শিক্ষার্থীদের আগমনে প্রাণ ফিরেছে ঢাবি ক্যাম্পাসে

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

অক্টোবর ৫, ২০২১, ০২:০৪ পিএম

শিক্ষার্থীদের আগমনে প্রাণ ফিরেছে ঢাবি ক্যাম্পাসে

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার কারনে দীর্ঘ দেড় বছর বন্ধ থাকার পর মঙ্গলবার (৫ অক্টোবর) থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আবাসিক হলগুলো শর্তসাপেক্ষে শিক্ষার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে।

প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফের পদচারণা শুরু করেছে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের আগমনে প্রাণ ফিরেছে ক্যাম্পাসে। আবাসিক হলের শিক্ষার্থীদের আগমনে মুখরিত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। তাদের স্বাগত জানাতে নতুন সাজে সজ্জিত হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল, কলা ভবন, টিএসসির পায়রা চত্বর, কলা ভবনের অপরাজেয় বাংলা। তাদের সবার একটিই উদ্দেশ্য দীর্ঘ ১৮ মাস পর তাদের বরণ করে নেওয়া।

অপরদিকে, শিক্ষার্থীরাও তাদের প্রিয় ক্যাম্পাসে আসতে পেরে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে। ক্যাম্পাসের সেই আড্ডাস্থলগুলোতে সবার মুখে সাফল্যের মিষ্টি হাসি। তবে দুপুরের দিকে এক পশলা বৃষ্টি হওয়ায় আনন্দে যেনো ভাটা পড়ে। তারপরও অনেকদিন পর সহপাঠি ও রুমমেটদের পেয়ে আনন্দের সাগরে ভাসছেন।

মঙ্গলবার (৫ অক্টোবর) সকাল ৮টায় হল কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের ফুল, চকলেট ও বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো সংবলিত মাস্ক দিয়ে বরণ করে। এছাড়া, হল থেকে বের হওয়া ও প্রবেশের আগে শিক্ষার্থীদের হাতধোয়ার জন্য বেসিনও বসানো হয়েছে। এছাড়া হল ক্যান্টিন ও শৌচাগার সংস্কার করা হয়েছে। ক্যান্টিনগুলোর পরিচালক ও কর্মচারীদের টিকা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 

দীর্ঘদিন পর দেখা হওয়ায় শিক্ষার্থীরা একে অপরের খোঁজ খবর নিচ্ছে। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জহুরুল হক হলের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের আবাসিক শিক্ষার্থী  গোলাম রাব্বানি বলেন, অনেক দিন পর হলে উঠতে পারছি। আনন্দের কথা বলে বুঝানো যাবে না। কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ। আমরা বিশ্ববিদ্যালেয়ের দেওয়া নির্দেশনাগুলো অবশ্যই মেনে চলবো।

জিয়াউর রহমান হলের শিক্ষার্থী তৌফিক হোসাইন মবিন তার অনুভূতি প্রকাশ করে  বলেন, আমার হল আমার কাছে সবচেয়ে প্রিয় স্থান। বহুদিন পর হলে উঠতে পারছি। বন্ধুদের খোঁজ খবর নেয়া শুরু করছি। আশাকরি আগের মতোই পরিবেশ পাবো।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা একাধিক শিক্ষার্থী জানায়, আবাসিক হল তাদের কাছে দ্বিতীয় বাড়ির মতো।  অনেকদিন হলের আনন্দ থেকে তারা বঞ্চিত ছিল। এখন হল খুলে দেওয়ায় তারা আগের পরিবেশ ফিরে পাচ্ছেন।  

ঢাবি সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, অনার্স চতুর্থ বর্ষ ও মাস্টার্সের যেসব আবাসিক শিক্ষার্থী অন্তত করোনার প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছে, তারা স্বাস্থ্যবিধি ও স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) অনুসরণ করে টিকা গ্রহণের কার্ড/সনদ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈধ পরিচয়পত্র সংশ্লিষ্ট হল কর্তৃপক্ষকে দেখিয়ে মঙ্গলবার (৫ অক্টোবর) সকাল ৮টা থেকে নিজ নিজ হলে উঠতে পারছেন।

