সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন চলাকালীন সহিংসতা এবং একে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক ইন্টারনেট বন্ধ থাকার কারণে হাজার হাজার ই-কমার্স ও এফ-কমার্স উদ্যোক্তারা খেয়েছেন সবচেয়ে বড় ধাক্কা। অতিসম্প্রতি ইন্টারনেট চালু করা হয়েছে। কিন্তু ‘কচ্ছপগতি’র কারণে প্রতিবন্ধকতা দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা।
পাঁচদিনব্যাপী ব্রডব্যান্ড ও ১০ দিন মোবাইল ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ থাকার পর উদ্যোক্তারা এখন ধীরগতিসম্পন্ন ইন্টারনেট গতির সঙ্গে লড়াই করছেন। সেই সঙ্গে নিজেদের ব্যবসা পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছেন।
এ ছাড়া বাংলাদেশ সরকার দাবি করেছে যে দেশের সংবিধান অনুসরণ করেনি এসব প্ল্যাটফর্ম। এজন্য ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপ (আংশিকভাবে) এখনও চালু হয়নি।
কিছু উদ্যোক্তা ভিপিএন ব্যবহার করে ফেসবুকে প্রবেশের চেষ্টা করছেন। কিন্তু তারা এখনও কাঙ্ক্ষিত ফল পাচ্ছেন না।
বিভিন্ন ফেসবুকভিত্তিক ব্যবসা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে, ব্যবসায়ীদের ধারণা, যেখানে থাকা উচিত ছিল তার চেয়ে অন্তত কয়েক মাস পিছিয়ে আছেন তারা।
সম্প্রতি ইন্টারনেট বন্ধের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতির গুরুতর ক্ষতিসাধন হয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সংগঠন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের মতে যা ১০০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ১ লাখ ১৭ হাজার ৫৪২ টাকা।
ধীরগতির ইন্টারনেট ও ফেসবুক বন্ধের কারণে বিড়ম্বনার সম্মুখীন হয়েছেন ‘নূরের কিচেন থেকে হ্যালো’ নামে একটি ফেসবুক পেইজের অ্যাডমিন নূর-ই-মেহাজাবিন। পেইজের রিচ কমে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমার ব্যবসা দেশের পরিস্থিতির কারণে উল্লেখযোগ্যভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আগের অবস্থায় ফিরতে লাগবে অন্তত ১ মাস।”
মেহনাজ কালেকশনের প্রতিষ্ঠাতা তাসনুভা মেহনাজ ইন্টারনেটের ‘কচ্ছপ গতির’ বিষয়ে একই উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এ ছাড়া নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ইনস্টাগ্রামভিত্তিক বিক্রেতা ধীরগতির ইন্টারনেটের কারণে উল্লেখযোগ্য সমস্যার কথাও তুলে ধরেছেন।
এদিকে গত ১০ দিনে দৃশ্যমানতা হারিয়েছে ছোট উদ্যোক্তাদের ফেসবুক গ্রুপগুলো। ফেসবুকের অ্যালগরিদম নিষ্ক্রিয় হয়ে যাওয়ায় পেজগুলোতে ট্রাফিক কমে গেছে। সেই সঙ্গে নিয়মিত একাধিক ক্রেতা আউটেজের সময় লগ ইন করতে সমর্থ হননি। ফলে ইন্টারনেট পুনরুদ্ধারের পরেও অনেক ব্যবসা স্থবির অবস্থায় রয়ে গেছে।
নন্দিতা কুটির নামে একটি অনলাইন হোম ডেকর রিটেলার জানায়, আউটেজের সময় তাদের পেজে একটি স্বয়ংক্রিয় বুস্ট চালু থাকলেও, ইন্টারনেট অ্যাক্সেসের অভাবে এটি গ্রাহকদের আকর্ষণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। নন্দিতা কুটিরের পরিচালক ইসরাত লামিয়া বলেন, “ক্ষতি এর মধ্যেই হয়ে গেছে।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের পেজের রিচ এখন কমে গেছে ও ইন্টারনেট পুনরুদ্ধার হলেও, ক্রেতারা এখনও অনুপস্থিত। উদ্যোক্তাদের জন্য এটি অপূরণীয় ক্ষতি।”
অনলাইনে দীর্ঘদিন ধরে ইলেকট্রনিক পণ্য বিক্রি করা মো. ফারুক জানান, ইভ্যালি ও ই-অরেঞ্জের প্রতারণার ঘটনা তার ব্যবসায় উল্লেখযোগ্য ক্ষতিসাধন করেছে। নিজের ব্যবসা পুনরুদ্ধারে ফেসবুকের ওপর নির্ভর করেছিলেন তিনি। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি আরেকটি আঘাত করেছে।
বিষয়টি নিয়ে এখনও কেউ আনুষ্ঠানিকভাবে মন্তব্য করেননি।