রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে জায়গা পায়, আর আমরা এ দেশের নাগরিক, আমাদের এনআইডি (জাতীয় পরিচয়পত্র) আছে-আমরা এদেশে জায়গা পাবো না! এমন নানা আক্ষেপ করে বাচ্চা কোলে নিয়ে বিধবা এক নারী দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, আমার স্বামীরে মানুষ মাইরা ফেলছে, আমার স্বামীর ভিটা বাড়ি নাই। আমারো বাড়ি নাই। আমি অহন কই যামু। আমার মাথা গোঁজার শেষ ঠিকানাটাও থাকবো না।
মঙ্গলবার (১৯ অক্টোবর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ‘রেলওয়ে কলোনির সর্বস্তরের বস্তিবাসী’র ব্যানারে তারা এই মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। এসময় তারা ‘অবৈধ উচ্ছেদ মানি না, মানবো না’ স্লোগান দিতে থাকে।
মাইনষের বাড়িতে বাটি লইয়া যাই, দুইটা ভাত চাইয়া খাই। আমার কে আছে যে আমারে কামাই কইরা দিবো? নাই স্বামী, নাই ছেলে, নাই মেয়ে। আমি আর আমার প্রতিবন্ধী নাতী থাইয়। এই বাচ্চা লইয়া আমি কই যামু, আমি ভোটার দেশের। এমনই বিলাপ করছিলেন আলেয়া বেগম নামের ৭৫ বছরের বৃদ্ধা। ৫০ বছর ধরে তিনি বসবাস করে আসছিলেন ফুলবাড়িয়া রেলওয়ে কলোনী বস্তিতে।
আমার স্বামী নাই বাবা, আমি অসহায় মানুষ, আমরা কর্ম করে খাই, আমাদের থাকার জায়গা ভাইঙ্গা দিবো, আমরা কোন জায়গায় যামু বইলা বিলাপ করতে করেতে ৮০ বছরের এক বৃদ্ধা দ্য রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, আমি স্বামী হারা একজন, অনেক বছর ধরে মাথা গোঁজার ঠাই কলোনীর বস্তি। এখন কিছু লোকজন নোটিশ দিয়ে কয় অই জায়গায় থাকা যাইবো না, আমি অহন কই যামু বাবা। আমার আর থাকোনের জায়গা নাই। ২৪ তারিখ সব গুছায় নিতে কইছে, ২৫ তারিখ ভাঙবো।
কথা হয়েছিলো ৪র্থ শ্রেনীর এক শিক্ষার্থী কবিতার সাথে। করোনার কারণে পড়ালেখায় কিছুটা পিছিয়ে পড়লে স্বপ্ন তার অটুট। তবে মাথা গোজার ঠায়টুকু ভেঙ্গে দেয়া হলে পড়াশোনাই বা করবে কিভাবে এমন আক্ষেপ নিয়ে সে বলে, আমরা যেখানে থাকি সেখানে একটা স্কুল আছে। সেই স্কুলটাও ভেঙ্গে দিবে তাহলে আমরা পড়াশোনা করবো কি করে?
মহসিন মন্টু নামে এক বস্তিবাসী জানান, দুই বছর আগে মেয়র আমাদের বলেছেন পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে দিবেন। কিন্তু তিনি ব্যবস্থা করেননি। আজকে রেলের লোকেরা হঠাৎ করেই আমাদেরকে এসে বলেন- ২৪ অক্টোবরের মধ্যে এখান থেকে চলে যেতে হবে। আমরা এখানে ৪০ বছর ধরে থাকি। আমরা এখন কোথায় যাবো?
তাহমিনা আক্তার নামে এক গৃহবধূ জানান, আমাদের মা-বাবার জন্ম এখানে, আমাদের জন্ম এখানে। আমার বাচ্চা ক্লাস টেনে পড়ে। আমাদের তো সময় দিতে হবে। আমি বলছি অন্তত তিন মাস সময় দিক, আমার মেয়ের পরীক্ষা শেষ হলে আমি চলে যাবো। কিন্তু তারা কোনো সময় দিবে না। আমাদের বলেন ২৪ তারিখের মধ্যে ছেড়ে দিতে হবে। আমরা এখন কোথায় যাবো? আমার মেয়ে বস্তির এক স্কুলেই পড়ে। সে কিভাবে পড়বে?
আক্ষেপ করে তাহমিনা আরো বলেন, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে জায়গা পায়, আর আমরা এ দেশের নাগরিক, আমাদের এনআইডি (জাতীয় পরিচয়পত্র) আছে- আমরা এদেশে জায়গা পাবো না! আমাদের পূনর্বাসনের জাউগা করে দিয়ে বস্তি উচ্ছেদ করুক।
আগে থেকে কোনো নোটিশ দিয়েছে কিনা জানতে চাইলে তারা বলেন, আমাদের কিছু জানানো হয়নি। আমাদের ভোটার আইডি কার্ড নিয়েছে, নাম লিখেছে- এর একটু পর মাইকে ঘোষণা দিয়েছে ২৪ তারিখের মধ্যে চলে যেতে হবে।
ফুলবাড়িয়া রেলওয়ে এলাকায় পুনর্বাসন ও পূর্ব নোটিশ ছাড়া বস্তি উচ্ছেদ বন্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন ও মানববন্ধন কর্মসূচিতে রেলওয়ে কলোনি বস্তির শতাধিক নারী, পুরুষ অংশ নেন।