ঢাবির সাংবাদিকতা বিভাগে ফলাফলে ধস; আত্মপক্ষ সমর্থনে যা বললেন অভিযুক্ত অধ্যাপক

সাদিয়া ইসলাম সুপ্তি

ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২৪, ১০:১৩ এএম

ঢাবির সাংবাদিকতা বিভাগে ফলাফলে ধস; আত্মপক্ষ সমর্থনে যা বললেন অভিযুক্ত অধ্যাপক

অধ্যাপক নাদির জুনাইদ শিক্ষার্থীদের ফেসবুক কার্যক্রম নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেন বলে অভিযোগ আছে। সংগৃহীত ছবি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের একটি ব্যাচের স্নাতকোত্তর শ্রেণির চূড়ান্ত ফলাফলে ধস নামিয়ে দিয়েছেন এমন অভিযোগ উঠেছে বিভাগটির অধ্যাপক ড. নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে। ২০২২ সালের মাস্টার্স চূড়ান্ত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ২০২৩ সালে। সেই পরীক্ষার ফলাফল ৬ ফেব্রুয়ারি প্রকাশের পর এ অভিযোগ করেন বিভাগটির ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার আগে অন্য ব্যাচের কাছে এ নিয়ে মন্তব্য করেছেন বলে অভিযোগ এসেছে।

স্নাতকোত্তর দ্বিতীয় সিমেস্টারে কোর্স সমন্বয়ক ছিলেন অধ্যাপক ড. নাদির জুনাইদ। স্নাতকোত্তর পরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান ও সমন্বিত কোর্সের পরীক্ষকও ছিলেন তিনি। ওই সিমেস্টারে তার দুটি ‘অপশনাল কোর্স’ থাকলেও কোন শিক্ষার্থী ওই কোর্সগুলো নিতে আগ্রহী না হওয়ায় ক্ষোভ থেকে চূড়ান্ত পরীক্ষায় নাম্বার কমিয়ে দিয়েছেন বলে ওই ব্যাচের শিক্ষার্থীরা দাবি করছেন।

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ১২তম ব্যাচের (২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষ) স্নাতকোত্তরের চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশিত হয় গত মঙ্গলবার। ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, ওই কোর্সটিতে ৫৪ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৩৫ জনই চার পয়েন্টের স্কেলে ৩.০০ এর নিচে পেয়েছেন। এর মধ্যে ২.৫০ পেয়েছেন ১৪ জন, ২.২৫ পেয়েছেন ১২ জন, ২.০০ পেয়েছে পাঁচজন। এর মধ্যে, স্নাতক পর্যায়ে ফলাফলে প্রথম দশজনের মধ্যে স্নাতকোত্তরে ভর্তি হওয়া ৬ জনের মধ্যে একজন ২.৭৫ পেয়েছেন। অন্যরা এর নিচে পেয়েছেন।

সমন্বিত কোর্সের ভাইভায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, ভাইভাতে অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন করে পরীক্ষার্থীদের ভীতসন্ত্রস্ত্র করে ফেলতেন অধ্যাপক নাদির জুনাইদ। ফলে তাৎক্ষণিকভাবে জানা প্রশ্নের উত্তরও ভুল হয়ে যাচ্ছিল।

ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার আগে এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মের পরিপন্থি। অন্য একটি ব্যাচের ক্লাস নেয়ার সময় অধ্যাপক নাদির জুনাইদ ১২তম ব্যাচের ফলাফল নিয়ে মন্তব্য করেন। ওই ব্যাচের এক শিক্ষার্থী জানান, কয়েকদিন আগে ক্লাসে তিনি বলেন, ‘১২ ব্যাচের রেজাল্টটা দেখবা কী অবস্থা। কয়েকজন ফেল করতে করতে পাস করে গেছে।’ অথচ সেসময় ফলাফল প্রকাশিতই হয়নি।