শিক্ষার্থীরা হলে ফেরায় সবার মনে আনন্দ: উপাচার্য

শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন পর হলে ফেরায় শিক্ষক ও প্রশাসনের মাঝে প্রাণচঞ্চলতা এসেছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান।

মঙ্গলবার সকালে বিজয় একাত্তর হল ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল পরিদর্শন করেন তিনি। এই ক্যাম্পাস শিক্ষার্থীদের জানিয়ে এসময় ঢাবি উপাচার্য বলেন,  শিক্ষার্থীরা চলে আসায় শিক্ষকদের মধ্যেও একটা প্রাণচঞ্চলতা চলে এসেছে, প্রশাসনের মধ্যে প্রাণচঞ্চলতা আসছে। সবার মনে আনন্দ এটা সবচেয়ে বড় দিক। এত দিন যে স্থবিরতা ছিল, সেটার অবসান ঘটেছে এবং অব্যাহত থাকবে।

উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান আরও বলেন, যত দ্রুত সম্ভব সব শিক্ষার্থীদের আমরা হলে নিয়ে আসতে পারি-সেটাই আমাদের লক্ষ্য। আজকের এই কর্মসূচি সেটি আমাদের পরবর্তী কর্মসূচি এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে অনুপ্রেরণা দেবে।

আবাসিক শিক্ষার্থীদের যেসব নির্দেশনা মানতে হবে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃপক্ষ করোনাভাইরাসের সংক্রমণের মধ্যে আবাসিক হলগুলো খুলে দিলেও আবাসিক হলের  শিক্ষার্থীদের বেশ কয়েকটি নির্দেশনা মেনে চলার শর্ত দিয়েছে। শর্তগুলো হলো-

১. কক্ষের বাইরে গেলে সবাইকে বাধ্যতামূলকভাবে নিয়মিত ও সার্বক্ষণিক সঠিক নিয়মে নাক-মুখ ঢেকে মাস্ক পরিধান করতে হবে।

২. স্বাস্থ্যবিধি পালনের জন্য সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

৩. স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী পরস্পরের কাছ থেকে কমপক্ষে এক মিটার (তিন ফুট) শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।

৪. কোনো কক্ষের মেঝেতে শোয়া যাবে না, এক বিছানায় একাধিক ব্যক্তি শোয়া যাবে না। কেবলমাত্র আবাসিক ও দ্বৈতাবাসিক শিক্ষার্থীরা হলে অবস্থান করতে পারবে। কোনো বহিরাগত বা বাইরে থেকে আসা কাউকে কক্ষে অবস্থান করতে দেওয়া যাবে না।

৫. প্রয়োজন সাপেক্ষে কক্ষে ও কক্ষের বাইরে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।

৬. শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ কক্ষ এবং কক্ষের প্রয়োজনীয় আশপাশ সবসময় নিজ দায়িত্বে পরিষ্কার রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে হল প্রশাসন সহযোগিতা প্রদান করবে।

৭. হল ডাইনিং, ক্যান্টিন, মেস, দোকান, সেলুন, রিডিংরুম, অডিটোরিয়াম, টিভিরুম, অতিথিকক্ষ, পাঠাগার, মসজিদ ও উপাসনালয়ে ভিড় করা যাবে না। এসব স্থানে শারীরিক ও সামাজিক দূরত্ব বিধি অনুসরণ এবং মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। ডাইনিংয়ে পালাক্রমে খাবার খেতে হবে।

৮. পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত অতিথিকক্ষে শিক্ষার্থীদের সমাবেশ বন্ধ রাখতে হবে। বেড়াতে ও ঘুরতে যাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। সভা-সমাবেশ, রেস্তোরাঁ, পার্টি ও গণপরিবহন এড়িয়ে চলতে হবে।

Link copied!