আগস্ট ৯, ২০২৫, ১০:৫৮ পিএম
রাত ২:৩০ এর দিকে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের ঘোষণা দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর।
অনেক নাটকীয় ও উত্তপ্ত একটি রাত পার করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হলভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
গতকাল রাত ২:৩০ এর দিকে তীব্র আন্দোলনের মুখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ এই ঘোষণা দিয়ে বলেন,"২০২৪ সালের ১৭ জুলাই সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে হল প্রশাসনের হওয়া পুরনো চুক্তিবহাল থাকবে। " অর্থাৎ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলভিত্তিক কোন রাজনীতি করা যাবে না।
প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তে কি প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে ছাত্র সংগঠনগুলো :
ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক ওয়াসি তামি দ্যা রিপোর্ট ডট লাইভকে বলেন," হলকেন্দ্রিক যে রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হচ্ছে আমরা এটার বিপক্ষে অবস্থান করি। কারণ হল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও আবাসিক ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের সকল চাওয়া পাওয়ার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে। হল কেন্দ্রিক যে শিক্ষার্থীদের অধিকার এগুলো নিয়ে আওয়াজ উঠাবে কে? হলকেন্দ্রিক রাজনীতি না থাকলে শিক্ষার্থীবান্ধব রাজনীতির কোন স্পেস থাকে না, সে ক্ষেত্রে রাজনীতি হয়ে যায় অন্তঃসারশূন্য। আর সেই জায়গাটা থেকে আমরা এর বিরুদ্ধে অবস্থান করি। এবং দিনশেষে রাজনীতি করাটা আমাদের সাংবিধানিক অধিকার। এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবিধানে সকল শিক্ষার্থীদের রাজনীতি করার অধিকার দেওয়া হয়েছে। আর হঠাৎ করে এমন একটি সিদ্ধান্তকে আমরা সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত বলে মনে করছি না। "
যেহেতু প্রশাসন নিষিদ্ধ করেছে সেহেতু আপনারা আপনাদের কমিটি নিয়ে কি চিন্তা করছেন এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,"জুলাই মাসের পরও একবার চেষ্টা করা হয়েছিল ক্যাম্পাস রাজনীতি বন্ধ করার আমরা সেটার বিরোধিতা করেছিলাম। কিন্তু আমরা ছাত্রলীগের রাজনীতি বন্ধের পক্ষে ছিলাম কারণ হল গুলো সব ছাত্রলীগের দখলে ছিল। এখন যেহেতু হলে কারোরই আধিপত্য নাই আর ছাত্রদলের তো নাই ই কারণ ৫ আগস্ট পরবর্তী আমাদের কোন নেতাকর্মী অনুমতি ছাড়া হলে ওঠেনি এবং সিটকেন্দ্রিক কোন সমস্যাও করেনি। আমরা আমাদের নয় দফার প্রথম দফায় গনরুম গেস্ট রুমের সংস্কৃতিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছি এবং অলকেন্দ্রিক আমাদের কোন আধিপত্য নেই। তোমরা যে হলের কমিটি দিয়েছিস সেটি বহাল থাকবে। "
বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস) এর আহবায়ক আব্দুল কাদের বলেন,আমার মনে হয় প্রক্টরের গতকালকের কাজটি পুরোটাই একটি স্ট্যান্ডবাজি। বিষয়টি কখনো এই পন্থায় হয়না। ছাত্ররা দাবি নিয়ে গেলো মুখের উপর ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করে দিলাম। তিনি এমন অসংখ্যবার সবকিছু বন্ধ করেছেন এমনকি ডাকসু দিয়ে দিয়েছেন এপ্রিলের মধ্যে। আর উনি যেটা বন্ধ করে দিয়েছেন সেটার পিছনে অবশ্যই একটা কুবুদ্ধি এবং একটি কারসাজি আছে। এটাকে এর আগেও মুখের কথায় অনেকবার বন্ধ করা হয়েছে। এমন হলে এটি আবার মারাত্মক ভাবে ফিরে আসে।
তিনি আরো বলেন,"এছাড়া এসব ক্ষেত্রে যারা গুপ্ত রাজনীতি করে তারাও লাভবান হয়। যারা গুপ্ত রাজনীতি করে তারা চায় একটি মব ক্রিয়েট করে এভাবে মুখের কথায় একটি সই আদায় করতে। বিশ্ববিদ্যালয় রাজনীতির রূপরেখা কেমন হবে এটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সকল অংশীজনের সাথে বসে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করবে। "
