মে ২৩, ২০২৫, ০১:১৪ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
সৌদি আরবের দাম্মাম শহরের একটি ফ্ল্যাট থেকে বাংলাদেশি দুই তরুণের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গত বুধবার দাম্মাম শহরের একটি বাসা থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
কামরুজ্জামান কাকন (২৬) ও কামরুল ইসলাম সাগর (২২) নামের দুই তরুণ সম্পর্কে ভাই। তারা গাজীপুরের উত্তর ভুরুলিয়ার আদর্শপাড়ার ব্যবসায়ী মো. মোশারফ হোসেন লম্বরির ছেলে।
নিহতদের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, কামরুজ্জামান কাকন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে চাকরি খুঁজছিলেন। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।
ঢাকার নয়া পল্টনের সামিয়া ইন্টারন্যাশনালের পরিচালক বাহার উদ্দিন ২১ লাখ টাকা চুক্তিতে জব ভিসায় কাকনকে কানাডায় পাঠানোর প্রস্তাব দেন মোশারফ হোসেনকে। কিন্তু তিন লাখ টাকা দিলেও তিনি কাকনকে কানাডা পাঠাতে পারেননি।
পরে বাহার উদ্দিন ভালো বেতনে ছোট ছেলে কামরুল ইসলাম সাগরকে ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকায় সৌদি পাঠানোর প্রস্তাব দেন। গত অক্টোবরে সৌদি আরব যান সাগর।
কিন্তু কাজের পরিবর্তে তাকে দাম্মামে একটি ঘরে আটকে রেখে আরো ৪ লাখ টাকা দাবি করা হয় বলে পরিবারটির অভিযোগ।
মোশরফ হোসেন ছেলের নিরাপত্তার কথা ভেবে ৪ লাখ টাকা দিতে বাধ্য হন। টাকা নিয়েও ছেলেকে ভালো চাকরি না দিয়ে হান্গার এস্টেশন নামে খাবার ডেলিভারির কাজ দেদন বাহার উদ্দিন।
এরপর বড় ছেলেকে কানাডা পাঠাতে যে ৩ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছিল মোশারফ তা ফেরত চাইলে তার দুই ছেলেকেই মদিনা ইউনিভার্সিটিতে উচ্চ বেতনে চাকরির প্রস্তাব দেন বাহার উদ্দিন।
নতুন করে ৫ লাখ ৩০ হাজার টাকা নিয়ে গত বছরের ৪ ডিসেম্বর কাকনকে সৌদি নিয়ে যান বাহার। সেখানে কাজ না দিয়ে দুই ভাইকে একটি ঘরে আটকে রাখেন।
মোশারফ বিষয়টি জানার পর বাহার তাকে নিয়ে ওমরাহ ভিসায় সৌদি গিয়ে ছেলেদের দেখে আসার প্রস্তাব দেন। গত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি বাহার উদ্দিনের সঙ্গে সৌদি আরব যান মোশারফ হোসেন।
মোশারফ হোসেন বলেন, সে সময় তিনি কাজের কথা জানতে চাইলে ছেলেরা বলেন, তাদেরকে খাবার ডেলিভারির কাজ দেওয়া হয়েছে। ঠিকমত খেতে দেওয়া হয় না; রাখা হয়েছে ছোট ঘরে।
২২ ডিসেম্বর মোশারফ দেশে ফিরলেও ছেলেদের কাগজপত্র ঠিক করার কথা বলে সৌদিতে থেকে যান বাহার।
ব্যবসায়ী মোশারফের ভাষ্য, দেশে ফেরার সময় বাহার তাকে একটি পলিথিন মোড়ানো ব্যাগ দিয়ে ঢাকার ঠিকানায় পৌঁছে দিতে বলেন। ব্যাগে কী ছিল তিনি দেখেননি।
পরে সৌদি আরবের বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন পুলিশ তল্লাশি করে একটি ছোট থলে পেয়ে সেটি রেখে তাকে ছেড়ে দেয়। তিনি ফিরে আসার পরদিন বাহার উদ্দিনও বাংলাদেশে চলে আসেন। এসেই ব্যাগে থাকা ছোট থলেটি ফেরত চান।
মোশারফ বলেন, “ইমিগ্রেশন পুলিশ রেখে দিয়েছে জানালে পুটলিতে ১৩ লাখ টাকার সোনা ছিল দাবি করে টাকার জন্য চাপ দেন। কয়েক দফা হুমকিও দেন। বলেন, টাকা না দিলে সৌদিতে থাকা ছেলেদের ক্ষতি হবে।”
এ ঘটনায় তিনি নগরীর সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করেন বলে জানিয়ে তিনি বলেন, সর্বশেষ ৯ মে একটি মাইক্রোবাসে করে ঢাকা থেকে একদল দুর্বৃত্ত অস্ত্র নিয়ে মোশারফকে খুঁজতে থাকে। তাকে না পেয়ে তার বৃদ্ধ বাবা আবুল কাশেম লম্বরিকে তুলে নিয়ে যায় এবং দুই ছেলেকে হত্যার হুমকি দেয়। পরে ৯৯৯ ফোন করা হলে সদর থানা পুলিশ আবুল কাশেমকে উদ্ধার করে।
মোশারফ হোসেন বলেন, দুই ছেলে ছাড়া তার আর কোন সন্তান নেই। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই তাদের কানাডায় পাঠাতে চেয়ে ছিলেন। কানাডা পাঠানোর স্বপ্নই কাল হয়েছে তার পরিবারের।
তিনি বলেন, বুধবার রাত ১২টার পর এক বাংলাদেশি ফোন করে দুই ছেলের লাশ উদ্ধারের খবর দিয়েছেন। পরে সৌদি দূতাবাসের মধ্যে জানতে পেরেছেন মঙ্গলবার সকাল ৭টার দিকে ফ্ল্যাটে প্রবেশ করে দুই ভাই।
“দুপুরের পর দরজার নীচ দিয়ে রক্ত গড়াতে দেখে ফ্ল্যাট মালিক পুলিশে খবর দেয়। সিসি ফুটেজ দেখে মঞ্জু নামের বাংলাদেশি এক যুবকে পুলিশ শনাক্ত করেছেন।”
এই ব্যক্তিকে দিয়েই বাহার তার দুই সন্তানকে খুন করিয়েছেন বলে ধারনা মোশারফ হোসেনের। তিনি দ্রুত সন্তানদের লাশ দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের সাহায়তা কামনা করেন।