কলা ভবনের সামনের কৃষ্ণচূড়া গাছ কাটার প্রতিবাদে সরব নেটিজেনরা

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২১, ০৫:১০ পিএম

কলা ভবনের সামনের কৃষ্ণচূড়া গাছ কাটার প্রতিবাদে সরব নেটিজেনরা

অর্ধশত বছর ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের সামনে সৌন্দর্য বর্ধন করে আসছে একটি কৃষ্ণচূড়া গাছ। গতকাল মঙ্গলবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গাছটি কেটে ফেলে। এতে প্রশাসনের নিন্দা ও বিচার চেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব হয়েছেন বৃক্ষপ্রেমীরা।

মনিরুল ইসলাম নামের বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সাবেক শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক বলেন, ‘আমার এখন নিজের ক্যাম্পাসে যেতে ভালো লাগেনা। লাগবেই বা কেন? সেদিন দেখলাম শহীদ মিনার এর পাশের রাস্তায় গুলিস্থান সাভার রুটের বাসের স্ট্যান্ড বানাইছে। পলাশী থেকে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত লেগুনার দৌরাত্ম্য। লাইব্রেরীর সামনে, পুরো টিএসসি এলাকায় ফেরিওয়ালা-ফুসকাওয়ালাদের দৌরাত্ম্য, আর ঢাকা শহরের বাইকার দিয়ে ভর্তি। আর মেট্রোরেলের মতো এনাকোন্ডাতো ক্যাম্পাসটা অনেক আগেই গিলে ফেলছে। প্রশাসনে থাকা কোমরহীন মানুষরা এগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। পারেন খালি গাছ কাটতে, নিজেদের ধান্দাগুলো বাড়াতে।’

তিনি আরও বলেন, ‘কিচ্ছু বলার নাই। এখন ক্যাম্পাসে আসতে ইচ্ছা করে না। এক সময় হয়তো ক্যাম্পাসের পরিচয় দিতেও আর ইচ্ছে করবে না। কলাভবনের কৃষ্ণচূড়ার অভিশাপ লাগুক ওদের কপালে।’

বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সহ-সাধারণ সম্পাদক মেঘমল্লার বসু তার ব্যক্তিগত ফেসবুকে গাছ কাটার বিষয়টিকে ব্যঙ্গ করে বলেন, ‘কলাভবনের সামনের কৃষ্ণচূড়া গাছ কাইটে ফেলা একটা যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত।’

গাছকাটার বিদ্রুপাত্মক তিনটি ব্যাখ্যাও দেন তিনি। সেগুলো হলো: এক, নামের মধ্যেই ‘কৃষ্ণ’ আছে, এটার দিকে তাকায়ে মুগ্ধ হয়ে অনেক কোমলমতি শিক্ষার্থীই শিরকের দিকে ধাবিত হইতেসিল। 

দুই, এই ফুলের রঙ লালচে। আর লাল মানে বাম। কলাভবনে এই সব রাম-বাম অনেক দিন চলসে। এগুলা আর চলতে দেওয়া ঠিক না। 

তিন, এই সব গাছটারে বসন্তকালে দেইখে আর বিবিধ সাহিত্যে এর রেফারেন্স ( হু আজাদ অ্যান্ড কো) পায়ে পোলাপান এই গাছটারে একটা প্রেমের প্রতীক বানায়ে ফেলসিল। পরে এইসব প্রেম-ট্রেমে জড়ায়ে উল্টা ছ্যাঁকা খাইত। তাদের পড়ায় মনোযোগী রাখা জরুরি।

এরকম আর সুন্দর সুন্দর যুক্তি কী হইতে পারে গাছটা কাটার পক্ষে?’

ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল্যাহ আল জোবায়ের তার ব্যক্তিগত ফেসবুক একাউন্টে লেখেন, “এই ক্যাম্পাসের কৃষ্ণচূড়ারা সব হারিয়ে যাবে, কাঠগোলাপ নিয়ে আর গান হবে না! এমন উন্নয়নের মুখে ‘ওয়াক থু’......”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবরিকালচার সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক মিহির লাল সাহা বলেন, ‘গাছের শেকড় মাটির উপরে উঠে এসছে যার কারনে এটি জনজীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। যার প্রেক্ষিতে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে কলা অনুষদের ডিন আমাকে একটি চিঠি দেয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘পরবর্তীতে আমরা সেটি পরিদর্শন করেছিলাম এবং পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ঝুঁকিপূর্ণ পেয়েছি। আমরা অতিদ্রুত এই গাছটির সমজাতীয় একটি গাছ রোপন করবো। এটি আকারে ছোট এবং সকলের কাছে গ্রহনযোগ্য হবে।’

Link copied!