মার্চ ৬, ২০২৪, ০৭:২০ পিএম
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা উপলক্ষে বসা ভ্রাম্যমাণ দোকান থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রলীগের ৪ নেতার বিরুদ্ধে।
মঙ্গলবার (৫ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের মমতাজ উদ্দিন একাডেমিক ভবন ও ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ একাডেমিক ভবনের সামনের দোকান ও শহীদ মিনারের আশেপাশের ভ্রাম্যমাণ দোকানগুলো থেকে চাঁদাবাজি করেন তারা। দোকানভেদে ১০০-১০০০ টাকাও চাঁদা নেন তারা। এছাড়া কেউ চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাদেরকে হুমকি দেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতারা হলেন, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবিদ আল হাসান লাবন, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সাদেকুল ইসলাম সাদিক, নবাব আবদুল লতিফ হল ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি তাশফিক আল তৌহিদ ও মাদার বখ্শ হলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক তামিম খান। তাদের মধ্যে লাবন ও তৌহিদ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর অনুসারী। অন্যদিকে সাদিক ও তামিম শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিবের অনুসারী।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ক্যাম্পাসের অধিকাংশ অস্থায়ী দোকান থেকে ছাত্রলীগ নেতারা চাঁদা আদায় করেছে। শরবতের দোকান, চটপটির দোকান, আখের রসের দোকান ও ডাবের দোকানসহ অন্তত ২০টি দোকান থেকে ১০০-১০০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করেছে তারা। এছাড়া একদিন টাকা দিলে অন্য দিন টাকা দেওয়া লাগবে না বলেও আশ্বাস দেন নেতারা। চাঁদা আদায় করতে আসা লোকেরা অন্য কেউ টাকা নিতে এলে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিতে বলেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ডাব বিক্রেতা বলেন, চার-পাঁচজন লোক এসে তার কাছে ১ হাজার টাকা দাবি করে। কিন্তু টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানান তিনি। তখন ছাত্রলীগ নেতারা এখানে ব্যবসা করতে হলে টাকা দিতে হবে বলে হুমকি দেন। পরে তিনি তাদেরকে ১ হাজার টাকা দিয়ে দেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন চৌদ্দপাই এলাকা থেকে শরবত বিক্রি করতে আসা এক দোকানদার বলেন, পাচঁ থেকে ছয়টা বাইক নিয়ে ৭-৮ জন লোক এসে তাদের কাছে চাঁদা দাবি করে। আজকের দিনে টাকা দিলে আগামীকাল টাকা দেওয়া লাগবে না বলে আশ্বাস দেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। আশেপাশের অনেক দোকানদারের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে। যাদের কাছে টাকা নিতে পারে না, তাদের থেকে খাবার খেয়ে নিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চটপটি বিক্রেতা এই প্রতিনিধিকে জানান, তামিম, অনিক, লাবন ও তাওহিদ এসে আমাদের কাছে টাকা দাবি করে। আমরা দিনে এনে দিনে খাই। অল্প টাকা আয় হয়। তার মধ্যে তাদের টাকা দিয়ে দিতে হয় তাহলে আমরা চলবো কেমনে। কিন্তু আমরা ব্যবসা করার জন্য তাদেরকে টাকা দিতে বাধ্য হই।
অভিযোগের বিষয়ে মাদার বখ্শ হল শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক তামিম বলেন, ‘গতকাল সারাদিন আমি জয় বাংলা বাইক সার্ভিস নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। আজকেও সকাল থেকে কাজ করছি। কোন দোকানদার অভিযোগ করেছে নাম বলেন। আমি এই বিষয়ে কিছু জানি না।’
অভিযুক্ত তৌহিদ বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে। আমি সারাদিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ছিলাম, আমি জীবনে চাঁদাবাজি করি নাই। কেয়ামতের দিন হলেও প্রমাণ হবে আমি ১ পয়সাও চাঁদা নেইনি। যারা আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছে তাদের দেখতে চাই।’
অভিযুক্ত সাদিকুল ইসলাম বলেন, ‘এরকম কোনো ঘটনার সঙ্গে আমি জড়িত না। বরং আমি আর লাবন দোকানে দোকানে গিয়ে বলে এসেছি, আমার নামে কেউ চাঁদাবাজি করতে আসলে যেন আমাকে কল দেয়।’
অভিযুক্ত লাবন বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছে। আমি সারাদিন সভাপতি সেক্রেটারির সঙ্গেই থাকি। এর আগেও আমার নাম করে চাঁদাবাজি হয়েছে। তাই আমি কয়েকজনকে দোকানিকে বলেছি যারা আমার নাম করে চাঁদা নিতে আসে তাদের আটকে আমাকে ফোন দিতে।’
চাঁদাবাজির দায় ছাত্রলীগ নেবে না উল্লেখ করে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু বলেন, ‘আমার যে ২ কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তারা কেউ চাঁদাবাজিতে জড়িত না। এখন যদি কেউ তাদের নামে চাঁদাবাজি করে এর দায় ছাত্রলীগ নেবে না।’
এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিবকে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও ফোন ধরেননি তিনি।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আসাবুল হক বলেন, ‘আমাদের কাছে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। অভিযোগ করলে আমরা ব্যবস্থা নেবো। এছাড়া আমাদের দোকান মনিটরিং টিমও এ বিষয়ে কোনো রিপোর্ট করেনি।’