স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার শর্তে গণপরিবহন চালুর প্রথম দিনে রাজধানীর সড়কে বাসের সংখ্যা খুব বেশি না থাকলেও ব্যক্তিগত পরিবহন ও রিক্সার কারনে ফিরেছে যানজটের চিরচেনা রূপ। মহামারী ঠেকাতে ‘সর্বাত্মক লকডাউনে’ টানা ২২ দিন বন্ধ থাকার পর বৃহস্পতিবার (৬ মে) মহানগর ও জেলার মধ্যে গণপরিবহন চলাচল শুরু হয়েছে।
মার্কেটকেন্দ্রিক সড়কগুলোতে যানজট বেশি
বাস ও যাত্রীর সংখ্যা তুলনামুলকভাবে কম থাকলেও বিভিন্ন মার্কেট ও বাজারকেন্দ্রিক সড়কগুলোতে তীব্র যানজট ছিল। সকাল থেকে যাত্রীর চাপ কিছুটা কম থাকায় পরিবহনের চালক ও হেলপাররা অতিরিক্ত যাত্রী ওঠানোর সুযোগ পাচ্ছেন না। গণপরিবহন চালুর প্রথম দিনে আজিমপুর থেকে ঠিকানা পরিবহন, দেওয়ান পরিবহন ও ভিআইপি পরিবহনসহ কয়েকটি বাস সকাল থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে গেছে।
যানজটে লক্ষ্য করা গেছে রাজধানীর অনেক সড়কে। গুগল ট্রাফিক থেকে নেয়া চিত্র।
দুরপাল্লার পরিবহন নেই
রাজধানীর সাইনবোর্ড এলাকা থেকে গাবতলী ও সাভারগামী বাসের সংখ্যাও বেশ দেখা যায়। তবে সাভারগামী সকল গণপরিবহন গাবতলীর পর্বত সিনেমা হলের পর যেতে দেয়া হয়নি। এদিকে যাত্রীর সংখ্যা বাড়তে থাকলে সরকারের দেওয়া নির্দেশনা মানা হবে কি-না তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ কছেন কেউ কেউ। মিরপুর দুয়ারিপাড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে নিউ মার্কেট, আজিমপুর ও গুলিস্তানের উদ্দেশ্যে আশির্বাদ ও বিহঙ্গ বাস সার্ভিস ছেড়ে যেতে দেখা যায়। সকালে যাত্রী সংখ্যা কম থাকলে বেলা বাড়ার সঙ্গে সেটাও বেড়েছে।
বাসে দুই সিটে একজন যাত্রী নিতে দেখা গেছে। কয়েকটি বাসের হেলপারের হাতে স্যানিটাইজার দেখা গেলেও বেশিরভাগের মাস্ক দেখা যায়নি। বেশিরভাগ তবে চালকদের মুখে মাস্ক দেখা গেছে।গণপরিবহন চালু হওয়ায় অন্যদিনের চেয়ে বাস, প্রাইভেট কার, ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান ও রিকশার সংখ্যা বেড়ে সকাল ৯টার দিকে রাজধানীর কাকরাইল, মালিবাগ, মৌচাক, রামপুরা, গুলশান সড়কে যানজট সৃষ্টি হয়।
করা হয়েছে জরিমানাও
বিভিন্ন স্থানে ভাড়া নিয়ে অভিযোগ রয়েছে যাত্রীদের। অন্যদিকে বাসের ভিতর ভাড়ার চার্ট থাকার কথা থাকলেও কোন বাসেই ভাড়ার চার্ট নেই। কেনো নাই জানতে চাইলে বাসের ড্রাইভার বলেন, এই চার্টতো মালিকের পক্ষ থেকে দেওয়ার কথা। কিন্তু মালিকতো এই ধরনের কোন কিছুই আমাদের দেয়নি।
সকাল থেকে নিয়মনীতি মেনে বাস চলছে কিনা তার পরিদর্শনে থাকে বিআরটিএ। গাবতলীতে পরিদর্শন শেষে বিআরটিএ ম্যাজিস্ট্রেট ফকরুল ইসলাম বলেন, কোন বাসকেই আমরা গাবতলী পার হতে দিচ্ছি না। আর যে বাস গুলো অতিরিক্ত যাত্রী বহন করছে ও ভাড়ার চার্ট ব্যবহার করছে না তাদের কে অবস্থা বুঝে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা প্রর্যন্ত জরিমানা করা হচ্ছে। প্রথম দিন দেখে আমরা সচেতনতার জন্য আমরা এই জরিমানাটা করছি।
নিয়ম না মানায় জরিমানা করা হয় অনেক বাসচালককে।
বিভিন্ন নির্দেশনায় বাস চলার অনুমোদন
করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ ঠেকাতে গত ৫ এপ্রিল থেকে ‘লকডাউন’ ঘোষণা করে বিধিনিষেধ জারি করা হয়। ১৪ এপ্রিল থেকে শুরু হয় ‘সর্বাত্মক লকডাউন’। বন্ধ করা হয় সড়ক, নৌ ও রেলপথে যাত্রী পরিবহন। পরে পাঁচটি নির্দেশনা দিয়ে বৃহস্পতিবার (৬ মে) থেকে মহানগর ও জেলায় গণপরিবহন চলাচলের অনুমোদন দিয়ে প্রজ্ঞাপন দেয় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ- বিআরটিএ।নির্দেশনায় বলা হয়, আন্তঃজেলা গণপরিবহন বন্ধ থাকবে। কোনোভাবেই মোট আসনের অর্ধেকের বেশি যাত্রী নেওয়া যাবে না। সমন্বয় করে ৬০ শতাংশ বাড়ানো ভাড়ার বেশি আদায় করা যাবে না। যাত্রার শুরু ও শেষে জীবাণুনাশক দিয়ে গাড়ি জীবাণুমুক্ত করতে হবে। চালক, অন্যান্য শ্রমিক, কর্মচারী ও যাত্রীদের মাস্ক পরা এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার নিশ্চিত করার নির্দেশও দেওয়া হয় প্রজ্ঞাপনে।