পশ্চিম সীমান্তজুড়ে পাকিস্তানের একাধিক হামলা, প্রতিহতের দাবি ভারতের

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

মে ৯, ২০২৫, ০২:৪৩ পিএম

পশ্চিম সীমান্তজুড়ে পাকিস্তানের একাধিক হামলা, প্রতিহতের দাবি ভারতের

ছবি: সংগৃহীত

পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনী ড্রোন ও অন্যান্য অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ ব্যবহার করে বৃহস্পতিবার রাত ও শুক্রবার ভোরের আগে ভারতের পশ্চিম সীমান্তজুড়ে একাধিক হামলা চালালেও তা প্রতিহত করা হয়েছে বলে দাবি করেছে নয়া দিল্লি।

শুক্রবার, ০৯ মে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়।  

এতে বলা হয়, নয়া দিল্লির এ দাবি পারমাণবিক শক্তিধর দুই দক্ষিণ এশীয় প্রতিবেশীর মধ্যে সংঘাতের তীব্রতা বাড়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে।

গত মাসে ভারতের কাশ্মীরে বেসামরিক পর্যটকদের ওপর ভয়াবহ এক হামলার বদলায় বুধবার নয়া দিল্লি পাকিস্তানের একাধিক স্থানে তাদের ভাষায় ‘সন্ত্রাসী আস্তানায়’ আঘাত হানলে দুই দেশের মধ্যে নতুন সংঘাত শুরু হয়।

ভারত কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলায় পাকিস্তানের ইন্ধন দেখলেও ইসলামাবাদ তা অস্বীকার করেছে। বুধবার ‘সন্ত্রাসী আস্তানায় হামলার’ ভারতীয় দাবি উড়িয়ে পাকিস্তান বলেছে, ভারত তাদের সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত করেছে, যার ‘সমুচিত জবাব’ দেওয়া হবে।

এরপর দুই দেশই একে অপরের বিরুদ্ধে সীমান্তে গোলাবর্ষণ এবং ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার অভিযোগ এনেছে। দুইদিনের সংঘাত এরই মধ্যে দুই দেশের প্রায় অর্ধশত মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে।

১৯৯৯ সালে কারগিলে নয়া দিল্লি ও ইসলামাবাদ সীমিত সংঘাতে জড়ানোর পর গত ২৬ বছরে দুই প্রতিবেশীর মধ্যে এমন রক্তক্ষয়ী সংঘাত আর হয়নি। ১৯৭১ সালের পর এবারই প্রথম ভারত পাকিস্তানের মূল ভূখণ্ডে হামলা চালিয়েছে।

ভারতীয় সেনাবাহিনী বলছে, বৃহস্পতিবার রাতভর পাকিস্তানি সেনারা কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখাজুড়ে ‘অগণিতবার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে।’

“ড্রোন হামলা কার্যকরভাবে প্রতিহত করা হয়েছে এবং যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের উপযুক্ত জবাব দেওয়া হয়েছে। সব অপতৎপরতার জবাব শক্তি দিয়েই দেওয়া হবে,” বলেছে তারা।

এদিকে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ বলেছে, বৃহস্পতিবার রাতে ও শুক্রবার ভোরের আগে ‘একদল সন্ত্রাসীর ভারতে অনুপ্রবেশ চেষ্টাও ঠেকিয়ে দিয়েছে তারা, তাদের গুলিতে ৭ ‘সন্ত্রাসী’ নিহতও হয়েছে।

‘সন্ত্রাসীদের অনুপ্রবেশ চেষ্টার’ সময় পাকিস্তানি রেঞ্জার্সরা গুলি চালিয়ে ভারতীয় সীমান্তরক্ষীদের নজর অন্যদিকে সরিয়ে রাখতে চেয়েছিল, কিন্তু তাতেও তারা ব্যর্থ হয়েছে, বলছে বিএসএফ।

জম্মু ও কাশ্মীরের সাম্বা সেক্টর দিয়ে এই অনুপ্রবেশ চেষ্টা হয়; ভারতীয় বাহিনীর হামলায় পাকিস্তানি একটি সামরিক চৌকি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলেও দাবি করেছে বিএসএফ।

