এবার কোটা আন্দোলনকারীদের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জুলাই ৪, ২০২৪, ১০:১৪ পিএম

এবার কোটা আন্দোলনকারীদের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন

রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেন চাকরিপ্রার্থী শিক্ষার্থীরা। ছবি: দ্য রিপোর্ট ডট লাইভ

সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে টানা তৃতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ শেষে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন চাকরিপ্রার্থী শিক্ষার্থীরা। আগামীকাল শুক্রবার অনলাইন ও অফলাইনে প্রচারণা, শনিবার বিকেল তিনটায় সারাদেশে বিক্ষোভ এবং রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করে ছাত্র ধর্মঘটের ঘোষণা করেছেন তারা।

বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) সন্ধ্যা ছয়টার দিকে শাহবাগ মোড় থেকে সরে যাওয়ার আগে এসব কর্মসূচি ঘোষণা করেন তিনি। নতুন কর্মসূচির বিষয়ে সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-র সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, “আমরা জানতে পেরেছি, সারাদেশে শিক্ষার্থীরা তাদের নিজ নিজ ক্যাম্পাসে অবরোধ গড়ে তুলেছে। সবাই কিন্তু শাহবাগের দিকে তাকিয়ে আছে। দাবি আদায় ছাড়া আমরা শাহবাগ মোড় ছাড়বো না।”

এর আগে ‘বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-র ব্যানারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে একত্রিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হলের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ রাজধানীর সব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী এই আন্দোলনে অংশ নেয়। এরপর মিছিল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে দোয়েল চত্বর, হাইকোর্ট মোড়, মৎস্য ভবন হয়ে শাহবাগ আসে শিক্ষার্থীরা। বেলা পৌনে চারটা থেকে প্রায় দেড় ঘণ্টা সেখানে অবস্থান গ্রহণ করেন তারা। এ সময় কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা ৪ দফা দাবি তুলে ধরেন। তাদের সেই ৪ দফা দাবি হলো:
১. ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখা;
২. ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে (সব গ্রেডে) অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দেওয়া এবং সংবিধান অনুযায়ী কেবল অনগ্রসর ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করা;
৩. সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না এবং কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া;
৪. দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া।

কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মানববন্ধন করেন শিক্ষার্থীরা। ছবি: দ্য রিপোর্ট ডট লাইভ

কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে মহাসড়ক অবরোধ রাবি শিক্ষার্থীদের
রাবি প্রতিনিধি জানান, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদ ও কোটা বাতিলের দাবি জানিয়ে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরা। সকাল ১০টা থেকে শুরু হওয়া এই কর্মসূচিতে অংশ নেন প্রায় দেড় হাজার শিক্ষার্থী। এর আগে গত ৩০ জুন এবং ১ ও ২ জুলাই বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা।

কোটার পক্ষে সিনেট ভবনের সামনে অবস্থান নেয় মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। ছবি: দ্য রিপোর্ট ডট লাইভ

কোটার পক্ষে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান
সারা দেশে যখন কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে চাকরিপ্রার্থীদের বিক্ষোভ তুঙ্গে উঠেছে, তখনই কোটার পক্ষে সিনেট ভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। তাদের ভাষ্য, সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়েরর প্যারিস রোডে এক মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে এই প্রতিবাদ জানায় তারা।

রাবি প্রতিনিধি জানান, এ সময় তারা ‘মুক্তিযোদ্ধা বিরোধী অপশক্তিরা নিপাত যাক’, ‘দেশ স্বাধীন করলো যারা কেন অপমানিত হবে তারা’, ‘কোটা ব্যবস্থা বৈষম্য সৃষ্টি করে না বরং সমতা সৃষ্টি করে’, ‘কোটা আন্দোলনের নামে মুক্তিযোদ্ধার পরিবারকে নিয়ে ট্রল করা যাবে না’ প্রভৃতি লেখা সংবলিত প্ল্যাকার্ড দেখাতে থাকেন।

কোটার পক্ষে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা। ছবি: দ্য রিপোর্ট ডট লাইভ

মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম রাবি শাখার সহ-সভাপতি মাহফুজ বলেন, “সোশ্যাল মিডিয়ায় সম্প্রতি মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ও মুক্তিযোদ্ধাদেরর পরিবারকে নিয়ে যে কটাক্ষ করা হচ্ছে সেটি সম্পূর্ণ আইন পরিপন্থী। আপনারা যারা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান ও প্রজন্মকে মেধাশূন্য বলে এবং নিজেদের মেধাবী বলে দাবি করছেন, আপনাদের এই কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য দেখলে বোঝা যায় আপনারা কতটা নির্লজ্জ জাতি। আপনারা যারা তথাকথিত মেধাবী, যারা কোটা বিরোধী আন্দোলন করছেন তারা আগে কোটার ইতিহাস সম্পর্কে জানুন। স্বাধীনতার ৫২ বছরে কোটা কত দিন বহাল ছিল- সেটা জানুন।”

মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড রাজশাহী মহানগরের আহ্বয়ক আলিমুল হাসান সজল বলেন, “মুক্তিযোদ্ধার সন্তান যখন রাস্তায় দাড়িয়েছে এটা জাতির লজ্জা। আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা রাজপথে দাঁড়িয়ে আছি। এমন তো কথা ছিল না। আপনারা যদি কৃতজ্ঞ হতেন তবে মুক্তিযুদ্ধের সময় ৭ কোটি মানুষের মধ্যে মাত্র দেড় লাখ বা তার চেয়েও  মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন তাদের দায়িত্ব নিতেন। ১৯৭১ সালের পর থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত সরকার প্রধান মুক্তিযোদ্ধার প্রজন্মদের বঞ্চিত করে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তি, রাজাকারদের প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ওই রাজাকারদের এমপি-মন্ত্রীদের তালিকা নিয়ে নিয়োগ দান করেছেন। তারা কী মেধাবী ছিল?”

Link copied!