এছাড়াও অভিযোগ এসেছে যে ১৬তম ব্যাচের ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার আগেই ওই ব্যাচের এক শিক্ষার্থীকে পরীক্ষার ফল জানিয়ে দিয়েছিলেন অধ্যাপক নাদির জুনাইদ।

এছাড়াও অধ্যাপক নাদির জুনাইদ শিক্ষার্থীদের ফেসবুক কার্যক্রম নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেন বলে অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা। এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের সাথে আচরণ ও পরীক্ষার ফলাফলেও দেখা যায় বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

১২তম ব্যাচের এক নারী শিক্ষার্থী জানান, ভাইভা বোর্ডে তিনি আমার ফেসবুক কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন করেন। আমি বিভিন্ন সময় মজা করে অনেক পোস্ট করি। এ নিয়ে তিনি আমাকে বিব্রতকর কথা বলতে শুরু করেন। আমি ভাইভাতে কেঁদেও দিয়েছিলাম।

একটি জাতীয় দৈনিকে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর এবং গত মঙ্গলবার পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হওয়ার পর থেকে এ নিয়ে ফেসবুকে শিক্ষার্থীরা নানা রকম প্রতিক্রিয়া জানাতে শুরু করেন। শিক্ষকের পক্ষে-বিপক্ষে মতামত প্রকাশ করতে থাকেন তারা।

পরীক্ষার ফলাফলে প্রভাব রাখার ঘটনাটি নিয়ে অধ্যাপক ড. নাদির জুনাইদের সাথে দ্য রিপোর্ট ডট লাইভের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তার সম্মতি না নিয়েই তার বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে। যা কিনা সাংবাদিকতার নীতি-বিরুদ্ধ। এমনকি যারা এই অভিযোগ করেছেন তারাও কেউ সরাসরি এই বিষয়টি সম্পর্কে কোনো কথাও বলতে আসেননি।

ভাইভা বোর্ডে ‘কুকুরের ৫টি জাত কী কী’-  এ প্রশ্ন করেছিলেন কি না জানতে চাইলে অধ্যাপক দাবি করেন, এমন প্রশ্ন করেছেন বলে তিনি মনে করেন না। তবে ইতিহাস বিষয়ক প্রশ্নে একজন সাংবাদিকতার শিক্ষার্থীর উত্তর দিতে না পারা দুঃখজনক।

ভাইভা বোর্ডে নম্বর কমিয়ে দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ৪ জন পেনেলিস্ট-এর নম্বর সমন্বয়ের মাধ্যমে অ্যাভারেজ করেই মূল নম্বরটি চূড়ান্ত করা হয়। তবে এই ক্ষেত্রে একজনের নম্বর কম দেওয়াতে ফেল আসার কথা না।

ক্লাসে গিয়ে বিষয়ভিত্তিক পড়া না পড়িয়ে সিনেমা নিয়ে আলোচনা করেন, এ অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক নাদির বলেন, এখনকার ছেলে-মেয়ের সাথে সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন, ঋত্বিক ঘটক নিয়ে আলোচনা করলে যদি টপিক-এর বাইরে লেকচার হয়ে যায় তবে সেটি দুঃখজনক।

ঢাবি সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে কোনো প্রকার পদক্ষেপ নিচ্ছে কি না এ বিষয়ে অধ্যাপক জুনাইদ বলেন, একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগে ডিপার্টমেন্টের কোনো মাথাব্যথা নেই। তিনি এটিও উল্লেখ করেছেন তার প্রাক্তন অনেক শিক্ষার্থী তাকে তার এই পরিস্থিতিতে মানসিকভাবে সহযোগিতা করছেন।

অধ্যাপক নাদির আরও জানিয়েছেন, ‘Good sense হওয়াটা প্রয়োজন। তিনি চুপচাপ থাকতে চান যেহেতু তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগগুলোর জন্য তিনি দায়ী নন।’

Link copied!