মাইলস্টোনে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত

সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখানো, স্কুলের কোচিং বন্ধসহ অভিভাবকদের ৯ দাবি

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

আগস্ট ১২, ২০২৫, ০৩:৪২ পিএম

সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখানো, স্কুলের কোচিং বন্ধসহ অভিভাবকদের ৯ দাবি

ছবি: সংগৃহীত

যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার দিনে স্কুলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখানো, কোচিং সেন্টার বন্ধসহ আট দফা দাবি জানিয়েছেন রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অভিভাবকেরা। তারা যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনার দিনের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখতে চেয়েছেন। সেই সঙ্গে মাইলস্টোনসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোচিং বাণিজ্য বন্ধের দাবি তুলেছেন।

মঙ্গলবার, ১২ আগস্ট সকাল ১০টার দিকে দিয়াবাড়ি গোলচত্বরে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত ও আহতদের পরিবারের সদস্যরা মানববন্ধন করেন। এতে নয় দফা দাবি জানানো হয়। 

দাবিগুলো হলো, ১) সুষ্ঠু তদন্ত এবং বিচার নিশ্চিত করতে হবে। ২) সারা বাংলাদেশে মাইলস্টোন স্কুলসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করতে হবে। ৩) সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিটি নিহত শিশুর জন্য ৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ (জরিমানা) এবং প্রতি আহতদের জন্য এক কোটি টাকা দিতে হবে। ৪) স্কুলের পক্ষ থেকে প্রত্যেক নিহত শিশুর জন্য ২ কোটি এবং প্রতি আহতদের জন্য ১ কোটি টাকা জরিমানা দিতে হবে। ৫) রানওয়ে থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্থান পরিবর্তন করতে হবে (অন্যথায় রানওয়ের স্থান পরিবর্তন করতে হবে)। ৬) কোচিং ব্যবসার মূল হোতা স্কুল শাখার প্রধান শিক্ষককে (মিস খাদিজা) ৭২ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণ করে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে তার সুষ্ঠু বিচার করতে হবে। ৭) স্কুলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ আমাদের দেখাতে হবে। ৮) বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা জনহীন জায়গায় করতে হবে। ৯) মানববন্ধন করতে চাইলে কনক নামের এক শিক্ষক এক অভিভাবকের গায়ে হাত তোলেন। তাকে অপসারণ করতে হবে।

মানববন্ধনে অংশ নিয়ে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত শিক্ষার্থী মারিয়াম উম্মে আফিয়ার মা উম্মে তামিমা আক্তার বলেন, ‘আমার বাচ্চাটাকে আমি কখনো কোচিংয়ে দিতাম না। আমার বাচ্চাটাকে দেড় মাস হয়েছে কোচিংয়ে দিসি। কেন দিয়েছি জানেন? আমার বাচ্চা বাসায় যেয়ে আমাকে বলে, আম্মু আমি যদি কোচিং না করি, মিসরা আমাকে আদর করে না। আমাকে প্রতিদিন বলে, আমি যদি কোচিং না করি, মিসরা আদর করে না।’ খবর প্রথম আলো। 

আফিয়া স্কুলের বাংলা মাধ্যমের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। কোচিংয়ে দেওয়ার পর মেয়ে খুশি ছিল জানিয়ে তামিমা আক্তার বলেন, ‘যখন বাচ্চাটাকে কোচিংয়ে দিলাম, এক সপ্তাহ পরে আমার ময়না পাখি, আমারে জড়াইয়া ধইরা বলে, মা মিসরা আমাকে এখন অনেক আদর করে।’

আফিয়ার মা উম্মে তামিমা আক্তার আরও বলেন, ‘এখানে যে বাচ্চাগুলো মারা গেছে, সব কোচিং এর বাচ্চা।... কোচিংয়ের বড় একটা অংশ তাদের কাছে যায়, বড় একটা অ্যামাউন্ট তারা পায়... এ স্কুলে কোচিংয়ের জন্য যতটা প্রেশার দেওয়া হয়, আমার মনে হয় না, অন্য কোথাও এত প্রেশার দেওয়া হয়।’ তিনি আরও বলেন, পরীক্ষায় খারাপ করিয়ে কোচিংয়ের জন্য চাপ দেওয়া হয়। অভিভাবকেরা কোচিং এর পক্ষে নয় বলেও জানান তিনি।

নিহত শিক্ষার্থী বোরহান উদ্দীন বাপ্পীর বাবা মোহাম্মদ আবু শাহীন বলেন, ‘শিক্ষকেরা বলে আপনার বাচ্চা ক্লাসে পড়া পারে না। আপনার ছেলের পড়াশোনা ভালো না। বিভিন্নভাবে মানসিক টর্চার করে, এভাবেই কোচিং করাতে বাধ্য করে।’

বাপ্পী স্কুলের বাংলা মিডিয়ামের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। বোরহান উদ্দীন বলেন, তার আরেক ছেলে বেলাল উদ্দীন স্কুলের প্লেতে পড়ে। তাকেও কোচিংয়ে ভর্তি করাতে স্কুল কর্তৃপক্ষ চাপ দিচ্ছে।

নামপ্রকাশ না করার শর্তে একজন অভিভাবক বলেন, ‘স্কুল শাখার প্রধান খাদিজা মিস। তিনি কোচিং ব্যবসার মূল হোতা। নিহত মাহরীন চৌধুরী মিস বারবার নিষেধ করেছেন। কিন্তু খাদিজা মিস শোনেননি। মাহরীন মিসের সঙ্গে এ নিয়ে দ্বন্দ্বও ছিল তার। আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে কোচিং ব্যবসার মূল হোতা খাদিজা মিসকে অপসারণ করতে হবে।’

মানববন্ধনে অংশ নেওয়া অভিভাবকেরা বলেন, ‘আজকে আমরা মারামারি করতে আসিনি। এসেছিলাম মানববন্ধন করতে। স্কুল কর্তৃপক্ষ, একজন শিক্ষকও তো আমাদের কাছে আসেননি। আমরা তো সন্তানহারা অভিভাবক। কেউ তো এসে বললেন না, আসেন আপনাদের সঙ্গে কথা বলি।’ উল্টো মানববন্ধনে আসা শিক্ষার্থীদের স্কুলে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ অভিভাবকদের।

অভিভাবকদের অভিযোগ, আজ মানববন্ধন করতে গেলে মাইলস্টোনের একজন শিক্ষকের সঙ্গে তাদের বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে ওই শিক্ষক একজন অভিভাবকের গায়ে হাত তোলেন। এ জন্য লিখিত আট দফার সঙ্গে তারা আরও এক দফা যুক্ত করে অভিযুক্ত শিক্ষকের অপসারণ দাবি করছেন।

মানববন্ধনে অংশ নেওয়া অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের হাতে নিহতদের ছবিসংবলিত প্ল্যাকার্ড দেখা যায়। এ সময় তারা ‘কোচিংয়ের নামে ব্যবসা, বন্ধ কর, বন্ধ কর’, ‘ফুল-পাখি সব পুড়ল কেন, জবাব চাই, দিতে হবে’, ‘কী এসেছে কী এসেছে, বিমান এসেছে, বিমান এসেছে, কী করেছে কী করেছে, মায়ের বুক খালি করেছে’, ‘শিক্ষা না ব্যবসা, শিক্ষা-শিক্ষা’ প্রভৃতি স্লোগান দেন।

Link copied!