পরিকল্পনা, কয়লার উৎপাদন ২৪০ ভাগ, তেল ৫৭ ভাগ আর গ্যাস ৭১ ভাগ বাড়ানোর পরিকল্পনা, জি-২০ দেশগুলোর ৩০০ বিলিয়ন ডলারের নতুন তহবিল জীবাশ্ম খাতে অর্থায়ন করার পরিকল্পনা, রামপাল, মাতারবাড়ি, বাঁশখালীসহ বাংলাদেশে মোট ১৯টি বড় কয়লা ও এলএনজিভিত্তিক প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত; প্রকল্পগুলোর একটি বড় অংশ জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা উপকূলীয় জেলায় নির্মাণ, প্যারিস চুক্তিকে পাশ কাটিয়ে জাপান, চীন ও কোরিয়াসহ বিশ্বের উন্নত দেশসমূহের এই প্রকল্পগুলোতে অর্থায়ন ও কারিগরি সহায়তা প্রদানে উদ্বেগ প্রকাশ করে টিআইবি। এসব বন্ধে ১৪টি সুপারিশও করে সংস্থাটি।

Link copied!