আপনি যদি সঙ্গীতের প্রতি অনুরাগী এবং দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে বসবাসকারী হয়ে থাকেন তাহলে নিশ্চয়ই কাওয়ালি গান শুনেছেন। কাওয়ালি এমন এক ধরনের সঙ্গীত যেখানে সুর, তাল ও লয়ের অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটে।
সচরাচর কাওয়ালি শুরু হয় কবিতা দিয়ে। সুরে সুরে কবিতা পড়তে পড়তে স্থায়ীতে ঢোকা হয়। সেই সাথে, যেই রাগের উপর ভিত্তি করে কাওয়ালিটি গাওয়া হবে, সেই রাগের আওচার চলে। প্রধান কাওয়াল কবিতাটি পড়েন। তবে অনেক সময় কবিতার লাইন শেষ হবার সময় বাকি শিল্পীদের কয়েকজন গলা মেলান। এভাবে স্থায়ী গাইবার মাধ্যমে মূল কাওয়ালীতে প্রবেশ করা হয়। কাওয়ালিতে স্থায়ীকে বার বার বিভিন্ন ভাবে গেয়ে খুব স্পষ্ট ভাবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়।
এ গানের স্থায়ী ও অন্তরার মধ্যে তাল বন্ধ রেখে প্রতিবার বিভিন্ন প্রকার রাগ ব্যবহার করা হয়। একজন মূল গায়ক ও কয়েকজন সহযোগীর সমন্বয়ে গঠিত এক একটি দল কাওয়ালি পরিবেশন করে যাতে মূল গায়ক গান পরিবেশ করেন এবং সহযোগীগণ ধুয়া ধরেন।
কাওয়ালি এমন এক ধরনের সঙ্গীত যেখানে অনেক শিল্পীর একসঙ্গে পরিবেশনা থাকে। অন্তত আট বা নয়জন শিল্পী নিয়ে কাওয়ালি পরিবেশিত হয়। হারমোনিয়াম, তবলা, ঢোল, সেতার এবং অন্যান্য বাদ্যযন্ত্র এই গানগুলোকে পরিপূর্ণ করে তোলে।
সাধারণত, একটি কাওয়ালি কনসার্ট বেশ কয়েক ঘন্টা চলতে থাকে। কারণ কাওয়ালি গানের মূল বৈশিণ্ট্যই হলো প্রথমে ধীর গতিতে গান চলে, এরপর লয় বাড়ে এবং আবারও লয় কমতে থাকে। কাওয়ালি এক প্রকার আধ্যাত্মিক প্রেমবিষয়ক ভক্তিমূলক গান। ফলে শ্রোতারাও মনোনিবেশ করতে পারে এই ধরনের গানে।
কাওয়ালি গানের শিল্পীদের ‘কাওয়াল’ বলা হয়। এটি একটি ভক্তিমূলক গান যা মূলতঃ সুফি সাধকরা নৃত্য ঢং-এ গেয়ে থাকেন।কাওয়ালি মূলত দাদরা ও কাহারবার কাওয়ালী ভার্সনের সাথে গাওয়া হয়।
তান কাওয়ালীর খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বলতে গেলে তান ছাড়া কাওয়ালী হয়ই না। “আ” কার বা সারগামে বিভিন্ন রকম তান করা হয়। সাপাট তান তো হামেশাই চলে, সাথে অন্যান্য তানেরও ব্যবহার হয়। অনেক সময় ২/৩ টি বোলে নিয়েও লম্বা করে গেয়ে একটা সাপাট তান দিয়ে সোমে ফেরা হয়। মূল গায়কের পাশপাশি অনেক সময় সহযোগী গায়কেরাও তাদের তানের প্রস্ততি দেখান। কাওয়ালিতে লয়কারীর সাথে বিভিন্ন ধরনের তানের ব্যবহার হয়। আর সব কিছুর সাথে হাত তালি তো রয়েছেই।
কাওয়ালির ধর্মীয় ভিত্তি
কাওয়ালি হল চিশতী সুফি ধারার আধ্যাত্মিক সঙ্গীতের সাথে যুক্ত। মুসলমান সুফি ও সাধকবৃন্দের আধ্যাত্মিক ও ধর্মবিষয়ক বিভিন্ন কাহিনীই হচ্ছে এই গানের মূল বিষয়বস্তু। প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ আমীর খসরু 'কাওয়ালি' ধারার সঙ্গীতের প্রবর্তক বলে স্বীকৃত;