অতিবৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে ভেসে গেছে ৭২৪ কোটি টাকার ফসল

মেহেদী আল আমিন

আগস্ট ২৪, ২০২৩, ১০:০০ পিএম

অতিবৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে ভেসে গেছে ৭২৪ কোটি টাকার ফসল

সংগৃহীত ছবি

অতিবৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে ১৭ জেলায় ৭২৪ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।

গত ৩ আগস্ট থেকে ১৭ আগস্ট- এ ১৫ দিনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দুই লাখ ৮৩ হাজার জন কৃষক। ফসলের ক্ষতি হয়েছে দুই লাখ ৩২ হাজার মেট্রিক টন।

সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে সবজির। মোট ৪৫ হাজার ১৯২ হেক্টর গ্রীষ্মকালীন সবজির মধ্যে নয় হাজার ৬২০ হেক্টর জমির সবজি সম্পূর্ণ ভেসে গেছে, যা আক্রান্ত ১৭ জেলার মোট সবজি আবাদের ২১.২৯ শতাংশ। ক্ষতিগ্রস্ত সবজির পরিমাণ এক লাখ ৬৬ হাজার টন যার অর্থমূল্য ৪৮৮ কোটি ৩৪ লাখ টাকা।

ক্ষতিগ্রস্ত অন্যান্য ফসলগুলোর মধ্যে রয়েছে- ৫ হাজার ৯৫৬ হেক্টর জমির ২০ হাজার ৯৪৬ টন আউশ ধান যার অর্থমূল্য ৫৬ কোটি টাকা, ১৩ হাজার ৪৪ হেক্টর জমির ৪৩ হাজার ৮৫৯ টন রোপা আমন ধান যার অর্থমূল্য প্রায় ১৫০ কোটি টাকা।

এছাড়া ৬১ হেক্টর জমির ৮ কোটি ২০ লাখ টাকার ৭৮৪ টন আদা, ৬৩ হেক্টর জমির ৪০ কোটি টাকার ২৭৭ টন হলুদ ও ৩ হাজার ৫৮৮ হেক্টর জমির ১৫৪ টন আমনের বীজতলা সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যার অর্থমূল্য ১৮ কোটি ২০ লাখ টাকা।

আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫৯ হাজার ৫৬৮ হেক্টর। এর মধ্যে ৮ হাজার ৪০৩ হেক্টর সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাতে মোট ক্ষতিগ্রস্ত জমির পরিমাণ গিয়ে পৌঁছেছে ৩২ হাজার ৩৩২ হেক্টর, যা ১৭ জেলায় আবাদকৃত মোট জমির ৩ শতাংশ।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সরেজমিন শাখার অতিরিক্ত পরিচালক মো. আশরাফ উদ্দিন দ্যা রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন, “ক্ষতিগ্রস্ত রোপা আমন চাষীদের বিনামূল্যে বীজ ও সার দেয়ার একটি প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আপাতত চট্টগ্রাম বিভাগের ৭ জেলার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মধ্যে এ প্রণোদনা দেয়া হবে। অন্যান্য ফসলের ক্ষেত্রে আপাতত দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে শীত মৌসুম শুরুর দিকে এসব ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রণোদনা দেয়ার পরিকল্পনা আছে।”

সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে বান্দরবন জেলায়। এ জেলায় ফসলের ক্ষতি ৩১০ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। এর পরেই রয়েছে চট্টগ্রাম; ১৮৪ কোটি ১৫ লাখ টাকা। এছাড়া উল্লেখযোগ্য ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলো হলো- কক্সবাজারে ৬৫ কোটি ৭৬ লাখ টাকা, রাঙামাটি ৬১ কোটি টাকা, লক্ষীপুরে ১৬ কোটি ৯০ লাখ টাকা এবং খাগড়াছড়িতে ১১ কোটি টাকা।

আবহওয়াবিদরা বলছেন, এ বছর বৃষ্টির ধরন অন্যান্য বছরের চেয়ে আলাদা। তাই ১৫ দিনের ক্ষতির হিসাব দেয়া হলেও আরও ফসলের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন। তারা বলেন, সামনে বৃষ্টি ও আকস্মিক বন্যার সম্ভাবনা আছে। এজন্য তারা প্রস্তুতি নেয়ারও পরামর্শ দেন।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান বলেন, “মৌসুমী বায়ু আমাদের বৃষ্টির ঝুঁকির মধ্যে রাখবে। এখন আবার বৃষ্টি শুরু হয়েছে। চট্টগ্রাম অঞ্চলে ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।”

তিনি বলেন, জলবায়ু ভিন্ন ধরণের আচরণ করছে। এবারের বৃষ্টিপাতের ধরন ছিল বিগত বছরগুলোর চেয়ে ভিন্ন। সারা দেশেই এবার ভারী বর্ষণ হয়েছে। এমনটি আগে দেখা যায়নি। আগে কোন এলাকায় ভারি বর্ষণ হলে অন্যস্থানে তেমন হতো না।

“পাহাড়ি ঢলের কারণে যে পার্বত্য জেলাগুলোতে যে আকস্মিক বন্যা দেখা গিয়েছে তা ভবিষ্যতে সমতলেও বন্যার সৃষ্টি করলে বিস্মিত হওয়ার কিছু থাকবে না। বন্যার মৌসুম সামনে রয়ে গেছে। আকস্মিক বন্যা, সামনের বন্যার মৌসুম আর মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে সামনের কিছুদিন বৃষ্টিপাতের কথা মাথায় রেখে আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। ”

Link copied!