আগস্ট ৯, ২০২৫, ০৩:৪৪ পিএম
গাজীপুর মহানগর পুলিশের কমিশনার নাজমুল করিম খান শনিবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে জানালেন, সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে ফাঁদে ফেলে প্রতারণার ভিডিও ধারণের কারণে হত্যা করা হয়েছে।
পুলিশ কমিশনারের বক্তব্য অনুযায়ী, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাদশা নামের এক ব্যক্তি ব্যাংক থেকে ২৫ হাজার টাকা তুলে ফিরছিলেন। পথে অভিযুক্ত গোলাপী তাঁকে ফাঁদে ফেলে প্রতারণার (হানিট্র্যাপ) চেষ্টা করেন। বিষয়টি টের পেয়ে বাদশা গোলাপীর সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন এবং তাঁকে ধাক্কা দিয়ে সরে আসতে চান। এ সময় আগে থেকে ওত পেতে থাকা অন্য আসামিরা বাদশাকে কোপাতে শুরু করেন। প্রাণ বাঁচাতে বাদশা দৌড় দিলে ঘটনাটি পেশাগত দায়িত্বে ভিডিও করেন সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন।
আসামিরা ভিডিও দেখে তুহিনকে মুছে ফেলতে বললেও তিনি অস্বীকার করেন। এরপর তাঁরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে তুহিনকে কোপাতে থাকে এবং ঘটনাস্থলেই তুহিন নিহত হন।
পুলিশ জানায়, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে র্যাব ও গাজীপুর মহানগর পুলিশের যৌথ অভিযানে হত্যাকাণ্ডে জড়িত সাত আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে একজন র্যাব গ্রেপ্তার করেছে এবং ছয়জন গাজীপুর মহানগর পুলিশ। সিসিটিভি ফুটেজের মাধ্যমে মোট আট আসামিকে শনাক্ত করা হয়েছে, বাকী একজনকে দ্রুত গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
কমিশনার নাজমুল করিম বলেন, অপরাধ দমনে শুধুমাত্র পুলিশের সক্ষমতা যথেষ্ট নয়, জনগণের সহযোগিতা প্রয়োজন। তিনি ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন এবং বলেন, বিশ্বের কোথাও অপরাধ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করা সম্ভব নয়।
ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসার পর ১৫ দিনের মধ্যে অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে এবং দ্রুত বিচার করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।
সাংবাদিক তুহিনের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে তিনি সাংবাদিকদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থতার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। এছাড়াও গত বছর ৫ আগস্টের পর গাজীপুরে কারখানা বন্ধ হওয়ার কারণে বেকারত্ব বাড়ায় অপরাধ বৃদ্ধি পেয়েছে উল্লেখ করেন। ‘আগের শাসনকাল’ এলাকার অস্থিতিশীলতায় ভূমিকা রাখছে বলে জানান তিনি, তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শান্তি ফিরিয়ে আনতে কাজ করছে।
এদিকে শনিবার সকালে গাজীপুর র্যাব ক্যাম্পে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র্যাব কোম্পানি কমান্ডার ও পুলিশ সুপার কে এম এ মামুন খান চিশতী জানান, গ্রেপ্তার আসামি মো. স্বাধীন হত্যার দায় স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, তুহিনকে বিশেষভাবে লক্ষ্য করে হত্যা করা হয়েছে। একজন নারী সদস্যের কারণে বাদশা নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে তাদের বিবাদ হয়, যার ফলে ওই ব্যক্তি বাদশাকে ছুরি দিয়ে তাড়া করে। তুহিন ওই ঘটনা ভিডিও করছিলেন, যা দেখে হামলা চালানো হয়।
গ্রেপ্তার স্বাধীন পাবনার ফরিদপুর উপজেলার নূর মোহাম্মদের ছেলে এবং নগপাড়া এলাকায় মোহাম্মদ আলীর ভাড়াটে।
গত বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় একটি মার্কেটে তুহিনকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
আসাদুজ্জামান তুহিন (৩৮) দৈনিক প্রতিদিনের গাজীপুর স্টাফ রিপোর্টার ছিলেন। তিনি ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া থানার ভাটিপাড়া গ্রামের হাসান জামালের ছেলে। স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে চান্দনা চৌরাস্তায় ভাড়াবাসায় থাকতেন।