৭ বছরের শিশু মরিয়ম। ৯দিন ধরে শিশু হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে লড়াই করছে ডেঙ্গুর সাথে। অবস্থা খারাপ হলেও আইসিউতে পাঠাতে পারেননি মরিয়মের মা। অসহায় চাতকের মতো অপেক্ষা করছেন মেয়ের সুস্থ হওয়ার। মরিয়মের মতো আরো অনেক শিশুরই এখন দিন কাটছে হাসপাতালের বিছানায়।
মরিয়মের মতো কতোজন শিশু ডেঙ্গু আক্রান্ত তার একটি পরিসংখ্যান পাওয়া গেলো ঢাকা শিশু হাসপাতাল থেকে। হাসপাতাল থেকে পাওয়া প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে ৪৮৯ জন শিশু। অথচ ১০ দিন আগেও ছিলো ৩৬৫ জন শিশু। অর্থাৎ, সর্বশেষ ১০ দিনে আক্রান্ত হয়েছে ১২৪ জন শিশু।
এই ১২৪ শিশুর একজন হলো মরিয়ম। দ্য রিপোর্টের সাথে আলাপকালে তার মা খাদিজা বলছিলেন, ‘টাকা না থাকায় ওকে আইসিউতে ভর্তি করতে পারিনি। তাই এইখানেই ওর চিকিৎসা হচ্ছে। আল্লাহ ওকে রক্ষা করেছে। এখন একটু সুস্থ রয়েছে‘।
তাদের এলাকায় মশার উপদ্রব কেমন জানতে চাইলে খাদিজা বলেন, ’মশা মারার কোন পদক্ষেপই এলাকায় নেওয়া হয়না। শুধু দেখি কেরোসিন দিয়ে ধোঁয়া দিয়ে যায়। মশার যন্ত্রণায় বাচ্চারা বাইরে খেলাধুলাই করতে পারে না’।
মরিয়মের মতো আরো অনেক শিশুরই এখন দিন কাটছে হাসপাতালের বিছানায়। তাদেরই একজন মাহফুজ। ১০ বছরে বয়সে যেখানে মাঠে খেলার কথা সেখানে হাসপাতালেই এখন দিন কাটছে তার। ২২ আগস্ট থেকে সে হাসপাতালে ভর্তি। মাঝখানে দুইদিনের জন্য আইসিউও ঘুরে এসেছে সে। এই রকম কষ্টের কথাই বলছিলেন মাহফুজের মা আফসারা। তিনি দ্য রিপোর্টকে বলেন, ’মশার যন্ত্রণায় ঘরে থাকা যায় না। সব সময় জানালা দরজা বন্ধ রাখি যাতে মশা ঢুকতে না পারে। তারপরও আমার ছেলেকে রক্ষা করতে পারিনি। কিছুদিন আগে আইসিউতে নিতে হয়েছে, এখন কিছুটা সুস্থ আছে’।
মরিয়ম-মাহফুজের মতো ৪৮৯ জন শিশুর মধ্যে শুধু মিরপুরেই আক্রান্ত হয়েছে ১৩৫ জন। তাই এখনো মিরপুরকে ডেঙ্গুর হট স্পট বলে দাবি হাসপাতালের কর্তৃপক্ষের। পাশাপাশি আইসিউতে প্রচন্ড চাপ যাচ্ছে বলেও জানান শিশু হাসপাতালের উপ পরিচালক ডা. প্রবীর কুমার সরকার। তিনি দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘যে পরিস্থিতি চলমান রয়েছে তা খুবই ভয়ানক। প্রতিদিন ১০-১৫ জন নতুন রোগী ভর্তি হওয়ার পাশাপাশি সব মিলিয়ে ৫০/৬০ জন রোগী হাসপাতালে নিয়মিতভাবেই থেকে যাচ্ছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ রোগীর অবস্থাই ভয়াবহ। গত ২ মাসে আমাদের ৪ শতাধিক রোগী ভর্তি হয়েছে। তার মধ্যে গত আগস্ট মাসেই সর্বোচ্চ সংখ্যক রোগী ভর্তি হয়েছেন’।
আইসিউর বিষয়ে তিনি আরো বলেন, ’আইসিউতে প্রচন্ড চাপ। ১০ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হলে ৬ জনকেই আইসিউতে স্থানান্তর করতে হয়। কারণ, যারা ভর্তি হয় প্রত্যেকেই খারাপ অবস্থা নিয়েই ভর্তি হচ্ছে। যাদের কম্পিসেটেক শক রিকোভার করছে না, ডিকম্পেশেসনের দিকে যাচ্ছে তাদেরকেই আইসিউ সাপোর্ট দিতে হচ্ছে’।
মরিয়ম, মাহফুজদের খোঁজ নিতে গেলে জানা যায় গতকাল ১৪ জন শিশু ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে ঢাকা শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তার মধ্যে ৭ জন শিশুই একই ওয়ার্ডের। ওয়ার্ডটি হলো ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১২নং ওয়ার্ড। ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের অভিযোগ, এই ওয়ার্ডে কোন প্রকার মশা নিধনের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। শুধু ধোঁয়া দেয়া ছাড়া আর কোন ধরনের কার্যক্রমই ওয়ার্ড কাউন্সিলরের পক্ষ থেকে করা হয়না।
তবে দিন-রাত মশক নিধন কার্যক্রম চলমান আছে বলে জানান, ডিএনসিসর ১২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মুরাদ হোসেন। তিনি দ্য রিপোর্টকে বলেন, ’মশা এখন যতটা রয়েছে তার চেয়েও বেশি হারে ছড়িয়ে পরতো যদি না আমরা এটাকে গুরুত্বের সাথে সামাল দিতাম। তারপরও মশা দুই একজনকে কামড় দিচ্ছে, ফলে তারা আক্রান্ত হচ্ছে। এগুলো আমরা ঠেকাতে পারছি না, তবে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের এখন একটাই লক্ষ্য শীত না আসা পর্যন্ত দিন-রাত এটা নিয়ে গবেষনা ও কাজ করা’।