মার্কিন সহায়তা বন্ধে বেকার ৫০ হাজার উন্নয়নকর্মী, সরকারের হস্তক্ষেপ দাবি

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

মে ২৭, ২০২৫, ০৬:৩৯ পিএম

মার্কিন সহায়তা বন্ধে বেকার ৫০ হাজার উন্নয়নকর্মী, সরকারের হস্তক্ষেপ দাবি

ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বব্যাপী মার্কিন উন্নয়ন সহায়তা সংকোচনের অভিঘাত বাংলাদেশে পড়েছে ভয়াবহভাবে। ইউএসএইডের প্রকল্প বন্ধ হয়ে শুধু বাংলাদেশেই চাকরি হারিয়েছেন অর্ধলক্ষাধিক উন্নয়নকর্মী। 

এই পরিস্থিতিতে সরকারি হস্তক্ষেপ ও পুনর্বাসনের দাবিতে সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ‘এসোসিয়েশন অফ আনএমপ্লয়েড ডেভেলপমেন্ট প্রফেশনালস (অডিপ)’। ইউএসএইড এর প্রকল্পগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার যারা চাকরি হারিয়েছেন এটি তাদের সংগঠন, যার সদস্য সংখ্যা বর্তমানে ৬০০র বেশী। 

সংগঠনটি জানায়, ট্রাম্প প্রশাসনের নির্দেশে ২০২৫ সালের ২০ জানুয়ারি থেকে বিশ্বব্যাপী ইউএসএইডের প্রকল্পে “স্টপ-ওয়ার্ক-অর্ডার জারি হয়। এর ফলে বাংলাদেশে ইউএসএইডের ৫৯টি প্রকল্পের মধ্যে ৫৫টিই বন্ধ হয়ে যায়, এবং দেশ হারায় প্রায় ৭০০ মিলিয়ন ডলারের উন্নয়ন সহায়তা। এতে চাকরি হারিয়েছেন অন্তত ৫০ হাজারের বেশি উন্নয়নকর্মী, যদিও সরকারি কোনো জরিপ না থাকায় সঠিক সংখ্যা নিশ্চিত নয়। 

কনফারেন্সে বক্তারা জানান, ২০২৫ সালের ২০ জানুয়ারি বিশ্বব্যাপী ইউএসএআইডির সকল প্রকল্পে ট্রাম্প প্রশাসনের জারি করা স্টপ-ওয়ার্ক-অর্ডার এর ফলে বাংলাদেশেও ইউএসএআইডির ৫৯টি প্রকল্পের মধ্যে ৫৫টি বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশ প্রায় ৭০০ মিলিয়ন ইউএস ডলারের উন্নয়ন সহায়তা হারায়। অডিপের অনুসন্ধান অনুযায়ী এতে ইউএসএআইডি ও অন্যান্য দাতা সংস্থার অর্থায়নে পরিচালিত এনজিও ও আইএনজিওগুলোতে চাকরি হারান প্রায় ৫০ হাজার এর বেশী উন্নয়নকর্মী। তবে কোনো সরকারি জরিপ না থাকায় এই পরিসংখ্যান এখনও অনেকটা অনুমাননির্ভর বলে জানান তারা এবং প্রকৃত সংখ্যা এরচেয়ে অনেক বেশী বলে মনে করেন তারা। তারা বলেন, উন্নয়নকর্মীরা আয়কর প্রদান ও বাজার অর্থনীতিতে অংশগ্রহণের মাধ্যমে রাষ্ট্রের প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছেন। বর্তমানে উন্নয়ন কর্মীদের বড় অংশ বেকার হয়ে যাবার কারনে সরকারের ব্যক্তিগত আয়কর থেকে রাজস্ব আয় বাবদ ১৫ কোটি টাকারও বেশী ক্ষতি হচ্ছে বলে তারা দাবি করেন। 

অডিপের সদস্য আলাল উদ্দিন বলেন, “আমরা উন্নয়ন কর্মীরা মানুষের জীবনে পরিবর্তন আনার জন্য কাজ করি। কিন্তু আজ আমাদের নিজেদের জীবনই অন্ধকারে। সন্তানের লেখাপড়ার খরচ, মা বাবার চিকিৎসা, সংসারের খরচ সবই আজ অনিশ্চয়তায়। আমি আগামী দিনগুলো কিভাবে অতিবাহিত করবো তা আমি জানিনা।” 

আরেকজন সদস্য কাকলী গমেজ বলেন- “আমি একজন একা মা হিসেবে আমার দুই কন্যার ভরণপোষণ চালাতে হিমসিম খাচ্ছি। আমার সঞ্চয় তলানিতে এসে চলেছে। আমাদের কেউ দেখেনা। সরকার, আমাদের দিকে তাকান। আমাদের বাঁচান।” 

অডিপ এর আহ্বায়ক জিনাত আরা আফরোজ সংগঠনের পক্ষ থেকে সরকারের প্রতি ছয় দফা দাবি তুলে ধরেন: 

১. উন্নয়ন সহায়তা সংকোচনের ফলে সৃষ্ট বেকারত্ব ও উন্নয়ন পেশাজীবীদের অবদানের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি। 

২. চাকরি হারানো উন্নয়নকর্মীদের সঠিক সংখ্যা নিরূপণে সরকারের নেতৃত্বে জাতীয় জরিপ পরিচালনা করা এবং দ্রূততম সময়ে তার ফল প্রকাশ করা। 

৩. এই সংকটের অর্থনৈতিক প্রভাব মূল্যায়নে ‘ইকোনমিক ইম্প্যাক্ট অ্যাসেসমেন্ট। 

৪. আয়কর আইন ২০২৩ সংশোধন করে চাকরি হারানো উন্নয়ন কর্মীদের ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে উৎসে কাটা আয়কর ফেরত ও ২০২৫-২৬ অর্থবছরের অগ্রিম আয়কর মওকুফ করা। 

৫. জাতীয় সমন্বিত মেধা সংরক্ষণ কৌশলপত্র প্রণয়ণের মাধ্যমে চাকরি হারানো উন্নয়ন কর্মীদের বেসকারি, কর্পোরেট, ব্যাবসায় ও বিনিয়োগ খাতে নতুন চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়া। 

৬. চাকরি হারানো উন্নয়ন কর্মীদের সংগঠন অডিপ এর সাথে দ্রুত আলোচনায় বসে সমাধানের পথ খোঁজা।

Link copied!