শিক্ষাপ্রক্রিয়ায় ক্রমাগত পরিবর্তনে বাড়ছে হতাশা

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২২, ০৪:৫০ পিএম

শিক্ষাপ্রক্রিয়ায় ক্রমাগত পরিবর্তনে বাড়ছে হতাশা

মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে চলমান স্থবির জনজীবনের প্রভাব সবার ওপরেই কমবেশি পড়েছে। করোনাকালে সামাজিকীকরণের সুযোগ কম থাকায় পারিবারিক এবং ব্যক্তিগত টানাপোড়েনসহ নানাবিধ কারণে শিক্ষার্থীদের ওপর এই প্রভাবটা একটু বেশি পড়েছে। এতে শিক্ষার্থীদের মাঝে হতাশার পাশপাশি আত্মহত্যার প্রবণতাও অনেকে বেড়ে গেছে।

সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষার্থীদের যে বাড়তি হতাশা, এবং আত্মহত্যার পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়া, সেটার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে এ কথা বলছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এবং পরিচালক সৈয়দা তাহমিনা আক্তার।

সম্প্রতি আঁচল ফাউন্ডেশন নামে একটি সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের করা একটি গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে বিশ্ববিদ্যালয়সহ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ১০১ জন শিক্ষার্থী ২০২১ সালে আত্মহত্যা করেছেন। গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী যে সংখ্যাটা ২০২০ সালে ছিলো ৭৯ জন।

সৈয়দা তাহমিনা আক্তার বলেন, “দীর্ঘসময় ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। এছাড়াও শিক্ষাপ্রক্রিয়ার ক্রমাগত পরিবর্তন, পরীক্ষার সময়সীমার পরিবর্তন এগুলোও তো শিক্ষার্থীদের মানসিকতার ওপরে প্রভাব ফেলে। আগে শিক্ষার্থীরা বন্ধুবান্ধবীদের সাথে নিয়মিত কথা বলতে পারতো, এখন তাঁরা সে সুযোগটা পাচ্ছে না।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক আরও বলেন, “এছাড়াও পারিবারিক সমস্যা তো রয়েছেই। মহামারীর মধ্যে অনেকের বাড়ির উপার্জনকারী সদস্য চাকরি বা উপার্জনের পথ হারিয়েছেন, এগুলোর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। শিক্ষার্থীদের সামাজিকীকরণ কমেছে, খেলাধুলা নেই, সাংস্কৃতিক চর্চা নেই, তাদেরকে কোন না কোন দিক দিয়ে তো ব্যস্ত রাখতে হবে, এ সবকিছু মিলিয়েই তাঁদের মধ্যকার হতাশার পরিমাণটা সাম্প্রতিক সময়ে অনেক বেড়েছে।”

আঁচলের গবেষণা অনুযায়ী, গত বছর আত্মহত্যা করা ১০১ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৬১ দশমিক ৩৯ শতাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। মেডিকেল কলেজ ও অনার্স কলেজে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার হার ১১ দশমিক ৮৮ শতাংশ। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার হার ২২ দশমিক ৭৭ শতাংশ।

মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করেন তানজিলা ইফাত তাসকিন। তিনি বলেন, “মহামারীর মধ্যে দীর্ঘ বন্ধের কারণে অনেকের যে পরিকল্পনা ছিলো নিজেদের বর্তমান বা ভবিষ্যৎ নিয়ে, তা সফল হয়নি। একজন শিক্ষার্থী সবচেয়ে বেশী ব্যস্ত থাকেন নিজেদের পড়াশোনা, পরীক্ষা, সামাজিক চলাফেরা এগুলো নিয়ে। অথচ গত দু বছরে এ কার্যক্রমগুলোতে তাঁরা প্রায় বলতে গেলে অংশগ্রহণ করতে পারেন নি। এগুলো তো তাদেরকে বেশ ভালোভাবেই আক্রান্ত করে।”

তানজিলা বলেন, “আমি মায়া নামক একটি অ্যাপের মেন্টাল হেলথ কোঅর্ডিনেটের হিসেবে কাজ করি। আমার কর্মক্ষেত্রের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী, প্রায় প্রতিটি পরিবারেই কিছু না কিছু পারিবারিক সমস্যা থাকেই। মহামারীর মধ্যে বাইরের কোন কাজে অংশ নিতে না পারায় অনেকক্ষেত্রেই এ সমস্যাগুলো অনেকাংশে বেড়েছে। এর বাইরে অনেকেরই নিজেদের ব্যক্তিগত সম্পর্কেরও টানাপোড়েন থাকে।”

বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে চাকরি বা উপার্জনের পথ নিয়েও অনেকসময় হতাশা কাজ করে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, “ মানসিক অবস্থান, হতাশা তৈরি হবার জন্য অনেকগুলো প্রভাবক দায়ী। এ সবকিছু মিলিয়েই সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষার্থীদের ভেতর হতাশা বা আত্মহত্যার প্রবণতা অনেকাংশে বেড়েছে।”

Link copied!