পুলিশী বাধায় ছত্রভঙ্গ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

ডিসেম্বর ২, ২০২১, ০১:১৩ পিএম

পুলিশী বাধায় ছত্রভঙ্গ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন

পুলিশী বাধায় রামপুরা ব্রিজে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা জমায়েত হতে পারেনি। বৃহস্পতিবার ২ ডিসেম্বর রামপুরা ব্রিজে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ ও অবরোধ করতে চাইলে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। 

ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা

নিরাপদ সড়কসহ ১১ দফা দাবিতে গত তিন দিনের মতো সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন শুরু করেছিল শিক্ষার্থীরা। জনগণ যেখানে থাকবে পুলিশ সেখানে নিরাপত্তা দিবে সেটাই পুলিশের কাজ কিন্তু এমনটা না করে পুলিশ জনগণকে ভোগান্তিতে ফেলছেন বলে জানান সোহাগী সামিয়া নামের এক শিক্ষার্থী। 

তিনি আরও জানান, আমরা এখানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চাইনা। আজ এইচএসসি পরীক্ষা। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করতে চাই কিন্তু পুলিশ বাঁধা দিচ্ছে।

নিশি নামে এক শিক্ষার্থী খুব ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, সার্জেন আমাদের সহযোগিতা করছেন না। মামলা নেওয়ার মত পর্যাপ্ত সার্জেন নেই। কেনো নেই? আমাদের কেনো সাহায্য করছেন না?

তিনি আরো বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত না শাসকগোষ্ঠী আমাদের আন্দোলন মেনে নিচ্ছে, যতক্ষণ পর্যন্ত না তাদের টনক নড়ছে ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা আন্দোলন করবো বলে জানান শিক্ষার্থীরা।

এদিকে গতকাল ভিক্টর ক্লাসিক, রাইদা, আলিফ পরিবহনসহ বেশ কয়েকটি বাস আটকে দেয় তারা। এছাড়া গাড়ির ফিটনেস ও ড্রাইভিং লাইসেন্স চেকের জন্য সকল ধরনের যানবাহন থামানো হয়।

অহিংস আন্দোলন করছিল শিক্ষার্থীরা

বাস ভাঙচুর এর বিষয়ে জানতে চাইলে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী তুষার দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করছে। আমরা কখনো সহিংসতা চাই না, আমরা শুধু নিরাপদ সড়ক চাই। আমাদের দাবি আমাদের আন্দোলন আমাদের বিক্ষোভ যাই বলেন না কেন সেটা একটাই। আর সেটা হল নিরাপদ সড়ক।

আমরা বাস ভাঙচুর করছি না কিন্তু সিভিল ড্রেসে আইডি কার্ড ছাড়া এ আন্দোলনে যুক্ত হয়েছে কিছু ছেলে যারা এই কাজটি করছে আর নাম হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। সেই বিষয়েও আমার নজর রাখছি। 

আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থী রফিক বলেন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে তারা রাস্তায় আন্দোলন করছেন। কিন্তু যাদের সড়ক নিরাপত্তা দেওয়ার কথা সেই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গাড়ির ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকে তাহলে নিরাপদ সড়ক কিভাবে হবে। আমরা পুলিশের গাড়ির লাইসেন্স চেক করতে গেলে লাইসেন্স দেখাতে পারেনি।

পুলিশের বক্তব্য

রামপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, আমরা শুনেছি শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমেছে। আগে থেকে ঘোষণা ছিল তারা আজকেও নামবে। তবে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ঘটনাস্থলে পুলিশের যথেষ্ট উপস্থিতি রয়েছে।

গত দুই দিনে যে মামলা হয়েছে সেই মামলাগুলোর এখন অবস্থা কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে আমরা বলতে পারব।তাকে আরো জিজ্ঞেস করা হয়, বারোটি বাসে আগুন দেয়া হয়েছিল সেই বিষয়ে যে মামলাগুলো হয়েছে তার অবস্থা। তখন তিনি বলেন, সেই মামলাগুলোর তদন্ত চলছে, তদন্ত শেষে জানানো হবে।

মূলত নিরাপদ সড়ক এবং সড়কে নটরডেম কলেজের শিক্ষার্থী নাঈম নিহতের দুই দিনের মাথায় গাড়িচাপায় একরামুন্নেসা স্কুলের শিক্ষার্থী মাইনুদ্দীন ইসলাম দুর্জয়সহ যারা নিহত হয়েছেন সেটার দ্রুত বিচার, সারাদেশে শর্তহীন হাফ পাস কার্যকর, লাইসেন্সবিহীন যানবাহন বন্ধ, ফিটনেসহীন গাড়ি বন্ধসহ নানা দাবি নিয়েই মূলত গত কয়েকদিন ধরে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে শিক্ষার্থীরা।

প্রসঙ্গত, সোমবার (২৯ নভেম্বর) রাতে দু'বাসের প্রতিযোগিতায় মাঝখানে পড়ে অনাবিল বাসের চাপায় সড়কেই নিহত হয় মাইনুদ্দীন। এরপরই রামপুরায় শুরু হয় আন্দোলন। ওই রাতেই সড়কে ৮ গাড়িতে আগুন ও ৩টি গাড়ি ভাঙচুর করেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী এবং সাধারণ জনতা।

এদিকে ওই রাতেই অনাবিল বাসের চালককে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানায় পুলিশ। এবং ওই বাসের হেলপার চান মিয়াকেও রাজধানীর সায়দাবাদ হতে গ্রেফতার করে র‍্যাব।

Link copied!