২০২১ সালের ডিসেম্বরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অনুযোগের সুরে বলেছিল, চীনের সহায়তায় নিজ দেশে ব্যালাস্টিক মিসাইল বানানো শুরু করেছে সৌদি আরব। মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম ধনী এই দেশটি আগেও নিজেদের নিরাপত্তার জন্য চীনের কাছ থেকে ব্যালাস্টিক মিসাইল কিনেছিল। তবে এবার খোদ নিজ দেশেই চীনের সহায়তা নিয়ে ব্যালাস্টিক মিসাইল তৈরিতে হাত দিয়েছে সৌদি প্রশাসন। এতে খানিকটা হলেও মধুর সম্পর্কে চির ধরেছে ওয়াশিংটন-রিয়াদের সম্পর্কে। কারণ বেইজিংয়ের সঙ্গে রিয়াদের মিসাইল তৈরির চুক্তিটি ভালোভাবে নিতে পারছে না মিত্র যুক্তরাষ্ট্র।
সবার কাছেই মিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন-- সৌদি আরব কেন এ অবস্থায় এসে নিজ দেশেই মিসাইল বানানোর কাজ শুরু করল? যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অস্ত্রের জোগান বিশেষ করে মিসাইলের জোগান দিয়ে চলেছে? ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা বিশ্লেষক প্রফেসর মাইকেল ট্যানকাম এ প্রশ্নের সবিস্তার উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছন।
মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক গণমাধ্যম দ্য নিউ আরবকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রফেসর ট্যানকাম দুটি উল্লেখযোগ্য কারণ উল্লেখ করেছেন। এক. আঞ্চলিক নিরাপত্তার ঝুঁকি বেড়ে যাওয়া এবং দুই. যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেনের নির্বাচিত হওয়া।
সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যকার সাপে-নেউলে সম্পর্কের কথা সবাই জানে। ২০১৯ সালে সৌদি আরবের দুইটি বড় তেল শোধনাগার স্থাপনায় হামলা চালায় ইয়েমেনের ইরানপন্থী হুতি বিদ্রোহীরা। তাদের হামলার বিষয়টি বেশ ভাবিয়ে তোলে রিয়াদকে। এ কারণে তারা নিজেরা আরো বেশি সমৃদ্ধিশালী হতে চায়। আর নিজেদের শক্তিশালী করতে বেইজিংয়ের শরণ নেয় রিয়াদ। আর মার্কিন বলয় থেকে সৌদি আরবের বেরিয়ে আসাকে স্বাগত জানিয়েছে শি জিনপিং সরকার। সাহায্য ও সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে দেরি করেনি এশিয়ার সমরাস্ত্রে অদ্বিতীয় রাষ্ট্র চীন।
দ্য নিউ আরবকে দেওয়া সাক্ষাতকারে প্রফেসর মাইকেল ট্যানকাম বলেন, “২০০৭ সালে চীনের কাছ থেকে ব্যালাস্টিক মিসাইল কেনে সৌদি আরব। নিজেদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কারণে রিয়াদ এ সিদ্ধান্ত নেয়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে বারাক ওবামা শপথ নেওয়ার পর তাদের সন্দেহ হয় ইরানের হুমকি ও হামলা মোকাবিলায় ওবামা প্রশাসন কি তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসবে? এ সন্দেহ থেকেই তারা চীনের দিকে ঝুঁকতে থাকে। আর দেশটির কাছ থেকে বিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে ব্যালাস্টিক মিসাইল ক্রয় করে। ওইসময় নিজের দেশে মিসাইল তৈরির জন্য চীন সরকারের সঙ্গে চুক্তি করে সৌদি আরব।
প্রফেসর মাইকেল ট্যানকাম আরো বলেন, বারাক ওবামা প্রশাসনের ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যখন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন তখন সৌদির মনে নতুন করে এ সন্দেহ আরও বেড়ে যায়। আর এই সুযোগ কাজে লাগায় বেইজিং প্রশাসন। জিনপিং সরকার যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের মাধ্যমে সৌদি আরবের সঙ্গে সঙ্গে ঘনিষ্ঠ তৈরি করে।
ইরান ও চীনের মধ্যে চমৎকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। বাণিজ্য অবরোধ আরোপ ছাড়াও নানা কারণে এই দেশ দুটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর ক্ষিপ্ত। চীন চায় মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতা। ইরান মিসাইলের দিক দিয়ে সৌদি আরবের চেয়ে অনেক উন্নত ও সমৃদ্ধশালী রাষ্ট্র। জিনপিং সরকার চায় ইরানের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বি সৌদিও মিসাইলের দিক দিয়ে শক্তিশালী হয়ে উঠুক। আর বাণিজ্য সুবিধাতো রয়েছেই। কারণ শুধু যুক্তরাষ্ট্র একা কেন, সৌদি আরবের মাধ্যমে চীনও মধ্যপ্রাচ্যে অস্ত্রের বাজারে শক্তিশালী অবস্থানে থাকতে চায়।
বিশ্লেষকদের প্রশ্ন, অস্ত্র রাজনীতির এহেন সমীকরণে সৌদি-মার্কিন হানিমুন কি তবে শেষ হতে চলল?