রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার লক্ষে সুদানের সেনাবাহিনী ও আধা সামরিক বাহিনীর চলমান সংঘর্ষের কারণে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের উদ্ধার প্রক্রিয়া শুরু করেছে বাংলাদেশ সরকার।
দেশটিতে অবস্থান করা দেড় হাজার বাংলাদেশিদের মধ্যে প্রায় ৭০০ জন দেশে ফেরত আসার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন। এসব বাংলাদেশিদের ফেরত আনতে রাজধানী খার্তুম থেকে প্রথমে সুদান সমুদ্র বন্দর ও পরে জেদ্দা সমুদ্র বন্দরে আনা হচ্ছে। পরবর্তীতে জেদ্দা থেকে তাদের বাংলাদেশ বিমানের কয়েকটি ফ্লাইটে ঢাকায় আনা হবে। শনিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সুত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পোর্ট সুদানে নেওয়ার জন্য নয়টি বাস ঠিক করা হয়েছে। খার্তুম এবং এর আশপাশের শহর থেকে বাংলাদেশিদেরকে এসব বাসে করে সুদান বন্দরে নেওয়া হবে। পরে ওখান থেকে জাহাজে করে জেদ্দা বন্দরে বাংলাদেশিদের আনা হবে। সুদান বন্দর থেকে সৌদি নৌবাহিনীর জাহাজে করে জেদ্দায় বাংলাদেশিদের আনা হবে। সৌদি সরকার বিনামূল্যে এই জাহাজ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। ২ মে তারিখের মধ্যে সকল বাংলাদেশিকে পোর্ট সুদানে নিয়ে আসা সম্ভব হবে বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় আশা করছে।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও জানায়, এবিষয়ে আলোচনার জন্য সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত বর্তমানে পোর্ট সুদানে অবস্থান করছেন। আসছে ৩ বা ৪ মে তারিখের মধ্যে বাংলাদেশিরা জেদ্দা পৌঁছবেন বলেও রাষ্ট্রদূত আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও জানায়, সুদান থেকে বাংলাদেশিদের উদ্ধার করে জেদ্দার দুইটি বাংলাদেশি স্কুলে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। জেদ্দা পৌঁছানোর দিনই বাংলাদেশ বিমানের বিশেষ ফ্লাইটে বাংলাদেশিদের ঢাকায় ফিরিয়ে আনার বিষয় প্রধানমন্ত্রী জাপান সফরের আগে নির্দেশ দিয়েছেন বলেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
সুদানে কেন এই বিরোধ?
২০২১ সালের ডিসেম্বরে সুদানের বেসামরিক সরকারকে উৎখাত করে জেনারেল বুরহান ক্ষমতাসীন হবার পর থেকেই দেশটিতে রাজনৈতিক তোলপাড় চলছে।
ক্ষমতা হাতে নিয়েই আল-বুরহান দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করেন। ২০২৩ সালের জুলাইয়ের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি বেসামরিক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন। তবে প্রস্তাবিত বেসামরিক সরকারে কে একীভূত সামরিক বাহিনীর প্রতিনিধিত্ব করবেন - তা নিয়ে মূলত তৈরি হয় বিবাদ।
সুদানে একটি বেসামরিক সরকার পুনপ্রতিষ্ঠা করার জন্য বিভিন্ন গোষ্ঠী ও সেনাবাহিনীর মধ্যে চেষ্টা চললেও তা ব্যর্থ হয়। ওই সময় প্যারামিলিটারি বাহিনীর এক লাখ সদস্যকে সেনা বাহিনীতে একীভূত করার প্রশ্নটিও সমস্যার মূল কারণ হিসেবে দেখা দেয়। এরপরই চলতি বছরের ১৫ এপ্রিল শুরু হয় দুই পক্ষের তুমুল সংঘর্ষ। এর ফলে আটকা পড়েছে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিকেরা।
প্রসঙ্গত, সুদানে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের উদ্ধারে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিবের নির্দেশনায় সৌদিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত, জেদ্দার কনসাল জেনারেল এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা যৌথভাবে কাজ করছেন।