ইসলামী ছাত্র আন্দোলন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আবু বকর বলেন,"আমাদের সংগঠন ও আমরা সব সময় চাই শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করতে। শিক্ষার্থীরা যেহেতু চায় না যে হলে রাজনীতি থাকুক আমরাও চাইনা হলে রাজনীতি থাকুক। বিগত সময় গুলোতে হলের গণরূম গেস্ট রুমে যে নির্যাতন ও মানসিক হেনস্তার শিকার হয়েছে শিক্ষার্থীরা এগুলো যাতে না হয়। "
তিনি আরো বলেন,"আমরা জানি যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশ্য ও গোপন দুই ধরনের রাজনীতি আছে। আমরা চাই যে হল প্রশাসন আমাদের এটা নিশ্চয়তা দিবে যে হলে যে গোপন রাজনীতি হয় সেটিও যেন বন্ধ হয়। আর আমরা চাইও না হলকেন্দ্রিক কোনরকম রাজনীতি হোক। "
ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মেঘমল্লার বসু দ্যা রিপোর্ট ডট লাইভ কে বলেন," এই যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলো এরমধ্যে দিয়ে আসল সমস্যার কোন সমাধান হবে না। আমাদের আসল সমস্যা হলো আবাসন সংকট। ফলে কোন রাজনৈতিক দল চাইলে হলে সিট দিবো বলে শিক্ষার্থীদের কে রাজনীতি করাইতে পারে। এই সমস্যার সমাধান হচ্ছে দুইটা। প্রথমটি হলো হলের সিট সংখ্যা বৃদ্ধি করা আর আর দ্বিতীয়টি হলো সিটের এলোকেশন ছাত্র সংগঠনগুলোর হাতের বাইরে নিয়ে আসা। আলোচনা হওয়া উচিত ছিল তাই নিয়ে। "
তিনি আরো বলেন,"এই সিদ্ধান্ত ৭৩ এর অধ্যাদেশের সাথে বিরোধী। ফলে কেউ যদি একটা রিট করে এই সিদ্ধান্ত আর টিকবে না। আর দ্বিতীয় কথা ১৭ জুলাইয়ের হিসাব অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় কোন রাজনীতি থাকার কথা না। তাহলে তারা যে ৫ আগস্ট পরবর্তী ছাত্র সংগঠনগুলোকে অংশীজন বানিয়ে বারবার তাদের সাথে মিটিং করলেন এগুলো তারা কেন করলেন? আদতে প্রশাসনের হাতে কোন উত্তর নেই তারা বারবার বিভিন্ন গ্রুপের দ্বারা অবরুদ্ধ হোন। তাদের মন যোগানোর মতো কথা বলে ওখান থেকে চলে আসেন। কিন্তু সামগ্রিকভাবে কি সিদ্ধান্ত হবে তারা সেটি তারা চিন্তা করেন না।
আজকে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হলো সিটির মধ্য দিয়ে বোঝা গেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কতটা অপরিণামদর্শি এবং বাগছাস,উমামা ফাতেমা সহ নতুন বন্দোবস্তের কারিগরের কতটা পরিণামর্শ সেটা প্রমাণিত হলো।"
শিবিরের প্রচার সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন বলেন,"ছাত্রশিবির শিক্ষার্থীদের আবেগের প্রতি সম্মান রাখে এ কারণে ছাত্রশিবির হলে কমিটি ঘোষণা দেয়নি এবং দিবেও না। যেহেতু বিগত দিনগুলোতে হলের ছাত্রদের হলে রাজনীতি নিয়ে বিভিন্ন খারাপ অভিজ্ঞতা আছে এবং আমরা দেখেছি কিভাবে সরকারি দল হল গুলোতো দখলদারিত্ব চালায়। তো সবকিছু মাথায় রেখে এবং শিক্ষার্থীদের বিষয়টি মাথায় রেখে ইসলামী ছাত্রশিবির হল কমিটির দেয়নি এবং দিবেও না। "
বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী সভাপতি নূজিয়া হাসিন রাশা বলেন," অভ্যুত্থান পরবর্তী আমরা এমন একটা ছাত্র রাজনীতি আশা করেছিলাম যেখানে রাজনীতি হবে মতাদর্শের ভিত্তিতে, অধিকার আদায় ও সংগ্রামের রাজনীতি হবে। হলে রাজনীতি করতে পারবে না কোন সংগঠন এটি একটি স্বৈরাচারী সিদ্ধান্ত এবং এর মধ্যে দিয়ে ফ্যাসিবাদ তৈরি হতে পারে। অভ্যুত্থান পরবর্তী সময় আমরা দেখেছি সাধারণ শিক্ষার্থী ব্যানারটাকে ব্যবহার করে বিভিন্ন গুপ্ত সংগঠনের কর্মীরা এবং নেতারা বিভিন্ন কর্মসূচি দিয়েছে। এবং তাদের রাতের এই কর্মসূচি ও মিছিল সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে একটি প্রতারণামূলক কর্মসূচিতে পরিণত হচ্ছে। "
তিনি আরো বলেন,"শিবিরের সভাপতি অনেক আগেই বলেছিলো যে হলে তাদের ছোট ছোট টিম আছে। এটাও শিক্ষার্থীদের সাথে এক ধরনের প্রতারণা। ছাত্র রাজনীতির জন্য দরকার সার্বিকভাবে প্রশাসনের সংস্কার।"
উল্লেখ্য গতকাল ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেকটি হলে তাদের আহবায়ক কমিটির ঘোষণা করে। এরপর থেকে শুরু হয় বিভিন্ন আলোচনা সমালোচনা। এরপরই রাত ১১ টার দিকে শুরু হয় আন্দোলন। নারী শিক্ষার্থীদের হলগুলো থেকে তালা ভেঙে বের হয়ে আসতে শুরু করেন তারা। এবং সবশেষে সবাই মিলে অবস্থান নেয় ভিসির বাসভবনের সামনে। এবং তীব্র আন্দোলনের মুখে রাত ২:৩০ এর দিকে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের ঘোষণা দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর।