‘রাইত হইলেই আমগো বাড়ি ছাইড়া চইল্যা যাওন লাগে’

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জুন ৮, ২০২২, ১২:৫৭ পিএম

‘রাইত হইলেই আমগো বাড়ি ছাইড়া চইল্যা যাওন লাগে’

"আমরা ঘরে থাকতে পারতিছি না, আতঙ্কে আছি। রাইত হইলেই বাড়ি ছাইড়া চইল্যা যাওন লাগে।”

বুধবার দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে এভাবেই কষ্টের কথা বলছিলেন সীতাকুণ্ডের বিএম ডিপোর পার্শ্ববর্তী এলাকার বাসিন্দা মমতাজ বেগম।

তিনি বলেন, “আমগো রান্নাবান্না নাই খাওন নাই কিচ্ছু নাই। এইমাত্র একটু ভাত খাচ্ছি। খাইতে পারছি না তিন দিন ধইরা। দোকানে রান্নার জন্য কিচ্ছু নাই। পুরা দোকান জ্বইলা গেছে। কিছুই করতে পারিনি। এখন কেডা দিব আমগো এই ক্ষতিপূরণ।”

সীতাকুণ্ডের বিএম কন্টেইনারে আগুন ছড়িয়ে পড়লে আতঙ্কে পরে যায় পার্শ্ববর্তী এলাকাবাসী। অনেক কন্টেইনার ব্লাস্ট হয়ে পাশের এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরে। এতে মসজিদ ও বিভিন্ন বাড়ির জানালা দরজা ভেঙ্গে যায়।

বিএম কন্টেইনারের পাশেই থাকেন লাকী আক্তার। প্রতিদিনকার মতো আগুনের রাতেও বাচ্চাকে পড়াতে বসিয়েছিলেন। প্রথমে ধোঁয়া দেখে মনে করেন কিছু পোড়ানো হচ্ছে। এর কিছুক্ষণ পরেই শুনতে পান ফায়ার সার্ভিসের এলার্ম। এলার্ম শুনেই বুঝতে পারেন আগুন লেগেছে। সাথে সাথে পরিবারের সবাইকে নিয়ে দৌড়ে আসেন বারান্দায়। তখনই তাকে মুখোমুখি হতে হয় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের।

তিনি দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, “ফায়ার সার্ভিস পানি দেওয়ার পর আগুন আরো উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। আমি দেখছি যে আগুন ছোট ছোট বলের মত হয়ে ফুটছে। এরপর আবারও ব্লাস্ট হয়। সেসময় বিকট আওয়াজ হয়। আমি স্বামী, শ্বাশুড়ি ও বাচ্চাকে নিয়ে পরে যাই। তখন আমার স্বামীর মাথায় কাঁচ লেগে কেটে রক্ত বের হয়। তখন মনে হয়েছিলো আমরা আর বাঁচবো না। মনে হচ্ছিলো ঘরটা মাথার ওপর ভেঙে পড়েছে। আমাদের পুরো এলাকা অন্ধকার হয়ে গেছে, কেউ কিছু দেখতে পারছিনা। আমরা এখনো নিজেদের স্বাভাবিক হতে পারছিনা। ভয় কাজ করছে। আমার বাচ্চা ভযয়ে ঘরে আসতে চাইছে না। আমাদের পরিবারের সবাই আতঙ্কে আছে।”

লাকী আক্তারের বাসার আগেই মিয়া বাবুর দোকান। বিস্ফোরণের আগে তিনি দোকানের সামনে দাঁড়িয়েছিলেন। হঠাৎ বিকট শব্দ শোনার সাথে সাথে দেখেন দোকানে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। সব গ্লাস ভেঙ্গে পড়েছে। এখনো আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে মিয়া বাবু।

তিনি বলেন, "আমরা এখনো প্রচুর আতঙ্কে আছি। এখন গ্যাসের যে গন্ধ তাতে আমরা টিকতে পারছি না। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। চোখ, মুখ জ্বালাপোড়া করে।”

শুধু মিয়া বাবু নয় বিএম ডিপোর পাশে পুরো এলাকার মানুষ যেন এখন আতঙ্কের ভেতর বসবাস করছে। অনেকেই ঘর ছেড়ে চলে গেছেন। যাঁরা আছেন তাঁরাও বিকেল হলে এলাকা ছেড়ে চলে যান। যাঁরা এলাকায় থাকেন তাঁরাও ঘুমহীন রাত কাটায়। বুধবার সকালে এলাকাঘুরে আশেপাশের মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায় এ চিত্র।

Link copied!