কাওয়ালি: সুর ও তালের আত্মীক মেলবন্ধন

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জানুয়ারি ১২, ২০২২, ০৩:৪৮ পিএম

কাওয়ালি: সুর ও তালের আত্মীক মেলবন্ধন

আপনি যদি সঙ্গীতের প্রতি অনুরাগী এবং দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে বসবাসকারী হয়ে থাকেন তাহলে নিশ্চয়ই কাওয়ালি গান শুনেছেন। কাওয়ালি এমন এক ধরনের সঙ্গীত যেখানে সুর, তাল ও লয়ের অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটে।

সচরাচর কাওয়ালি শুরু হয় কবিতা দিয়ে। সুরে সুরে কবিতা পড়তে পড়তে স্থায়ীতে ঢোকা হয়। সেই সাথে, যেই রাগের উপর ভিত্তি করে কাওয়ালিটি গাওয়া হবে, সেই রাগের আওচার চলে। প্রধান কাওয়াল কবিতাটি পড়েন। তবে অনেক সময় কবিতার লাইন শেষ হবার সময় বাকি শিল্পীদের কয়েকজন গলা মেলান। এভাবে স্থায়ী গাইবার মাধ্যমে মূল কাওয়ালীতে প্রবেশ করা হয়। কাওয়ালিতে স্থায়ীকে বার বার বিভিন্ন ভাবে গেয়ে খুব স্পষ্ট ভাবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়।

এ গানের স্থায়ী ও অন্তরার মধ্যে তাল বন্ধ রেখে প্রতিবার বিভিন্ন প্রকার রাগ ব্যবহার করা হয়। একজন মূল গায়ক ও কয়েকজন সহযোগীর সমন্বয়ে গঠিত এক একটি দল কাওয়ালি পরিবেশন করে যাতে মূল গায়ক গান পরিবেশ করেন এবং সহযোগীগণ ধুয়া ধরেন।

কাওয়ালি এমন এক ধরনের সঙ্গীত যেখানে অনেক শিল্পীর একসঙ্গে পরিবেশনা থাকে। অন্তত আট বা নয়জন শিল্পী নিয়ে কাওয়ালি পরিবেশিত হয়। হারমোনিয়াম, তবলা, ঢোল, সেতার এবং অন্যান্য বাদ্যযন্ত্র এই গানগুলোকে পরিপূর্ণ করে তোলে।

সাধারণত, একটি কাওয়ালি কনসার্ট বেশ কয়েক ঘন্টা চলতে থাকে। কারণ কাওয়ালি গানের মূল বৈশিণ্ট্যই হলো প্রথমে ধীর গতিতে গান চলে, এরপর লয় বাড়ে এবং আবারও লয় কমতে থাকে। কাওয়ালি এক প্রকার আধ্যাত্মিক প্রেমবিষয়ক ভক্তিমূলক গান। ফলে শ্রোতারাও মনোনিবেশ করতে পারে এই ধরনের গানে।

কাওয়ালি গানের শিল্পীদের ‘কাওয়াল’ বলা হয়। এটি একটি ভক্তিমূলক গান যা মূলতঃ সুফি সাধকরা নৃত্য ঢং-এ গেয়ে থাকেন।কাওয়ালি মূলত দাদরা ও কাহারবার কাওয়ালী ভার্সনের সাথে গাওয়া হয়।

তান কাওয়ালীর খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বলতে গেলে তান ছাড়া কাওয়ালী হয়ই না। “আ” কার বা সারগামে বিভিন্ন রকম তান করা হয়। সাপাট তান তো হামেশাই চলে, সাথে অন্যান্য তানেরও ব্যবহার হয়। অনেক সময় ২/৩ টি বোলে নিয়েও লম্বা করে গেয়ে একটা সাপাট তান দিয়ে সোমে ফেরা হয়। মূল গায়কের পাশপাশি অনেক সময় সহযোগী গায়কেরাও তাদের তানের প্রস্ততি দেখান। কাওয়ালিতে লয়কারীর সাথে বিভিন্ন ধরনের তানের ব্যবহার হয়। আর সব কিছুর সাথে হাত তালি তো রয়েছেই।

কাওয়ালির ধর্মীয় ভিত্তি

কাওয়ালি হল চিশতী সুফি ধারার আধ্যাত্মিক সঙ্গীতের সাথে যুক্ত। মুসলমান সুফি ও সাধকবৃন্দের আধ্যাত্মিক ও ধর্মবিষয়ক বিভিন্ন কাহিনীই হচ্ছে এই গানের মূল বিষয়বস্তু। প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ আমীর খসরু 'কাওয়ালি' ধারার সঙ্গীতের প্রবর্তক বলে স্বীকৃত;

তিনিই কাওয়ালি গানের সংস্কার করেন এবং এটিকে একটি প্রথাবদ্ধ রূপদান করেন।

কয়েক শতাব্দী ধরে কাওয়ালির বিকাশ

কাওয়ালী গান সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে এগিয়েছে। নারীরা আগে কাওয়ালি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার এবং দেখার অনুমতি পেত না। কিন্তু এখন তারাও পারছে।

কাওয়ালি গানের ধারা বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে কিন্তু বিংশ শতাব্দীর শুরু পর্যন্ত এটি কেবল উপমহাদেশীয় মানুষের কাছেই পরিচিত ছিল। নুসরাত ফতেহ আলী এবং অন্যান্যদের মতো বিশ্ববরেণ্য সঙ্গীতজ্ঞ কাওয়ালি নিয়ে কাজ শুরু করার পর তা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে।

কাওয়ালির স্বাদ পাচ্ছে ঢাকা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী প্রথমবারের মতো টিএসসিতে কাওয়ালি গানের আয়োজন করতে যাচ্ছে। এই আসর বসবে আজ বুধবার সন্ধ্যা ৬টায়।

অনুষ্ঠানে কাওয়ালি পরিবেশনা করবে নাদিম কাওয়াল ও তার ব্যান্ড এবং ঢাবি ভিত্তিক কাওয়াল ব্যান্ড সিলসিলা। এছাড়াও আবৃত্তি ও গানের জন্য সুপরিচিত শেখ ফাহিম ফয়সালের পরিবেশনাও থাকছে।

অনুষ্ঠানের সংগঠক গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্র মীর হোজাইফা আল মামদুহ বলেন, "সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য এবং সব ধরনের উদ্ভাবনী বৈচিত্র্যকে মূলধারায় আনার লক্ষ্যে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী কেন্দ্রে এই কাওয়ালি মাহফিলের আয়োজন করেছি।"

তিনি বলেন, “ঢাকা শহরে, কাওয়ালী দুই শতাব্দী ধরে পরিবেশিত হচ্ছে কিন্তু সঙ্গীতের মূলধারায় এখনও যুক্ত হয়নি। মানুষ কাওয়ালির বৈচিত্র্য এবং অন্যান্য সমস্ত শিল্পের মধ্যে নিমজ্জিত হোক।”

Link copied!