ব্রাজিলে ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন শুরু হচ্ছে আজ, থাকছেন না পুতিন-শি

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জুলাই ৬, ২০২৫, ০৪:৫১ পিএম

ব্রাজিলে ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন শুরু হচ্ছে আজ, থাকছেন না পুতিন-শি

ছবি: সংগৃহীত

ক্রমশ বড় হতে থাকা ব্রিকসের শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে ব্রাজিলের রিওতে জড়ো হচ্ছেন সদস্য দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানরা।

রিও ডি জেনিরোতে রোববার থেকে হতে যাওয়া এ সম্মেলনে জোটটি নিজেদেরকে বহুপাক্ষিক বিশ্ব ব্যবস্থার রক্ষাকর্তা হিসেবে হাজির করতে চাইলেও তাদের আলোচনায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্ক নীতিই বেশি প্রাধান্য পাবে বলে মনে করা হচ্ছে।

উন্নয়নশীল বিশ্বের প্রতিনিধিত্ব করা এই নেতারা দুই দিন ধরে কথা বলবেন পশ্চিমা আধিপত্য নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ মোকাবেলায় নিজেদের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধিতে কী করা যায়, তা নিয়ে, বলছে আল জাজিরা।

ব্রিকস শব্দটি এসেছে প্রতিষ্ঠাকালীন ৫ সদস্য দেশ ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকার নামের প্রথম অক্ষর দিয়ে।

২০০৯ সালে প্রথম সম্মেলন করা জোটটিতে এরপর পূর্ণ সদস্য হিসেবে একে একে যুক্ত হয়েছে মিশর, ইথিওপিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।

জোটটির এখন ১০টি কৌশলগত অংশীদারও আছে। গত বছর বানানো এই ক্যাটাগরিতে আছে বেলারুশ, কিউবা, ভিয়েতনামের মতো দেশ।

কিন্তু এবারই প্রথম এ সম্মেলনে থাকছেন না চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। ২০১২ সালে বেইজিংয়ের ক্ষমতায় বসার পর থেকে ব্রিকসের কোনো শীর্ষ সম্মেলনই তাকে ছাড়া হয়নি। এবার তার জায়গায় প্রতিনিধিত্ব করবেন চীনা প্রধানমন্ত্রী লি চিয়াং।

সম্মেলনে সশরীরে উপস্থিত থাকছেন না রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও।

ইউক্রেনে ২০২২ সাল থেকে শুরু হওয়া সামরিক অভিযানে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিল।

ব্রাজিল আইসিসির সদস্য দেশ হওয়ায় পুতিন দেশটিতে গেলে তাকে গ্রেপ্তারে চাপের মুখে পড়বে ব্রাসিলিয়া। এ জটিলতা এড়াতেই রুশ প্রেসিডেন্ট ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে সশরীরে হাজির হচ্ছেন না বলে মনে করা হচ্ছে।

শীর্ষ সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ এই দুই নেতার অনুপস্থিতি জোটের ভেতরকার সংহতি ও বৈশ্বিক প্রভাব নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।

ব্রাজিলের সভাপতিত্বে হতে যাওয়া ব্রিকস সম্মেলনে নেতারা ট্রাম্প প্রশাসনের ‘বাছবিচারহীন’ বাণিজ্য শুল্কের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে একে অবৈধ এবং বিশ্ব বাণিজ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করার মতো ঝুঁকিপূর্ণ পদক্ষেপ অ্যাখ্যা দেবেন বলেই মনে করা হচ্ছে।

সম্মেলনের আলোচ্যসূচিতে বৈশ্বিক স্বাস্থ্য নীতি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও জলবায়ু পরিবর্তনের মতো প্রসঙ্গও আছে।

ব্রিকস দেশগুলো বলছে, তারা বিশ্বের জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি অংশ, মোট ভূমির ৩৬ শতাংশ এবং বৈশ্বিক অর্থনীতির এক চতুর্থাংশের প্রতিনিধিত্ব করে।

জোটটি নিজেদেরকে পশ্চিমা নেতৃত্বাধীন অর্থনৈতিক জোট জি৭-র পাল্টা ভারসাম্য রক্ষাকারী শক্তি এবং ‘গ্লোবাল সাউথের দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার ফোরাম হিসেবে দেখে।

তবে নানা বিষয়ে জোটের সদস্যদের মধ্যে মতপার্থক্যও আছে।

এক সূত্রের বরাত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, ব্রিকসের কিছু দেশ গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ এবং ইরানের ওপর সাম্প্রতিক হামলা নিয়ে জোটকে দৃঢ় অবস্থান নিতে আহ্বান জানালেও অন্যান্য সদস্যরা এসব বিষয় মোটাদাগে এড়িয়ে যেতে চাইছে।

এ সংক্রান্ত আলোচনা সংবেদনশীল হওয়ায় সূত্রটি তার নাম পরিচয় গোপন রাখতে অনুরোধ করেছে।

রিও-র সম্মেলনে ইরানি প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান ও মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।

“ব্রিকসের লক্ষ্য হচ্ছে অন্তর্বর্তীমূলক বৈশ্বিক শাসনব্যবস্থাসহ বহুমেরুর বিশ্ব প্রতিষ্ঠায় চাপ সৃষ্টি করা, যেখানে গ্লোবাল সাউথের অর্থবহ কণ্ঠস্বর থাকবে, বিশেষ করে বাণিজ্য ব্যবস্থাপনায়।

“এটা (ব্রিকস) সুসংগঠিত জোট নয়, না আছে বিশ্বব্যাপী এর কোনো বৈপ্লবিক প্রভাবও। আসল প্রশ্ন হচ্ছে, ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও ভিন্ন ভিন্ন অগ্রাধিকার থাকা সদস্যদের নিয়ে ক্রমশ বড় হতে থাকা ব্রিকস কি আদৌ উল্লেখযোগ্য প্রভাব রাখার মতো যথেষ্ট ঐক্যবদ্ধ হতে পারবে?” বলেছেন আল-জাজিরার সাংবাদিক লুসিয়া নিউম্যান।

Link copied!