মে ২২, ২০২২, ০৭:২৮ পিএম
বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টসহ সবধরনের ‘নিবর্তনমূলক’ আইন ও অধ্যাদেশ বাতিল করবে বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, “আমাদের পরিষ্কার ঘোষণা, আমরা সরকার গঠন করলে মুক্ত গণমাধ্যমের অন্তরায় ‘ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট’সহ সবধরনের নিবর্তনমূলক আইন ও অধ্যাদেশ বাতিল করব। গণমাধ্যমে প্রকাশিত যেকোনো বিষয় সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি বা সংস্থা প্রেস কাউন্সিলে ফয়সালা না করে কোনোভাবেই যেন আদালতে মামলা দায়ের করতে না পারেন, সেটা নিশ্চিত করা হবে।”
রবিবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে বিএনপি আয়োজিত গণমাধ্যম সংক্রান্ত এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “নিজেকে রক্ষা করার জন্য, সাংবাদিকদের স্বার্থকে রক্ষা করার জন্য, মানুষকে রক্ষা করার জন্য, এদেশের স্বাধীনতা-সার্বভ্মৌত্বকে রক্ষা করার জন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জেগে উঠতে হবে, পরাজিত করতে হবে এই ভয়াবহ দানবীয় ফ্যাসিবাদী শক্তিকে।”
ক্ষমতার পরিবর্তনে আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, “আমরা খুব আশাবাদী। বাংলাদেশের মানুষ কখনো পরাজিত হয়নি। টানেলের পেছনে আলো দেখছি বলেই পুনরায় উতসাহিত বা উতফুল্ল হচ্ছি তা নয়। আমরা সব সময়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার জন্য কাজ করেছি, কাজ করে যাচ্ছি।”
মূল প্রবন্ধে ‘রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার’ প্রকাশিত র্যাংকিংয়ে গত ১ বছরে বাংলাদেশ ১০ ধাপ পিছিয়ে ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৬২ তম হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়, এর পেছনে নিবর্তনমূলক আইন ও অধ্যাদেশগুলো দায়ী। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট, আইসিটি অ্যাক্ট, দ্য বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন রেগুলেশন ফর ডিজিটাল, সোশ্যাল মিডিয়া অ্যান্ড ওটিটি প্লাটফর্মস-২০১২, ওভার দ্য টপ(ওটিটি) কনটেন্টভিত্তিক পরিসেবা প্রদান ও নীতিমালা-২০২১, অফিসিয়াল সিক্রেসি অ্যাক্ট প্রভৃতির মাধ্যমে গণমাধ্যমকে এমনভাবে চেপে ধরার ব্যবস্থা করা হয়েছে যে, তারা শুধুমাত্র সরকারের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে। মামলা ও হয়রানির ভয়ে বেশিরভাগ মিডিয়া সেলফ সেন্সরশিপ আরোপ করা হয়েছে।
মতবিনিময় সভায় প্রথম আলো‘র যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান বলেন, “বিএনপির পক্ষ থেকে একটা প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়েছে তাতে কিছু অঙ্গীকার করা হয়েছে। তাদের অঙ্গীকারের প্রতি সংহতি প্রকাশ করতে পারি, আশ্বস্ত হওয়ারও চেষ্টা করতে পারি। কিন্তু আমাদের অতীত আশ্বস্ত হওয়ার মতো পরিস্থিতি নয়, বর্তমান তো নয়ই। স্বাধীনতার পর থেকে কোনো সরকারই সংবাদপত্র বা গণমাধ্যম বান্ধব ছিলো না, এখনো নেই।”
প্রথম আলোর সোহরাব হোসেনের দেয়া বক্তব্য খন্ডন করে বিএফইউজের সভাপতি এম আবদুল্লাহ বলেন, “সোহরাব ভাই সঠিক তথ্য দেননি। সাংবাদিক জহুর হোসেন কারাগারে যাননি। তার বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার পর আদালতে আত্মসমপর্ণ করে জামিন নেন। একুশে টিভি বিএনপি সরকার বন্ধ করেনি।”
মির্জা ফখরুলের সভাপতিত্বে এবং শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানির পরিচালনায় আলোচনা সভায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ১৭ মাস কারাগারে থাকার পর জামিন মুক্ত ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, দিনকালের সম্পাদক ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আবদুল হাই শিকদার, এমএ আজিজ, নুরুল আমিন রোকন, এলাহী নেওয়াজ খান সাজু, কামাল উদ্দিন সবুজ, বাকের হোসাইন, সৈয়দ আবদাল আহমেদ, জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, সরদার ফরিদ আহমদ, কাদের গনি চৌধুরী, ইলিয়াস খান, শহীদুল ইসলাম, ইলিয়াস হোসেন, রফিকুল ইসলাম আজাদ, মুরসালিন নোমানী, শফিক আহমেদ প্রমুখ বক্তব্য দেন।