“সতর্ক থাকা বিএসএফ সদস্যরা অনুপ্রবেশ চেষ্টা ঠেকিয়েছে, অন্তত ৭ সন্ত্রাসীকে হত্যা এবং ধানদারের পাকিস্তানি চৌকির ব্যাপক ক্ষতিসাধন করেছে,” বলেছে তারা।

পাকিস্তানি তথ্যমন্ত্রী ভারতীয় এসব ভাষ্যকে ‘ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর’ অভিহিত করে প্রত্যাখ্যান করেছেন।

ইসলামাবাদ ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর বা তার বাইরে ভারতের কোথাও কোনো ধরনের ‘আক্রমণাত্মক কর্মকাণ্ড’ পরিচালনা করেনি বলেও দাবি তার।

পাকিস্তান এর আগে ভারতের পাঞ্জাবের পাঠানকোট, কাশ্মীরের শ্রীনগর ও রাজস্থানের জয়সালমিরে হামলার অভিযোগও প্রত্যাখ্যান করেছে।

এসব অভিযোগ ‘ভিত্তিহীন’ ও ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলেছে তারা।

উরি এলাকায় শুক্রবারও পাকিস্তান গোলাবর্ষণ করেছে বলে অভিযোগ করেছে ভারতীয় বাহিনী।

“উরি সেক্টরে গোলাবর্ষণের ফলে বেশ কয়েকটি ঘরে আগুন ধরে গেছে, সেগুলোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। রাতভর গোলাবর্ষণে এক নারী নিহত ও তিনজন আহত হয়েছেন,” বলেছেন নাম প্রকাশে রাজি না হওয়া ভারতীয় বাহিনীর এক কর্মকর্তা।

সীমান্তবর্তী শহর অমৃতসরে শুক্রবারও দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে সাইরেন বেজেছে। এই শহরেই শিখদের কাছে অতি পবিত্র স্বর্ণমন্দির অবস্থিত। কর্তৃপক্ষ শহরটির বাসিন্দাদের ঘরের মধ্যে থাকতে অনুরোধ করেছে।

সংঘাত ও ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে শহরটিতে পর্যটকের সংখ্যাও অনেক কমে গেছে বলে হোটেলগুলো জানাচ্ছে।

“আমরা থাকতেই চেয়েছিলাম, কিন্তু বিকট শব্দ, সাইরেন আর ব্ল্যাকআউটের কারণে ঘুমহীন রাত কাটাতে হচ্ছে। এদিকে বাড়িতে পরিবারের সদস্যরাও বেশ উদ্বিগ্ন তাই একটা ক্যাব ভাড়া করেছি, এখন চলে যাচ্ছি,” বলেছেন নাম বলতে না চাওয়া এক ব্রিটিশ নাগরিক।

পশ্চিম সীমান্তের অনেক এলাকায় এখনও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা জারি রেখেছে ভারত। গুজরাটের ভুজ শহর কর্তৃপক্ষ বলেছে, পাকিস্তান সীমান্ত থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নিতে ট্যুরিস্ট বাস প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

রাজস্থানের মরুভূমিময় বিকানের এলাকার সব স্কুল ও কোচিং সেন্টার বন্ধ রয়েছে; পাকিস্তান সীমান্তবর্তী এলাকার লোকজন বলেছেন, তাদেরকে দূরে কোথাও নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে বলা হয়েছে। তারা এখন আত্মীয়-স্বজনের বাসা বা সরকারি আশ্রয়স্থলে চলে যাওয়ার কথা ভাবছেন।

জম্মুর শের-ই-কাশ্মীর ইউনিভার্সিটি অব এগ্রিকালচার, সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির শিক্ষার্থী আনসাব জানান, তিনি রাতভর বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। এরমধ্যে ৪টার দিকের বিস্ফোরণ ছিল ‘ব্যাপক ভয়াবহ ও বিকট শব্দের।’

“দুই থেকে তিন মিনিট ধরে এই বিকট শব্দ শোনা গেছে, জানালাগুলো এমনভাবে কাঁপছিল যেন ভেঙে যাবে। চারপাশ ধোঁয়াটে হয়ে গিয়েছিল,” বলেছেন তিনি।

দুই পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রকে ‘শান্ত হতে’ আহ্বান জানিয়েছে বিশ্বের সব পরাশক্তি। বৃহস্পতিবার মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সও ভারত-পাকিস্তানকে উত্তেজনা নামিয়ে আনতে বলেছেন।

Link copied!