ভারতে মুসলিম নারীদের আবারও সাইবার ক্রাইমের শিকার হতে হল। নতুন বছরে ১ জানুয়ারি ভারত শাসিত কাশ্মীরের সাংবাদিক কুরাতুলাইন রেহবার ঘুম থেকে জেগেই নিজেকে আবিস্কার করলেন ‘অনলাইনে নিলাম’ তালিকায় বিক্রির সারিতে! অনুমতি না নিয়ে তার ছবি ব্যবহার করা হয়েছে সেখানে। মেয়েদের বিক্রি করে দেওয়া বিষয়ে একটি অ্যাপে আপলোড দেওয়া হয়েছে তার ছবি ও নাম। এমন ঘটনার শিকার হয়েছেন কমপক্ষে ১০০ মুসলিম নারী।
শুধু রেহবারই নন, ভারতের কিছু প্রথম সারির মুসলিম নারীকেও ‘নিলামে বিক্রি’র বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে সোচ্চার হয়েছেন তারা। কিন্তু পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো একশন নেওয়া হবে, এমনটা আশা করতে পারছেন না। এ পর্যন্ত কমপক্ষে ১০০ নারীকে ‘গৃহকর্মী হিসেবে বিক্রি’ করে দেওয়ার বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে অ্যাপস ব্যবহার করে। এ খবর দিয়েছে আল-জাজিরা।
এরমধ্যে আছেন সুপরিচিত অভিনেত্রী শাবানা আজমী, দিল্লি হাইকোর্টের একজন বিচারকের স্ত্রী, বেশ কয়েকজন সাংবাদিক, অধিকারকর্মী এবং রাজনীতিক। ‘বুল্লি বাই’ নামের অ্যাপে এসব নারীকে বিক্রি করে দেওয়ার বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়।
বিক্রির তালিকা থেকে বাদ যাননি পাকিস্তানের শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী মালালা ইউসুফজাই, নিখোঁজ শিক্ষার্থী নাজিব আহমেদের ৬৫ বছর বয়সী মা ফাতিমা নাফিজও। গত জুলাইয়ে ‘সুল্লি ডিলস’ নামের অ্যাপে প্রায় ৮০ জন মুসলিম নারীকে এভাবে বিক্রি করে দেওয়ার বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে দ্বিতীয় দফায় ‘বুল্লি বাই’ অ্যাপের মাধ্যমে একই প্রচারণা চালানো হল।
স্থানীয় পর্যায়ে ‘বুল্লি’ এবং ‘সুল্লি’ শব্দ দুটিই মুসলিম নারীদেরকে অবমাননা করতে অশ্লীল শব্দ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এবার পাঞ্জাবি ভাষায় ব্যবহার করা হয়েছে ‘বুল্লি বাই’। এর সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে ইংরেজি প্রতিশব্দ। অ্যাল্টনিউজে কাজ করেন সাংবাদিক মোহাম্মদ জুবায়ের। তিনিই এসব কথা জানিয়েছেন আল জাজিরাকে।
গত বছর জুলাইয়ে ‘সুল্লি ডিলস’ নিলামে নাম ছিল রেহবারের। তিনি আল জাজিরাকে বলেছেন, ওই অ্যাপে নিজের ছবি দেখে তিনি হতাশ। বলেন, যখন আমার ছবি দেখলাম, তখন আমার গলা ভারি হয়ে গেল। মনে হলো হাত পাথরের মতো ভারি হয়ে গেছে। আমি অসাড় হয়ে পড়েছিলাম। আমার জন্য এটা ছিল অপমানের।
বাস্তবে কোনো নারীকে বিক্রি করা না হলেও মাইক্রোসফট মালিকানাধীন সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট বিষয়ক সাইট গিটহাবে সৃষ্টি করা হয়েছে ওই অ্যাপ। এর মধ্য দিয়ে মুসলিম নারীদের অবমাননা ও অপমানিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। এ নিয়ে যখন সোরগোল শুরু হয়, তখন শনিবার ওই অ্যাপটি নামিয়ে ফেলা হয়েছে। এর শিকারে পরিণত হয়েছেন যারা তারা বলছেন, যারাই ‘সুল্লি ডিলস’ করেছিল, সেই একই চক্র গিটহাবে ‘বুল্লি বাই’ সৃষ্টি করেছে। কারণ, দুটি বিষয়ই একই রকম।
এমন অবমাননায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শনিবার রাতেই সোচ্চার হয়েছেন কয়েক ডজন মুসলিম নারী। এতে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তবে এসব অপতৎপরতা রোধের বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে নয়া দিল্লি বা মুম্বই পুলিশের কর্মকর্তারা কোনো মন্তব্য জানাননি।