পাকিস্তানের ২৩তম প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

এপ্রিল ১১, ২০২২, ০৫:৩৬ পিএম

পাকিস্তানের ২৩তম প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ

সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে পাকিস্তানের ২৩তম প্রধানমন্ত্রী হলেন শাহবাজ শরিফ। জাতীয় পরিষদ থেকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী পিটিআিইয়ের সিনিয়র নেতা ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশি পদত্যাগ করায় ভোটাভুটির আর প্রয়োজন হয়নি। ফলে শাহবাজ শরিফ বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসার সুযোগ পেলেন। পাঞ্জাব রাজ্যের সাবেক এই মুখ্যমন্ত্রী ইমরান খানের সময় জাতীয় পরিষদে বিরোধী দলীয় নেতার ভূমিকা পালন করেছেন। আজ সোমবাবর রাতেই শাহবাজ শরিফ শপথ নিবেন বলে পাকিস্তানের সংবাদ মাধ্যম ডন জানিয়েছে।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী পদে ভোটাভুটির জন্য স্থানীয় সময় বিকেলে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন পরিচালনা করেন ডেপুটি স্পিকার কাসেম সুরি। তিনিই ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব বাতিল করে দিয়েছিলেন। এরপর সুপ্রিম কোর্ট তার সিদ্ধান্তকে অবৈধ ঘোষণা করে এবং অনাস্থা ভোট  আয়োজনের  নির্দেশ দেয়।

এদিন পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করার কথা থাকায় সব সংসদ সদস্য জাতীয় পরিষদে উপস্থিত হন। তবে অধিবেশন শুরু হওয়ার পর পিটিআই’র সিনিয়র নেতা ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী  শাহ মোহাম্মদ কোরেশি জানান, তারা গণহারে পদত্যাগ করবেন এবং নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের প্রক্রিয়ায় তারা অংশ নেবেন না। 

তার এ ঘোষণার পর ডেপুটি স্পিকার কাসের সুরিও অধিবেশন ছেড়ে বের হয়ে গেলে তার জায়গায় স্পিকারের দায়িত্ব পালন করেন মুসলিম লিগ-এন এর আয়াজ  সাদিক। মুসলিম লিগের (এন) এই সিনিয়র নেতা গত  শনিবার দিবাগত রাতে ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবের বিষয়টি পরিচালনা করেছিলেন। আয়াজ সাদিকের সভাপতিত্বে জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে শাহবাজ শরিফ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হলেন।

কে এই শাহবাজ শরিফ

ব্যাক্তিগত জীবন এবং শিক্ষা শাহবাজ পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ভাই।আন্তর্জাতিক স্তরে সেভাবে পরিচিতি না থাকলেও পাকিস্তানের ঘরোয়া রাজনীতিতে দক্ষ প্রশাসক হিসেবে শাহবাজ শরিফের সুনাম রয়েছে।

পাকিস্তানের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ছোট ভাই শাহবাজ ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের লড়াইয়ে বিরোধীদের নেতৃত্ব দিয়েছেন। গত ৯ এপ্রিল দিবাগত রাত দুইটার দিকে  জাতীয় পরিষদে আনা আস্থা ভোটে হেরে যাওয়ার পর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বরখাস্ত হন ইমরান।

শাহবাজ শরিফের জন্ম পঞ্জাবের লাহোরে। একটি পাঞ্জাবি ভাষী কাশ্মীরি পরিবারে তাঁর জন্ম। বাবা'র নাম মহম্মদ শারিফ। পাকিস্তানের নামকরা একজন ব্যবসায়ী এবং উদ্যোগপতিও বটে। শেহবাজও একজন ব্যবসায়ী। একাধিক ব্যবসা রয়েছে তাঁর নামে। পারিবারিক স্টীলে ব্যবসা রয়েছে। লাহোরের গর্ভমেন্ট কলেজ-ইউনিভার্সিটি থেকে আর্টসে স্নাতক করেছেন শাহবাজ শরিফ। ব্যবসা করতে করতেই ১৯৮৫ সালে লাহোর চেম্বার অফ কমার্স এবং ইন্ডাস্ট্রির প্রধান হিসাবে কাজ করেছেন।

রাজনৈতিক ক্যারিয়ার

ব্যবসায়ী শাহবাজ শরিফ বড় ভাই নওয়াজ শরিফের হাত ধরেই রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। ১৯৮৮ সালে পঞ্জাবের প্রত্যন্ত বিধানসভায় নেতা হিসাবে কাজ শুরু করেন। এরপর জাতীয় সংসদেও কাজ করেছেন। আর তা ১৯৯০ সালে। এরপর ১৯৯৩ সালে আরও একবার পঞ্জাব বিধানসভা থেকে নির্বাচিত হন শাহবাজ শরিফ। এরপর বিরোধী দলনেতা হিসাবে সংসদে কাজ করেন। এমনকি ১৯৯৭ সালে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবেও নির্বাচিত হয়েছেন নওয়াজের ভাই। কিন্তু ১৯৯৯ সালে পাকিস্তানে হওয়া সেনা অভ্যুত্থানের কারণে শাহবাজ গোটা পরিবারকে নিয়ে লুকিয়ে সৌদি আরব চলে যান। সেখানেই কয়েক বছর কাটান। এরপর ২০০৭ সালে ফের একবার পাকিস্তানে ফিরে আসেন।

সেনাবাহিনীর সাথে সম্পর্ক

শাহবাজ শরিফের রয়েছে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক।  তবে এই সম্পর্কটা বড় ভাই সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের ছিল না। আন্তর্জাতিক বিশ্লেসকদের মতে, ২২ কোটি মানুষের এই দেশের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা নীতি নিয়ন্ত্রণ করে পাক সেনা। সেখানে পাক সেনার সঙ্গে সুসম্পর্ক ক্ষমতায় থাকার অন্যতম মূল চাবিকাঠি পাকিস্তানে। 

শাহবাজ শরিফ পাকিস্তানে ফিরেই রাজনীতিতে নিজের জায়গা শক্ত করেন। ২০০৮ সালে তিনি আবারও পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে র্নিবাচিত হন। ২০১৩ সালে তৃতীয়বারের জন্যে পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে নির্বাচিত হন শেহবাজ। কিন্তু ২০১৮ সালে সাধারণ নির্বাচনে তাঁর পার্টি মুখ থুবড়ে পড়ে। পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী থাকার  সময় চিনের চায়না পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোর( সিপিইসি) প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে  বেজিংয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কাজ করেছেন শেহবাজ শরীফ।

পাকিস্তান মুসলিম লীগের নেতৃত্ব

২০১৭ সালে প্রকাশিত পানামা পেপারসে পাকিস্তান মুসলিম লীগ (এন) প্রধান নওয়াজ শরিফের নাম থাকার পর শাহবাজ শরিফ পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ পার্টির প্রেসিডেন্ট হন। আর এর মধ্য দিয়েই পাঞ্জাবের প্রাদেশিক রাজনীতি ছেড়ে জাতীয় রাজনীতিতে পদার্পণ হয় শাহবাজ শরিফের।  

Link copied!