ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ নারী ফুটবলের পোস্টার গার্ল ঋতুপর্ণা চাকমা, যাকে অনেকেই বলেন ‘বাংলাদেশের মেসি’। মাঠের বাঁ দিক দিয়ে চমৎকার ড্রিবল, ডি-বক্সের বাইরে থেকে গোল করার দুর্দান্ত দক্ষতায় তিনি ফুটবলপ্রেমীদের মুগ্ধ করে চলেছেন। কিন্তু নিজেকে কোনো তারকার সঙ্গে তুলনায় যান না ঋতুপর্ণা। বরং জানান, তিনি মেসি নন, রোনালদোর (সিআর সেভেন) বড় ভক্ত। স্পট কিক নেওয়ার সময় পর্তুগিজ মহাতারকার স্টাইলই অনুসরণ করেন তিনি।
এই তরুণ উইঙ্গারের বয়স মাত্র ২১, অথচ এর মধ্যেই দেশের ফুটবলে যোগ করেছেন নতুন অধ্যায়। সম্প্রতি মিয়ানমারে অনুষ্ঠিত এএফসি উইমেন্স এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে ৫টি চমকপ্রদ গোল করে বাংলাদেশকে প্রথমবারের মতো নারী এশিয়ান কাপে পৌঁছে দেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী ঋতুপর্ণা, রাঙামাটির প্রত্যন্ত মগাছড়ি গ্রাম থেকে উঠে এসেছেন। তিনি নিজেকে নিয়ে যতটা না ভাবেন, তার চেয়ে বেশি ভাবেন দল ও দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে।
সমকালের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় উঠে এসেছে তার অর্জন, ভাবনা, প্রত্যাশা আর একটি মায়ের জন্য বুকভরা প্রার্থনার কথা-
সমকালের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় ঋতুপর্ণা বলেন, “প্রথমবারের মতো নারী এশিয়ান কাপে কোয়ালিফাই করেছি, এটা আমাদের অনেক বড় অর্জন। এর আগে সাফ জিতেছি, এবার স্বপ্ন ছিল এশিয়ান মঞ্চে পা রাখা—সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।”
সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, দলের সিনিয়রদের ফিরে আসার পক্ষেও তিনি। অধিনায়ক সাবিনা খাতুনসহ অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের আবারও সুযোগ দেওয়া উচিত বলে মনে করেন এই তরুণ উইঙ্গার। তার মতে, দলের মধ্যে বন্ধন বাড়াতে সিনিয়রদের প্রয়োজন।
মাঠের পারফরম্যান্সে যেমন সাহসী, ঠিক তেমনি আত্মবিশ্বাসী ঋতুপর্ণা। বলেন, “আমি যে গোলগুলো করি, বেশিরভাগই ডি-বক্সের বাইরে থেকে। সেই জায়গা থেকে শট নিতে ভালোই লাগে।” নিজের গোলগুলোর ভিডিও হাজারবার দেখেছেন বলেও জানান তিনি।
প্রশংসা পাচ্ছেন বাংলাদেশের “মেসি” হিসেবে, তবে তুলনাতে বিশ্বাসী নন ঋতু। বরং বলেন, “মেসি তো মেসিই। তাঁর সঙ্গে কারও তুলনা হয় না। তবে আমি রোনালদোর (সিআর সেভেন) বড় ভক্ত। স্পট কিক নেওয়ার সময় ওর স্টাইলটা অনুসরণ করি।”
অস্ট্রেলিয়ায় আগামী বছর মার্চে অনুষ্ঠেয় নারী এশিয়ান কাপকে সামনে রেখে চ্যালেঞ্জগুলোও বুঝে উঠছেন ঋতুপর্ণা। বলেন, “এই ১০ মাস আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। বড় দলের সঙ্গে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে পারলে ভালো হতো। এতে নিজেদের শক্তি-দুর্বলতা বোঝা যেত।”
কোচ পিটার বাটলারের প্রশংসা নিয়েও উচ্ছ্বসিত এই উইঙ্গার। কোচ বলেছিলেন, তিনি ভুটানের লিগের চেয়ে বড় মঞ্চে খেলার যোগ্য। যদিও এখনো কোনো বিদেশি লিগ থেকে প্রস্তাব পাননি বলে জানান।
বাফুফের কাছে কিছু প্রত্যাশাও রয়েছে তার—“আবাসন ব্যবস্থার উন্নতি ও বিদেশে ট্রেনিং ক্যাম্প হলে মেয়েদের আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়ে যাবে।”
পড়াশোনা আর খেলাধুলা একসাথে চালিয়ে যাওয়া যে চ্যালেঞ্জিং, তা অকপটে স্বীকার করেছেন তিনি। তবে মায়ের প্রতি ভালোবাসার জায়গা থেকেই খেলার প্রেরণা পান ঋতুপর্ণা। অসুস্থ মা এখন তার একমাত্র প্রার্থনার বিষয়।
সব মিলিয়ে বাংলাদেশের এই তরুণী শুধু মাঠেই নয়, মনেও জয় করে নিচ্ছেন সবার। মেসি নন, রোনালদোর ভক্ত হলেও বাংলাদেশের জার্সিতে তিনিই এখন ফুটবলপ্রেমীদের চোখে সবচেয়ে উজ্জ্বল তারা।