দীর্ঘ ২০ বছর ধরে চলমান যুদ্ধ শেষ। অপেক্ষার প্রহর পেরিয়ে ক্ষমতার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে তালেবান গোষ্ঠী ঘোষণা দিয়েছে একটি জাতীয় ঐক্যমতের সরকার গঠনের। তাদের নতুন সরকারে তালেবান ছাড়াও আফগানরাও থাকবেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি সরকারের বেশ কিছু পরিচিত মুখও তাদের সরকারে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
স্থানীয় সময় রবিবার (১৫ আগস্ট) মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে তালেবান মুখপাত্র সোহেইল শাহীন এমনটি জানিয়েছেন।
আশরাফ গনি সরকারের কারা তালেবানের নতুন মন্ত্রিসভায় আসছেন বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তালেবান মুখপাত্র বলেন,‘ সাবেক কর্মকর্তাদের কাদের অন্তর্ভূক্ত করা হবে সে সিদ্ধান্ত এখনই জানানো ‘অসময়োচিত’ হবে। তবে বেশ পরিচিতি রয়েছে এমন কয়েকজনকে সরকারে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। ‘
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যখন আফগানিস্তানে অংশগ্রহণমূলক ইসলামিক সরকারের কথা বলছি, তার অর্থ এতে অন্যান্য আফগানরাও অংশগ্রহণ করছে।’
বর্তমান আফগান সেনা ও পুলিশ বাহিনীর সদ্যসরা অস্ত্র জমা দিয়ে তালেবান বাহিনীতে যোগ দিলে তাদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছে তালেবান।
এদিকে আফগানিস্তানে নিরাপত্তা ব্যবস্তার উন্নতি ও হামিদ কারজাই আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আরো ১০০০ সৈন্য আফগানিস্তানে রাখার অনুমোদন দিয়েছেন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন।
তালেবানদের কাবুল প্রবেশের সময় থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের কাবুলস্থ দূতাবাস থেকে গত কয়েক ঘন্টায় প্রায় ৪ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের মতো ফ্রান্সও তাদের সেনা ও বেসমারিক নাগরিকদের ফিরিয়ে নিচ্ছে। বর্তমানে তারা কাবুলের হামিদ কারজাই আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরে অবস্থান করছেন বলে সিএনএন’র খবরে বলা হয়।
এছাড়া, মার্কিন, ফরাসীরা ছাড়াও আরো দেশি-বিদেশি হাজারো মানুষ আফগানিস্তান ত্যাগ করতে ভিড় জমিয়েছেন বিমানবন্দরটিতে।জাতিসংঘের হিসেব মতে, কেবল গত জুলাই মাসেই আফগানিস্তানের প্রায় ১৭ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের ৬০ টি দেশ আফগানিস্তান ত্যাগকারী দেশি-বিদেশি সকল নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবী জানিয়েছে।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র তাদের দূতাবাসের সবাইকে সরিয়ে নিলেও রাশিয়ার দূতাবাস থেকে কাউকে সরিয়ে নেয়া হবে না বলে জানিয়েছে মস্কো।
যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানের পুনর্গঠনে তালেবানরা সবাইকে সাথে নিয়ে কাজ করার কথা জানালেও শুরুতেই তাদের পড়তে হতে পারে অর্থাভাবে। সিএনএন’র খবরে বলা হয়, আফগানিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক দা আফগানিস্তান ব্যাংকের অধিকাংশ সম্পত্তি রয়ে গেছে দেশটির বাইরে বিভিন্ন দেশে। সেসব দেশ থেকে তালেবান তাদের দেশের সম্পদ ফেরত আনতে পারবে কিনা সেটি এখন মিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন। ইতোমধ্যে বাইডেন প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র তাদের দেশে থাকা দা আফগানিস্তান ব্যাংকের কোন সম্পত্তি তালেবানের কাছে হস্তান্তর করবে না। ফলে তালেবান গোষ্ঠীর ক্ষমতার যাত্রা যে মসৃণ হবেনা তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
তবে, আফগানিস্তানের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে তুরস্ক ও পাকিস্তান একযোগে কাজ করবে জানিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোগান। এর আগে তালেবানদের প্রতি চীনও সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়ার কথা বলেছে। এটি নিঃসন্দেহে তালেবানদের আত্মবিশ্বাস যোগাবে বলে বিশ্লেষকদের ধারনা।