খোকন, ফয়জুল করীম, রুপন নাকি তাপস, কে হচ্ছেন বরিশালের নগরপিতা?

মিজানুর রহমান খান

জুন ১২, ২০২৩, ০৯:৫৮ এএম

খোকন, ফয়জুল করীম, রুপন নাকি তাপস, কে হচ্ছেন বরিশালের নগরপিতা?

সংগৃহীত ছবি

বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। সোমবার সকাল ৮টায় শুরু হওয়া এই ভোটগ্রহণ চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। ভোট উপলক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ও স্থানীয় প্রশাসন। আসছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গাজীপুরের পরে খুলনা ও বরিশাল সিটি করপোরেশনের নির্বাচনকে বেশ গুরুত্বের সাথে দেখছে নির্বাচন কমিশন।

এটি নগরবাসীর জন্য পঞ্চম নির্বাচন। ২০০৩, ২০০৮ ও ২০১৩ সালের সিটি নির্বাচন দলীয় প্রতীকের বাইরে হলেও ২০১৮ এবং এবার নির্বাচন হচ্ছে সরাসরি দলীয় প্রতীকে। এবারই প্রথম বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের সব কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ‘অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে না’ অভিযোগ তুলে গতবারের মতো এবারও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে না প্রধান বিরোধীদল বিএনপি ও গতবারের আলোচিত মেয়র প্রার্থী বাসদের ডা. মণীষা চক্রবর্তী।

বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন এবার নানা কারণে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আওয়ামী লীগের বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহকে মেয়র পদে মনোনয়ন না দিয়ে তার চাচা খোকন সেরনিয়াবাতকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। এঘটনায় বরিশাল আওয়ামী লীগে বিভক্তি দেখা দেয়। মহানগর শাখা আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ পদধারী সক্রিয় নেতারা অনেকটাই নির্জিব ও নিস্ক্রিয় হয়ে পড়েন। বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সিটি নির্বাচন পরিচালনা কমিটির টিম লিডার আবুল হাসনাত আবদুল্লাহর বিরুদ্ধে  নৌকার প্রার্থী খোকনের পক্ষে প্রচারণা না চালানোর অভিযোগ রয়েছে বলে দলের  নেতাকর্মীরা জানান।

তবে নৌকা প্রতীক পাওয়া মেয়র প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাতের পক্ষে কাজ করেছেন সাবেক মেয়র শওকত হোসেন হিরণ ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীমের অনুসারীরা।

স্থানীয় সূত্র ও বিশ্লেষকদের মতে, আওয়ামী লীগের চলমান এই বিভাজন দূর না হওয়ায় ফলাফল ভিন্ন দিকে মোড় নিতে পারে। এক্ষেত্রে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মুফতি মুহাম্মদ ফয়জুল করিমের হাতপাখা ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী প্রকৌশলী ইকবাল হোসেন তাপসের লাঙল প্রতীক সুবিধাজনক অবস্থানে চলে আসতে পারেন।

এছাড়া, সাবেক মেয়র ও বিএনপি নেতা আহসান হাবীব কামালের ছেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল আহসান রুপন বিএনপির ভোটব্যাংকের বড় একটি অংশ তার দিকে ঝুকে পড়তে পারে।

বিশ্লেষকদের একটি অংশের ধারণা, আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় হাইকমান্ড স্বীকার না করলেও বরিশালে দলীয় কোন্দলের কারণে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের মতো বরিশালেও ক্ষমতাসীন দলের মনোনীত প্রার্থীকে হারিয়ে চমক দেখাতে পারেন চরমোনাইয়ের প্রয়াত পীর সৈয়দ মুহাম্মদ ফজলুল করিমের ছেলে মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিম বা জাতীয় পার্টির ইকবাল হোসেন তাপস।

বরিশাল আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, বরিশাল সিটি করপোরেশনের ৩০টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার ২ লাখ ৭৬ হাজার ২৯৮ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ১ লাখ ৩৮ হাজার ৮০৯ জন। আর  ১ লাখ ৩৭ হাজার ৪৮৯ জন পুরুষ ভোটার।

বরিশাল নগরীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোটার রয়েছে ৫ নম্বর ওয়ার্ডে ১৪ হাজার ৯১৭ জন, আর সবচেয়ে কম ভোটার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে ৫ হাজার ১৯২ জন।

বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মোট ১৬৭ প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। এর মধ্যে সাতজন মেয়রপ্রার্থী। তারা হলেন- আওয়ামী লীগের আবুল খায়ের আবদুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত, জাতীয় পার্টির(জাপা) প্রকৌশলী ইকবাল হোসেন তাপস, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম, জাকের পার্টির মিজানুর রহমান। স্বতন্ত্র হিসেবে সাবেক মেয়র আহসান হাবিব কামালের ছেলে ছাত্রদলের সাবেক নেতা কামরুল আহসান রুপন (টেবিল ঘড়ি প্রতীকে), আলী হোসেন হাওলাদার (হরিণ প্রতীকে) এবং মো. আসাদুজ্জামান (হাতি প্রতীকে)  মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

এ ছাড়াও ১১৮ জন সাধারণ ও ৪২ জন সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

এবার নির্বাচনে ৩০টি ওয়ার্ডে ১২৬টি কেন্দ্রের ৮৯৪ কক্ষে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ভোট পর্যবেক্ষণে ১ হাজার ১৪৬টি সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে বলে ইসি সূত্রে জানা গেছে।

ভোটে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ৪ হাজার ৪০০ পুলিশ, আনসার, এপিবিএন, র‌্যাব দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া ১০ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।

ভোটের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রাখতে মোতায়েন করা হয়েছে ১০ প্লাটুন বিজিবি, তিন সেকশন কোস্টগার্ড, র‍্যাবের ১৬টি টিম, পুলিশ-এপিবিএন-ব্যাটালিয়ন আনসারের ৪৩টি টিমে ৪ হাজার ৪০০ সদস্য দায়িত্ব পালন করছে বলে জানিয়েছেন বিএমপি কমিশনার সাইফুল ইসলাম।১০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছেন। এছাড়া ইসির নিজস্ব পর্যবেক্ষক টিম ঢাকায় নির্বাচন ভবনে মনিটরিং সেল থেকে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে স্থাপিত সিসি ক্যামেরায় ভোটগ্রহণ পর্যবেক্ষণ করছেন।  সেখানে রয়েছেন নির্বাচন কমিশনাররাও।

Link copied!