অপারেশন সিদুঁর

ভারতের সমর্থনে ইসরায়েল, পাকিস্তানের পাশে তুরস্ক!

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

মে ৭, ২০২৫, ০১:০১ পিএম

ভারতের সমর্থনে ইসরায়েল, পাকিস্তানের পাশে তুরস্ক!

ছবি: সংগৃহীত

ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধের দামামা বেজে উঠেছে। এরই মধ্যে বিভিন্ন বক্তব্য বিবৃতিতে স্পষ্ট হয়ে উঠছে আন্তর্জাতিক অঙ্গণে কোন দেশ কার পক্ষে অবস্থান নিচ্ছে!

০৬ মে গভীর রাতে ভারত-নিয়ন্ত্রিত পেহেলগাম হামলার বদলা হিসেবে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের অন্তত ৯টি অঞ্চলে হামলা করেছে ভারত। ভারতীয় সেনাবাহিনী এ অপারেশনের দেন ‘অপারেশন সিঁদুর’। ভারতীয় সেনাবাহিনীর সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেলে একটি ছবি পোস্ট করে ক্যাপশনে হ্যাশট্যাগ লেখা ছিল ‘পেহেলগাম অ্যাটাক’। সেই সঙ্গে ভারতীয় সেনার তরফে লেখা হয়েছে, ‘জাস্টিস ইজ সার্ভড’, ‘জয় হিন্দ’।

ভারতের এই হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই প্রকাশ্যে আসে ইসরায়েলের সমর্থন। 

ভারতে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত রুবেন আজার এক্সে বলেছেন, ইসরায়েল ভারতের ‘আত্মরক্ষার অধিকার’ সমর্থন করে। তিনি উল্লেখ করেন, “সন্ত্রাসীদের জানা উচিত, নিরীহ মানুষের বিরুদ্ধে নৃশংস অপরাধ থেকে পালিয়ে বাঁচার কোনো জায়গা নেই।”

তবে ইসরায়েল ভারতের পাশে দাঁড়ালেও ভিন্ন সুরে কথা বলেছে তুরস্ক। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইশাক দারকে ফোন করে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান এই হামলাকে ‘অপ্রস্তুত আগ্রাসন’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, আঞ্চলিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে তুরস্ক এবং পাকিস্তানের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে। দুই দেশ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বজায় রাখবে বলে জানানো হয়।

ভারত-পাকিস্তানের সাম্প্রতিক এই যুদ্ধাবস্থা ঘিরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। জাতিসংঘের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও সংযুক্ত আরব আমিরাত এ হামলার পরপরই তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে, উভয় পক্ষকে সংযম দেখাতে বেশিরভাগ বার্তাতেই আহ্বান জানানো হয়েছে, বলছে এনডিটিভি।

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিক বলেন, ‘নিয়ন্ত্রণরেখা ও আন্তর্জাতিক সীমান্ত অতিক্রম করে চালানো ভারতের এই সামরিক অভিযান নিয়ে মহাসচিব গভীর উদ্বিগ্ন। তিনি উভয় দেশকে সর্বোচ্চ সংযম দেখানোর আহ্বান জানিয়েছেন।’

এদিকে এ বিষয়ে সাংবাদিকরা যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা খুবই দুঃখজনক। আমরা এইমাত্র এর খবর পেয়েছি। ভারত-পাকিস্তান বহু দশক ধরে লড়াই করছে। আশা করি পরিস্থিতি দ্রুত শান্ত হবে।’

পাকিস্তানে ভারতের হামলায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে চীন, তারা উত্তেজনা আর না বাড়িয়ে দুই দেশকে সংযম প্রদর্শনেরও আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

ভারতের হামলাকে ‘দুঃখজনক’ অভিহিত করে বেইজিংয়ের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেন, “আমরা ভারত ও পাকিস্তান উভয়কেই শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার, শান্ত ও সংযত থাকার এবং পরিস্থিতি আরও জটিল করে তোলে এমন পদক্ষেপ এড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছি।”

এদিকে ভারতের অপারেশন সিন্দুরের মিসাইল হামলার জবাবে দেশটির পাঁচটি যুদ্ধবিমান ‘ভূপাতিত’ করার দাবি করেছেন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ। বুধবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গকে এ তথ্য জানান তিনি। এছাড়া কয়েকজন ভারতীয় সেনাকে যুদ্ধবন্দি হিসেবে আটকের দাবিও করেছেন তিনি।

রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘ভূপাতিত’ যুদ্ধবিমানের মধ্যে তিনটি ফ্রান্সের তৈরি রাফাল, একটি রাশিয়ার তৈরি সু৩০ ও অন্যটি মিগ২৯ যুদ্ধবিমান। সু৩০ ও মিগ২৯ যুদ্ধবিমান সোভিয়েত আমলে তৈরি।

এছাড়া পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম ডনের এক প্রতিবেদনে পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ দপ্তরের (আইএসপিআর) মহাপরিচালকের বরাতে দাবি করা হয়, ভারতের হামলায় পাকিস্তানে ২৬ জন বেসামরিক মানুষ নিহত ও ৪৬ জন আহত হয়েছেন।

এর আগে মঙ্গলবার, ৬ মে দিবাগত রাতে চালানো এই হামলার প্রেক্ষাপট তৈরি হয় প্রায় দুই সপ্তাহ আগে। কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হয়।

এ হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে ভারত, যদিও ইসলামাবাদ তা সরাসরি অস্বীকার করেছে। এমনকি ভারতীয় রাজনীতিতেও এ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। বিরোধী দল কংগ্রেসের দাবি, হামলার তিন দিন আগেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে গোয়েন্দা তথ্য ছিল।

Link copied!