বিআরটি প্রকল্পও শেষ হল না, ঈদযাত্রার ভোগান্তির শঙ্কাও গেল না

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

এপ্রিল ২৭, ২০২২, ০৩:০৮ এএম

বিআরটি প্রকল্পও শেষ হল না, ঈদযাত্রার ভোগান্তির শঙ্কাও গেল না

সময়ের সাথে সাথে খরচ বাড়লেও গাজীপুরের বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্প শেষ হয়নি এখনো। জনগুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্প নির্ধারিত সময়ে শেষ না হওয়ায় রাজধানীমুখী ২২ জেলার মানুষ বছরের পর বছর ধরে সড়ক পথে ’নরকযন্ত্রণা’ ভোগ করে আসছে। এবারও ঈদযাত্রায় যানবাহনের বাড়তি চাপে এই রুটের যাত্রীদের ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন যাত্রী ও চালকরা।

https://www.youtube.com/watch?v=LXQXHL3ncg0

সরেজমিনে দেখা যায়, বিআরটি প্রকল্পের সড়কের ওপরে উড়ালসড়ক এবং নিচে কার্পেটিং এখনো অনেক জায়গায় শেষ হয়নি। কাজ চলমান থাকায় মহাসড়কের কোথাও তিন লেন কোথাও, কোথাও দুই লেনে পরিণত হয়েছে। এতে ওই পথে যানবাহন খুবই ধীরগতিতে চলছে। যার কারণে সৃষ্টি হচ্ছে যানজটের।

গাজীপুরের সিএনজি চালক হায়াত আলী বললেন, এয়ারপোর্ট থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার সড়ক আসতে চার-পাঁচ ঘণ্টা সময় লাগছে। দুটো টিপ মারলেই দিন শেষ হয়ে যায়। সিএনজির জমার টাকা তুলতেই কষ্ট হয়। সংসার চালানোর কথা বাদই দিলাম।

আব্বাস আহমেদ নামের এক যাত্রী বললেন, ধীরগতিতে চলছে প্রকল্পের কাজ। একেকদিন সড়কের একেক লেন বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। আমাদের এই অঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই। কবে কাজ শেষ হবে আর আমরা সুফল পাবো, তা কেউ বলতে পারে না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেল, প্রকল্পটির সবমিলিয়ে ৭৩ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এমনটা জানিয়ে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবারের ঈদের বাড়তি চাপ নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বিআরটি'র এমডি শফিকুল ইসলাম এমনটাই দাবি করলেন। তিনি আরও বললেন, বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত গাড়ি চলাচলের জন্য যে রাস্তা আছে সেখানে কোনো খানাখন্দ নেই। এরপরেও মানুষের ঈদযাত্রা যাতে নিরবিগ্ন হয় সেজন্য আমারা দিনরাত কাজ করে যাচ্ছি।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (ট্রাফিক) উপ-কমিশনার (ডিসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন বললেন, সড়কে উন্নয়ন কাজ চলায় কিছুটা দুর্ভোগ হচ্ছে যাত্রীদের। তবে এবারের ঈদের ছুটিতে যাত্রীদের অনেক চাপ থাকবে। যাত্রীরা যাতে এই পথে দুর্ভোগ না পোহান সেই লক্ষে ট্রাফিকসহ পুলিশের সকল ইউনিট কাজ করে যাচ্ছে। আমরা বিআরটি'র সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছি।

প্রসঙ্গত যে, ঢাকার জন্য ২০০৫ সালে করা ২০ বছরের পরিবহন পরিকল্পনার (এসটিপি) আওতায় বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার সড়কে বাসের আলাদা লেন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এটাই বিআরটি প্রকল্প, যা ২০১২ সালের ১ ডিসেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদন পায়। প্রকল্প শুরুর পর থেকেই সড়কটিতে গর্ত-খানাখন্দে মানুষজন ভোগান্তি পোহাচ্ছেন।

গাজীপুরে দুই ফ্লাইওভার চালু

এবারের ঈদে ঘরমুখো মানুষের ভোগান্তি কমাতে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের উপর নির্মিত দুটি ফ্লাইওভার যানবাহন চলাচলের জন্য একযোগে খুলে দেওয়া হয়েছে। কাজ শেষ হওয়ার আগেই সোমবার দুপুরে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয় গাজীপুর মহানগরীর নাওজোড় ও কালিয়াকৈর উপজেলার সফিপুর বাজার ফ্লাইওভার।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের উদ্যোগে এডিবির অর্থায়নে সাউথ এশিয়া সাবরিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন (সাসেক) সড়ক সংযোগ প্রকল্পের আওতায় ফ্লাইওভারগুলো নির্মিত হচ্ছে। প্রায় ১০৫ কোটি টাকা ব্যয়ে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার সফিপুর বাজার এলাকায় ওই মহসড়কের উপর ১২৬৯ মিটার দীর্ঘ সফিপুর ফ্লাইওভার নির্মিত হচ্ছে। এ ছাড়া ৯৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ৮১৫ মিটারের নাওজোড় ফ্লাইওভারের কাজ চলছে। পুরো কাজ না শেষ হলেও ঈদে যানজট ও ঘরমুখো মানুষের দুর্ভোগ লাঘব করতেই ফ্লাইওভার দুটি খুলে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এতে শিল্পাঞ্চল গাজীপুর জেলায় ঈদের সময় যে যানজট ও ভোগান্তি হয় তা অনেকটাই কমে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

Link copied!