মার্চ ২০, ২০২৩, ০১:৩৫ এএম
পুলিশ কর্মকর্তা মামুন ইমরান খান হত্যা মামলার আসামি কথিত জুয়েলারি ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খানকে দুবাই থেকে দেশে ফিরিয়ে আনতে তৎপরতা শুরু করেছে বাংলাদেশ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, আরাভ খানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে সব রকম চেষ্টা চলছে। তবে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে ভারতে গিয়ে সে দেশের পাসপোর্ট নিয়ে ভারতীয় বনে যাওয়ায় তাকে কীভাবে ফেরত আনা হবে— তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। আইনজীবী ও কূটনীতিকদের অনেকে বলছেন, আরাভ খানকে দেশে ফিরিয়ে আনার প্রপার চানেল হচ্ছে ইন্টারপোল।
আরাভ খান ওরফে সোহাগ মোল্লা ওরফে রবিউল ইসলাম ওরফে আপন পুলিশ কর্মকর্তা মামুন ইমরান হত্যার ছয় নম্বর আসামী। কয়েকদিন আগেও মানুষ তাকে চিনতো না। দুবাইয়ে তার জুয়েলারি দোকান উদ্বোধন করতে যান ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানসহ শোবিজ জগতের অনেককে। এরপরই তাঁর বিষয়টি সামনে চলে আসে, শুরু হয় আলোচনা। রবিউল ওরফে আরাভ হয়ে যান টক অব দ্য কান্ট্রি।
ডিবির ভাষ্যমতে, আরাভ খান হত্যা মামলার পলাতক আসামি। একই সাথে দরিদ্র পরিবারের সন্তান আরাভ মাত্র ৩-৪ বছরে কীভাবে অঢেল সম্পত্তির মালিক হলেন, তাঁর টাকার উৎস কী— এসব প্রশ্ন মুখে মুখে ঘুরছে অনেকের। এখন পুলিশের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে আরাভ খান ওরফে রবিউলকে দেশে ফিরিয়ে আনা।
শনিবার (১৮ মার্চ) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, দুবাইয়ের সোনা ব্যবসায়ী আরাভ খান ওরফে রবিউল ইসলামকে দেশে ফিরিয়ে আনার সব চেষ্টা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে তাকে (আরাভ খান) ধরতে ইন্টারপোলের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।
এদিকে রবিউল ইসলাম ফেসবুক লাইভে এসে নিজেই বলেছেন, তার আমেরিকান গ্রিন কার্ড আছে। কানাডিয়ান পাসপোর্ট আছে। সর্বোপরি ভারতীয় পাসপোর্ট নিয়ে তিনি দুবাইয়ে ব্যবসা করছেন। তবে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, তার এসব দাবি সত্য নয়। কিন্তু ভারতীয় যে পাসপোর্ট তিনি বহন করছেন, সেটি আসল। ভারতীয় পাসপোর্টধারী হলেও আরাভ খান নিজেকে বাংলাদেশী নাগরিক হিসেবেই দাবি করেন।
আরাভ যেহেতু ভারতীয় পার্সপোটধারী, সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার ইন্টারপোলের মাধ্যমে তাকে ফেরত আনতে পারে কিনা—এমন প্রশ্নের স্পষ্ট জবাব দেননি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তবে আরাভ খান ওরফে রবিউল ইসলাম বিদেশি নাগরিক হিসেবে দুবাইয়ে অবস্থান করলেও তাকে ফেরাতে ইন্টারপোলের সহায়তা নিতে সমস্যা নেই বলে জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।
ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া মোবাইল ফোনে দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, ভাররতীয় পাসপোর্টধারী কেউ যদি বাংলাদেশে অপরাধ করে থাকেন এবং তার বিরুদ্ধে মামলার কার্যক্রম চলমান থাকে তবে বাংলাদেশ সরকার তাকে ফেরত আনতে ইন্টারপোলের কাছে সহায়তা চাইতে পারে।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের এক কর্মকর্তা দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, পুলিশ হত্যার আসামি আরাভ খান বাংলাদেশি হলেও পাসপোর্ট অনুযায়ি সে ভারতের নাগরিক। ভারতীয় নাগরিক হিসেবে তিনি দুবাইয়ে ব্যবসা করছেন। ওই দেশের লোকেরা তাকে ভারতের নাগরিক হিসেবেই চেনেন। কয়েকদিন আগেও ভারতীয় পাসপোর্টে বাংলাদেশ ঘুরে গেছেন। তাই সরকার ইন্টারপোলের সহায়তা নিলেও তাকে ফেরত আনা সহজ হবে না।
পুলিশের ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, দুবাইয়ে শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দেশটির গোয়েন্দা পুলিশের কাছে ধরা পড়লেও তাকে ফেরত আনা যায়নি। তাকে ফেরত আনার চেষ্টা চলছে বলে ওই সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন। ইন্টারপোলের সাথেও কথা বলা হয়েছে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল। পরবর্তীতে বিষয়টি চাপা পড়ে যায় এবং জিসানও ওই দেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছ থেকে ছাড়া পায়।
আইন বিশেষজ্ঞদের অনেকে বলছেন, ইন্টারপোল বাংলাদেশ সরকারকে এখন পর্যন্ত একটাও উপকার করতে পারেনি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু খুনীদের ফেরত পাঠাতে পারেনি। এমনকি বঙ্গবন্ধুর খুনীরা কোথায় কোথায় অবস্থান করছে, তা-ও সরকারকে জানাতে পারেনি ইন্টারপোল।
১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসলে মুক্তিযোদ্ধা, পেশাদার কূটনীতিক ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ দূত ওয়ালিউর রহমান ও জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) তৎকালীন মহাপরিচালক মশিউর রহমান তাদের নিজস্ব চ্যানেল ও যোগাযোগের মাধ্যমে খুনীদের অবস্থান শনাক্ত করেন।
তারপরও আরাভ খানসহ এ ধরণের খুনের আসামিকে ফেরত আনার ক্ষেত্রে একমাত্র উপযুক্ত চ্যানেল হচ্ছে ইন্টারপোলের সহায়তা নেওয়া—এমনটাই মনে করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব ও রাষ্ট্রদূত ওয়ালিউর রহমান।
বাংলাদেশ হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক এই বিশেষ দূত দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, এ ধরণের চোরাকারবারী, খুনী, অর্থলুটকারী ব্যক্তিকে ফেরত আনতে সরকারকে অবশ্যই ইন্টারপোলের সহায়তা চাইতে হবে। এটিই ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে একমাত্র প্রোপার চ্যানেল।
তিনি আরও বলেন, খুনী বাংলাদেশে ক্রাইম করে পালিয়ে ভারতে গিয়ে ওই দেশের নাগরিকত্ব নিয়ে তৃতীয় দেশে অবস্থান করছে। যেহেতু অপরাধী বাংলাদেশে ক্রাইম করে বিদেশে পালিয়ে গেছে এবং অপরাধীর বিরুদ্ধে মামলা চলমান রয়েছে, তাই তাকে ধরতে ইন্টারপোলের সহায়তা নিতে কোনো অসুবিধা নেই।