এপ্রিল ১৩, ২০২৫, ১১:২৩ এএম
ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন স্মার্টফোন, কম্পিউটার এবং কিছু ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতিকে সম্পূরক শুল্কের আওতা থেকে অব্যাহতি দিয়েছে। চীন থেকে এসব পণ্য আমদানিতে ১২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল।
ইউএস কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার পেট্রোল এক নোটিসে বলেছে, বেশিরভাগ দেশের ওপর ট্রাম্প যে ন্যূনতম ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, সেই শুল্ক এবং চীনের ওপর আরোপিত উচ্চ হারের সম্পুরক শুল্কের আওতার বাইরে থাকবে এসব পণ্য।
বিবিসি লিখেছে, এ সিদ্ধান্তকে চীনের ওপর ট্রাম্পের শুল্কের প্রথম উল্লেখযোগ্য ছাড় হিসেবে দেখা হচ্ছে। একজন বাণিজ্য বিশ্লেষক একে ‘গেইম-চেঞ্জার পরিস্থিতি’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন।
শনিবার রাতে মিয়ামি সফরের সময় ট্রাম্প বলেন, আগামী সপ্তাহের শুরুতে তিনি ছাড়ের বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানাবেন।
এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “আমরা খুব নির্দিষ্ট করে জানাব। কিন্তু আমরা অনেক টাকা নিচ্ছি। দেশ হিসেবে আমরা অনেক টাকা নিচ্ছি।”
নতুন শুল্কনীতির কারণে বিভিন্ন গ্যাজেটের দাম আকাশচুম্বী হতে পারে বলে মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো উদ্বেগ প্রকাশের পর এই পদক্ষেপ নিল ট্রাম্প প্রশাসন। কারণ এসব গ্যাজেটের বেশিরভাগই তৈরি হয় চীনে।
৫ এপ্রিল থেকে কার্যকর হওয়া এই ছাড়ের মধ্যে সেমিকন্ডাক্টর, সোলার সেল, মেমোরি কার্ডসহ অন্যান্য ইলেকট্রনিক ডিভাইস এবং উপাদানও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
ওয়েডবুশ সিকিউরিটিজের প্রযুক্তি গবেষণার বৈশ্বিক প্রধান ড্যান আইভস এক্স পোস্টে বলেছেন, “প্রযুক্তি বিনিয়োগকারীদের জন্য শুল্ক ছাড় হচ্ছে স্বপ্নের মত। চীনা শুল্কের ক্ষেত্রে স্মার্টফোন, চিপ বাদ দেওয়া একটি গেইম-চেঞ্জার পরিস্থিতি।”
অ্যাপল, এনভিডিয়া, মাইক্রোসফটের মতো বড় প্রযুক্তি কোম্পানি এবং বিশাল প্রযুক্তি খাত এই সপ্তাহান্তে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
হোয়াইট হাউস ইঙ্গিত দিয়েছে, চীন থেকে কারখানা যুক্তরাষ্ট্রে সরিয়ে নেওয়ার জন্য কোম্পানিগুলোকে আরও সময় দিতে এই ছাড় দেওয়া হচ্ছে।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট এক বিবৃতিতে বলেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এটা স্পষ্ট করেছেন যে- সেমিকন্ডাক্টর, চিপ, স্মার্টফোন ও ল্যাপটপের মত গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি তৈরিতে চীনের ওপর নির্ভর করতে পারে না আমেরিকা।
“প্রেসিডেন্টের নির্দেশে এই কোম্পানিগুলো যত তাড়াতাড়ি সম্ভব যুক্তরাষ্ট্রে তাদের উৎপাদন চালুর জন্য তাড়াহুড়ো করছে।”
ফ্লোরিডার বাড়িতে সাপ্তাহিক অবকাশ কাটাতে যাওয়া ট্রাম্প শুক্রবার সাংবাদিকদের বলেন, চীনের ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপে তিনি স্বস্তিবোধ করছেন।
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে সম্পর্কের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “আমি মনে করি, এ থেকে ইতিবাচক কিছু বেরিয়ে আসতে যাচ্ছে।”
হোয়াইট হাউসের ডেপুটি চিফ অব স্টাফ অন পলিসি স্টিফেন মিলার বলেন, এসব ইলেকট্রনিক পণ্য এখনো ফেন্টানিল সংক্রান্ত ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপের আওতায় রয়েছে।
অনেকে ধারণা করছে, আইফোনের দাম যুক্তরাষ্ট্রে তিনগুণ বাড়তে পারে- যদি খরচ ভোক্তাদের ওপর চাপানো হয়।
কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চের তথ্য অনুযায়ী, আইফোনের প্রধান বাজার যুক্তরাষ্ট্র, সেখানে গত বছর অ্যাপলের অর্ধেকের বেশি স্মার্টফোন বিক্রি হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি করা অ্যাপলের ৮০ শতাংশ আইফোন চীনে তৈরি, বাকি ২০ শতাংশ তৈরি ভারতে।
সহযোগী স্মার্টফোন জায়ান্ট স্যামসাংয়ের মত অ্যাপল চীনের উপর অতিরিক্ত নির্ভরতা এড়াতে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সরবরাহ চেইনে বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করছে। নতুন উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে এগিয়ে রয়েছে ভারত ও ভিয়েতনাম।
বিবিসি লিখেছে, নতুন শুল্ক কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অ্যাপল ভারতে ডিভাইস উৎপাদনের গতি ও পরিমাণ বৃদ্ধি করতে চেয়েছিল।
চলতি সপ্তাহেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর চড়া শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করেছিলেন ট্রাম্প। কিন্তু বুধবার তিনি ঘোষণা দেন, চীন ছাড়া বাকি দেশগুলোর ওপর শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত থাকবে।
ট্রাম্প বলেন, মার্কিন পণ্যের ওপর ৮৪ শতাংশের পাল্টা শুল্ক আরোপ করতে চীন প্রস্তুত বলেই এই শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। আর যেসব দেশ মার্কিন শুল্কের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক পাল্টা শুল্ক দেয়নি, তারা জুলাই পর্যন্ত ছাড় পাবে; তারা কেবল ১০ শতাংশ শুল্কের মুখোমুখি হবে।
হোয়াইট হাউস পরে বলেছিল, অন্যান্য দেশ থেকে আরও অনুকূল বাণিজ্য সুবিধা বের করে আনতে একটি কৌশল হল এই পদক্ষেপ।
ট্রাম্প বলেছেন, তার আমদানি শুল্ক বৈশ্বিক বাণিজ্য ব্যবস্থায় ‘অন্যায্যতা’ দূর করার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রে কারখানা ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করবে।
সূত্র: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।