পরিবারের সবাইকে সঙ্গে নিয়ে ঈদ উল আজহা উদযাপন করতে নাড়ির টানে ছুটছে মানুষ। লকডাউন শিথিল থাকায় দূরপাল্লার পরিবহন ও আন্তঃজেলা পরিবহনে করে জনগণ ছুটছে পরিবারের কাছে। সোমবার (১৯ জুলাই) দেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলাগুলোতে যেতে মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ফেরিঘাটে ঘরমুখী মানুষের ঢল নামে। এসব ঘরমুখো যাত্রীদের পারপারে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় লঞ্চ ও ফেরিগুলোকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। স্পিডবোট সার্ভিস বন্ধ থাকায় যাত্রী পারাপারে আরও সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে।
অন্যদিকে,ঘরমুখো মানুষের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোনো লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না। দেখা যায় যাত্রীরা প্রচণ্ড ভিড়ে একে অন্যের গা ঘেষে বসে আছেন। যাত্রীরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছে কিনা তা দেখতে রবিবার পুলিশি তদারকি দেখা গেলেও সোমবার সকাল ১০ টা পর্যন্ত তা চোখে পড়েনি।
শিমুলিয়া ফেরিঘাট সূত্র জানায়, সোমবার (১৯ জুলাই) শিমুলিয়া ফেরিঘাটে ঈদকে কেন্দ্র করে দক্ষিণ বঙ্গের ২১ জেলার মানুষের জনস্রোতের চাপ দেখা গেছে। সোমবার ফজরের নামাজের পরই হাজারো যাত্রী ঘাটে এসে ভিড় করছেন। যাত্রীদের ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যাও ছিল উল্লেখ করার মতো।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) শিমুলিয়া শাখা সূত্রে জানা যায়, যাত্রী আর যানবাহন পারাপারে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুটে বর্তমানে ১৯ টি ফেরির মধ্যে ১৬টি সচল রয়েছে।তবে যাত্রীদের ভিড় সামলাতে ও তাদের পারাপারে বেশ হিমশিম খাচ্ছেন ফেরি কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। মাইকিং করা হলেও যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা যায়নি। একটা ফেরি ঘাটে এসে আনলোড হওয়ার পাঁচ মিনিটের মধ্যেই ফেরি ভরে যায় ঘরমুখো যাত্রীদের প্রচণ্ড ভিড়ে।
শিমুলিয়া-বাংরাবাজার নৌরুট সূত্র জানায়, শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুটে ৮৬ টি লঞ্চ যাত্রীদের পারাপার করছে। এসব লঞ্চে অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে যাত্রী পারাপারের নিয়ম থাকলেও ওই নিয়মকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে স্বাভাবিকের তিন গুণ বা চার গুণ বেশি যাত্রী পারাপার করছে লঞ্চগুলো। এমতাবস্থায় যে কোনো সময়ে বড় ধরণের লঞ্চডুবি দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন অনেকে।
শিমুলিয়া ঘাটে দেখা যায়, ঘাটে একটা লঞ্চ ভিড়লেই যাত্রীরা লঞ্চে উঠতে হুড়োহুড়ি করে যাত্রীরা। যাত্রীরা মনে করেন লঞ্চে জায়গা পাবে না। ফলে স্বাস্থ্যবিধি নষ্ট হচ্ছে। যাত্রীদের মাস্ক নিশ্চিত ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে লঞ্চে প্রবেশ করানোর নিয়ম থাকলেও এসব কিছুই মানা হচ্ছে না।
স্থানীয় ও নৌপুলিশ সূত্র জানায়, শিমুলিয়া ঘাটের প্রবেশমুখের বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোস্টের পাশাপাশি সোমবার ঘাটে শৃঙ্খলা রক্ষায় বাড়ানো হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ। সকালে শিমুলিয় ফেরিঘাটে প্রবেশের সবগুলো পথেই মানুষের ভীড় লক্ষ্য করা গেছে।
মাওয়া নৌপুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সিরাজুল কবির দ্য রিপোর্টকে বলেন,‘ শিমুলিয়া থেকে ফেরি ও লঞ্চ বাংলাবাজার ঘাটে ভিড়লে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে যাত্রীদের আমরা আমরা লাইন ধরে নামানোর চেষ্টা করছি। পাশপাশি লঞ্চগুলো জনগণের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য কি ব্যবস্থা নিচ্ছে তা তদারকি করছি।’
তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি না মানায় সকালে ৬টি লঞ্চের সারেংকে প্রত্যেককে ২ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে এবং তাদের লঞ্চের সার্ভিস ৪ ঘন্টা বন্ধ করে রাখা হয়েছে।
এদিকে, শিথিল হওয়া লকডাউন চলাকালে মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ও মাদারীপুরের বাংলাবাজার ঘাটে ফেরি ও লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও কোনো স্পিডবোট চলছে না। স্পিডবোটের সার্ভে, ড্রাইভিং লাইসেন্স ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) রুট পারমিট না পাওয়ায় এ রুটের সব স্পিডবোট চলাচল বন্ধ রয়েছে। আর এই কারণে ফেরিতে ও লঞ্চে নদী পারের জন্য অনেক মানুষ ভিড় জমিয়েছে।