বিজ্ঞানশিক্ষক হৃদয় মণ্ডল মুক্তি পেয়েছেন। কিন্তু ভয়-ভীতি থেকে মুক্তি পায়নি তাঁর পরিবার। ধর্ম অবমাননার অভিযোগে করা মামলায় বিজ্ঞান ও গণিতের এই শিক্ষক জামিনে মুক্ত হলেও তাঁর পরিবার এখনো নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। রবিবার জামিন পাওয়ার পর হৃদয়ের পরিবারের সদস্যরা নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কাছে অনুরোধও জানিয়েছেন।
হৃদয় মণ্ডলের শাশুড়ি (৮০) রেনুকা হাওলাদার সোমবার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘গত ২০ দিন ভয়ে আমরা বাড়ির বাইরে যাইনি। আজ সকালে হাঁটতে বের হয়েছিলাম। কয়েকজন ছেলে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। বাসার ছাদে গিয়েছিলাম, তখন ইট হাতে কয়েকজন মারতে তেড়ে আসছিল। ভয়ে ঘরের ভেতর ঢুকে গেছি।’
ওই বাড়ির গৃহকর্মী অনিতা সাহা বলেন, ‘আমি এই বাড়িতে রান্নার কাজ করি। মানুষজন আমাকেও ভয় দেখায়। গতকাল দুপুরে হৃদয় স্যারের জামিন হওয়ার কথা সবাই জানত। ওই সময় বাসায় কেউ ছিল না। হঠাৎ বাসায় তিনজন ঢুকে বলেন, কিরে বাড়িতে আসছোস?’
রবিবার বিকেলে কারামুক্ত হওয়ার পর পরই হৃদয় মণ্ডল ঢাকায় তাঁর এক আত্মীয়ের বাড়িতে গেছেন। শারীরিকভাবে অসুস্থ হওয়ায় সেখানে থেকে তিনি চিকিৎসা নিচ্ছেন। হৃদয় মণ্ডলের স্কুল বিনোদপুর রাম কুমার উচ্চবিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে তাঁর ছেলে শ্রেষ্ঠ মণ্ডল। ২০ দিন পর আজ সে স্কুলে গিয়েছে। অনেক দিন পর স্কুলে যেতে পেরে শ্রেষ্ঠ বেশ খুশি।
শ্রেষ্ঠ বলে, বাবা জেল থেকে ছাড়া পাওয়ায় সে খুব খুশি। ২০ দিন পর স্কুলে বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হয়েছে। সবাই খোঁজখবর নিয়েছে। কয়েকজন শিক্ষক ক্লাসে এসেও তাঁর খোঁজ নিয়েছেন বলে জানায় সে।
তবে গেল ২০ দিন বিভীষিকাময় সময় পার করেছে শ্রেষ্ঠ। তিরস্কার আর বিভিন্ন কটূক্তি থেকে শিশুটি বাদ পড়েনি। শ্রেষ্ঠ বলে, ‘বাবাকে জেলে নেওয়ার পর মানুষ আমাদের নানা কথা বলত। বাইরে দেখলেই আসামির ছেলে বলে ডাকত। কারা যেন বাড়ির সামনে এসে গেটের মধ্যে লাথি দিত, ধাক্কা দিত। ভয়ে বাড়ির বাইরে যেতাম না। বাবা যে কয় দিন জেলে ছিলেন, সেই কয় দিন স্কুলেও যেতে পারিনি।’
শ্রেষ্ঠ মণ্ডলের মামা বাদল হালদার বলেন, সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক শ্রেষ্ঠকে ক্লাসে নিয়ে যান। ক্লাস শেষে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শ্রেষ্ঠ বাসায় ফিরেছে।
বিনোদপুর রাম কুমার উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আলাউদ্দিন বলেন, গত ২০ দিন শ্রেষ্ঠ মণ্ডল বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত ছিল। তবে গতকাল হৃদয় মণ্ডল জামিন পাওয়ার পরই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বিদ্যালয়ের শিক্ষক সবুজ বাড়ৈ শ্রেষ্ঠ বিদ্যালয়ে নিয়ে আসবেন এবং নিরাপদে বাড়ি পৌঁছে দেবেন। এ ছাড়া ক্লাসের বাইরে তিনি শ্রেষ্ঠকে কাউন্সেলিং করবেন।
হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের ক্লাসে ফেরার বিষয়ে তিনি বলেন, যেহেতু আদালত তাঁকে জামিন দিয়েছেন। তিনি চাইলেই যেকোনো সময় ক্লাস শুরু করতে পারবেন।