ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত শনিবার ২৯তম দিনে গড়িয়েছে। একদিনে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন ৯ হাজারের বেশি মানুষ। তাঁদের মধ্যে প্রায় চার হাজার শিশু। বিদ্যুৎ, পানি, জ্বালানি, ওষুধ, খাবার ও চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাবে ভীষণ রকমের মানবেতর দিন পার করছেন অবরুদ্ধ উপত্যকাটির বাসিন্দারা। হামলা হয়েছে শরণার্থীশিবির, বিদ্যালয়, এমনকি হাসপাতালেও।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে অতর্কিত হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা আন্দোলনের সশস্ত্র সংগঠন হামাস। হামলায় ইসরায়েলে ১ হাজার ৪০০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। সেদিন থেকেই হামাসকে ‘নির্মূল’ করতে গাজায় হামলা শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। সম্প্রতি উপত্যকাটিতে স্থল অভিযানও শুরু করেছে তারা।
একনজরে দেখে নেওয়া যাক ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের হালনাগাদ তথ্যগুলো:
বিদ্যালয় ও অ্যাম্বুলেন্সে হামলা :
হামাস–নিয়ন্ত্রিত গাজার জাবালিয়া শরণার্থীশিবিরের জাতিসংঘ পরিচালিত আল–ফাখোরা বিদ্যালয়ে বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, এ হামলায় ১৫ জনের প্রাণ গেছে। আহত হয়েছেন আরও ৫৪ জন।
এর আগে শুক্রবার গাজা সিটিতে অ্যাম্বুলেন্স বহরে ইসরায়েলি হামলা হয়। প্রাণ যায় অন্তত ১৫ জনের। ইসরায়েলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, হামাসের যোদ্ধারা অ্যাম্বুলেন্সে ছিলেন। তবে এ দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি তারা।
নিহত শিশুর সংখ্যা ৩৯০০ :
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আশরাফ আল–কুদরা জানিয়েছেন, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় গাজায় অন্তত ২৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে গত ৭ অক্টোবর হামলা শুরুর পর মৃতের সংখ্যা ৯ হাজার ৪৮৮ জনে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে ৩ হাজার ৯০০ শিশু রয়েছে।
জ্বালানি নেই, হাসপাতাল বন্ধ :
গাজার উত্তরাঞ্চলের কামাল আদওয়ান হাসপাতালের কার্যক্রম গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে কর্তৃপক্ষ। মূলত চরম জ্বালানি–সংকটের জেরে জেনারেটর বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কার্যক্রম গুটিয়ে নেওয়া হয়। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
ধ্বংসস্তূপের নিচে ২২০০ মানুষ :
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানিয়েছেন, ইসরায়েলি হামলায় গাজায় ধ্বংস হয়ে যাওয়া ভবনগুলোর নিচে এখনো ২ হাজার ২০০ মানুষ চাপা পড়ে আছেন। এর মধ্যে শিশুর সংখ্যা ১ হাজার ২৫০–এর বেশি।
লেবানন সীমান্তে হামলা :
ইসরায়েল–লেবানন সীমান্তে নতুন করে হামলা চালানো হয়েছে। ইসরায়েলি বাহিনী জানিয়েছে, সীমান্ত এলাকায় হিজবুল্লাহর স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে তারা। হিজবুল্লাহর অন্তত দুটি ছোট ইউনিট ও কয়েকটি পর্যবেক্ষণ স্থাপনা ছিল হামলার লক্ষ্যবস্তু।
ইসরায়েলের যুদ্ধাপরাধের তদন্ত চায় ওমান :
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের যুদ্ধাপরাধের তদন্তের দাবি তুলেছে ওমান। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে আন্তর্জাতিক আদালতের উদ্দেশে বলা হয়েছে, সব ধ্বংসযজ্ঞের ক্ষেত্রে যুদ্ধাপরাধের ঘটনা খতিয়ে দেখতে হবে। সেই সাথে গাজায় বিদ্যালয় ও হাসপাতালে বেসামরিক মানুষের ওপর ইসরায়েলি হামলার নিন্দা জানিয়েছে ওমান।
দুটি মসজিদ ধ্বংস :
ইসরায়েলের বোমা হামলার জেরে গাজা সিটিতে দুটি মসজিদ ধ্বংস হয়েছে। আনাদোলু সংবাদমাধ্যমের খবর, গাজা সিটির আল–সাবরা এলাকার আলি বিন তালিব এবং আল–ইসতিজাবাহ মসজিদে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় হামলা চালিয়ে ধ্বংস করা হয়েছে।
প্রাণ গেছে জাতিসংঘের ৭২ কর্মীর :
৭ অক্টোবর সর্বাত্মক হামলা শুরুর পর থেকে গাজায় জাতিসংঘের ৭২ জন কর্মীর প্রাণ গেছে। জর্ডানের রাজধানী আম্মানে আজ শনিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় জাতিসংঘ কর্মীদের নিহতের ঘটনায় শোক জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। তিনি বলেছেন, জাতিসংঘের অকুতোভয় কর্মীরা এখন গাজার ‘লাইফলাইন’।
মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য কাতার ও লেবাননের প্রধানমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ব্লিঙ্কেন।