সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে শাসন ক্ষমতা দখলের প্রতিবাদে দেশজুড়ে গণতান্ত্রিক দলগুলোর নেতাকর্মীদের অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল সুদান। আর বিক্ষোভ সমাবেশ-অবস্থান ধর্মঘট সামাল দিনে সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন ৭ জন। আহত হয়েছেন দুই শতাধিক। খবর রয়টার্স’র।
সোমবার সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্যকে গ্রেফতারের পর সার্বভৌম কাউন্সিল এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ভেঙে দেয় জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান। পাশপাশি দেশটিতে জরুরি অবস্থা জারি করেন এই সামরিক নেতা।
তবে সেনা অভ্যুত্থানের পর দেশটিতে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীরা রাস্তায় নেমে পড়েছেন। তাদের সেনা অভুত্থানবিরোধী বিক্ষোভে রাজধানী খার্তুমসহ উত্তাল পুরো সুদান। অন্যদিকে, সেনাবাহিনীও বিক্ষোভ দমাতে বিভিন্ন জায়গায় গুলি চালিয়েছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়, বিক্ষোভ দমাতে সেনাবাহিনীর গুলিতে অন্তত ৭ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন দেড় শতাধিক। তবে দেশটির মানবাধিকার সংগঠনগুলো নিহতের সংখ্যা দুই শতাধিক বলে উল্লেখ করেছেন।
এদিকে, দেশটির বেশ কয়েকটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের সাথে সাধারণ জনগণও সেনা অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভ সমাবেশে যোগ দিয়েছেন। এতে আন্দোলন আরও জোরদার হচ্ছে বলে রাজনৈতিক দলের নেতারা মনে করছেন।
স্থানীয় সময় সোমবার(২৫ অক্টোবর) দেশটির সার্বভৌম কাউন্সিল এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ভেঙে দিয়ে জরুরি অবস্থা জারির পর জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান বলেছেন, ‘দেশের শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখতে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ প্রয়োজন ছিল। সুদানের এই সামরিক নেতা আগামী ২০২৩ সালের জুলাই মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেন। নির্বাচনের পর নির্বাচিত বেসামরিক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতিশ্রতিও ব্যক্ত করেন আল -বোরহান।
তবে সুদানের এই সামরিক নেতার জরুরি অবস্থা জারির কোনো এখতিয়ার নেই বলে জানিয়েছে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী আবদাল্লাহ হামদুকের এখনও অনুগত হিসেবে দেশটির তথ্যমন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের অফিসিয়াল ফেসবুকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, সার্বভৌম কাউন্সিল ও সংবিধান শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রীকেই জরুরি অবস্থা জারির ক্ষমতা দিয়েছে এবং এ কারণে সেনাবাহিনীর নেয়া পদক্ষেপগুলো অপরাধের সামিল। হামদুক এখনও অন্তর্বর্তীকালীন কর্তৃপক্ষের বৈধ প্রধানমন্ত্রী বলেও ওই বিবৃতিতে জানানো হয়।
এদিকে, সুদানে সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী আবদাল্লাহ হামদুককে ক্ষমতাচ্যুত করে জরুরি অবস্থা জারির তীব্র সমালোচনা করেছে যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র কেরিন জিয়েন-পিয়েরে বলেন, “সামরিক বাহিনীর নেয়া পদক্ষেপগুলোতে আমাদের কোনো সমর্থন নেই। আমরা সুদানের প্রধানমন্ত্রীসহ যারা এখনও গৃহবন্দী রয়েছেন তাদের দ্রুত মুক্তি দেওয়ার আহবান জানাচ্ছি।”
স্থানীয় সময় সোমবার (২৫ অক্টোবর) ভোরে সামরিক বাহিনীর সদস্যরা সুদানের প্রধানমন্ত্রী আবদাল্লাহ হামদুকের বাড়ি ঘিরে ফেলে। সামরিক বাহিনীর ওই দলটি আবদাল্লাহ হামদুক সরকারের গুরুত্বপূর্ণ চারজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসহ ক্ষমতাসীন কাউন্সিলের একজন বেসামরিক সদস্যকে আটক করে।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালে স্বৈরশাসক ওমর আল বশির ক্ষমতাচূত হওয়ার পর দেশটির সামরিক ও বেসামরিক গোষ্ঠীর মধ্যে ক্ষমতার ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দের শুরু হয়।এরপর থেকে বিভিন্ন সময়ে দেশটিতে সেনা অভ্যুত্থানের দাবিতে বিক্ষোভও চলছিল।