৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের আকস্মিক হামলার পর থেকে হামাস-ইসরায়েল পাল্টাপাল্টি হামলা অব্যাহত রয়েছে। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে¸ গতরাতে (১১ অক্টোবর) গাজায় ইসরায়েলি বোমা হামলায় কমপক্ষে ৫১ জন নিহত হয়েছে। ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর দেশটিতে এখনো পর্যন্ত ১২০০ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আর এর জবাবে ইসরায়েলি বিমান হামলায় গাজাতেও ১২০০ মানুষ নিহত হয়েছে।
হামাস-ইসরায়েল সংঘাতে এ পর্যন্ত যা যা ঘটেছে-
গাজার মানবিক পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হচ্ছে
অব্যাহতভাবে ইসরায়েলি বিমান হামলা এবং অবরোধের মধ্যে থাকার পর গাজার মানবিক পরিস্থিতি ক্রমে মরিয়া হয়ে উঠছে।
গাজার বেশিরভাগ হাসপাতালে জ্বালানি সংকট দেখা দিয়েছে। জেনারেটর দিয়ে চলছে এসব হাসপাতালগুলো। উপরন্তু আগামী কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তাদের জ্বালানি ফুরিয়ে যেতে পারে। গাজা উপত্যকার একমাত্র বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি জ্বালানির অভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
একারণে রেডক্রস সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, জ্বালানি সংকটের কারণে গাজার হাসপাতালগুলো মর্গে বা মৃতদেহ রাখার স্থানে পরিণত হয়ে উঠতে পারে। হাসপাতালগুলো হাজার হাজার আহত রোগীতে পূর্ণ হয়ে গেছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাদের ওষুধও শেষ হয়ে আসছে।
গাজার বেশিরভাগ বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় ইসরায়েল থেকে। হামাসের হামলার পর বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েল। গতকাল জ্বালানি শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে গাজার একমাত্র বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে গেছে। যার কারণে গাজার লাখো বাসিন্দা বিদ্যুৎ বিহীন হয়ে পড়েছেন।
এদিকে জিম্মিদের মুক্তি না দেয়া পর্যন্ত গাজায় বিদ্যুৎ, জ্বালানি বা পানি দেয়া হবে না বলে পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে ইসরায়েল। ধারণা করা হচ্ছে, অন্তত দেড়শ মানুষকে হামাস সদস্যরা অপহরণ করে নিয়ে গেছে।
শুধু বিদ্যুৎ নয় হামাসের হামলার পর খাদ্য ও পানিসহ দৈনন্দিন বিভিন্ন পণ্যের সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েল।
গাজা উপত্যকায় ত্রাণ এবং ওষুধ সরবরাহ করার জন্য নিরাপদ করিডর দেয়ার বিষয়ে ইসরায়েলের উপর বৈশ্বিক চাপ বাড়ছে। একই সাথে ফিলিস্তিনিদের নিরাপদে গাজা ত্যাগের করিডর দেয়ারও দাবি উঠেছে।
জাতিসংঘের তথ্যমতে, গাজায় কমপক্ষে তিন লাখ ৩৮ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
গাজার ভূগর্ভস্থ টানেলে ইসরায়েলের বিমান হামলা
জোনাথন কারিকাস নামে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক মুখপাত্র বলেছেন, বিশ বছর আগে গাজার নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর থেকে হামাস গাজা শহর এবং সেখান থেকে খান ইউনুছ হয়ে রাফাহ পর্যন্ত টানেলের একটা বিশাল নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে।
তিনি বলেন, ‘গাজা শহরে দুটি স্তর রয়েছে। উপরের স্তরে সাধারণ মানুষ বসবাস করেন। আর ভূগর্ভস্থ স্তরে বাস করে হামাসের সদস্যরা। এখন আমরা হামাসের তৈরি করা সেই দ্বিতীয় স্তরে যাওয়ার চেষ্টা করছি’।
সীমান্তে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করেছে ইসরায়েল
নিয়মিত সৈন্যের পাশাপাশি তিন লাখের মতো সংরক্ষিত সৈন্য গাজা সীমান্তে জড়ো করেছে ইসরায়েল। আরও সৈন্য আনা অব্যাহত রেখেছে তারা।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর একজন মুখপাত্র বিবিসিকে বলেন, ‘এখন গাজার ভেতরে অভিযান চালানো হবে কিনা, সেই বিষয়ে এখনো কোন রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত আসেনি। তবে যেকোনো পরিস্থিতিতে যুদ্ধ করার জন্য সম্ভাব্য সব বিকল্প বিবেচনায় রেখে প্রস্তুতি নিচ্ছি আমরা। গাজার পাশাপাশি লেবানন সীমান্তেও সেনা মোতায়েন করা হচ্ছে’।
শুধু মিশরের অংশ ছাড়া গাজাকে তিনদিকে ঘিরে রেখেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। ইসরায়েলের সাথে গাজার সীমান্ত পয়েন্টগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সাগরের দিকেও পাহারা দিচ্ছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
অনুমতি ও দীর্ঘ লাইনের বিড়ম্বনা সহ্য করে শুধু মিশরের রাফাহ ক্রসিং থেকে গাজায় প্রবেশ করা যাচ্ছে।
মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) সেখানেও বিমান হামলা করেছিল ইসরায়েলি বাহিনী। এরপর থেকে ওই ক্রসিং বন্ধ বা সীমিত চলাচল অবস্থায় রয়েছে।
যুদ্ধকালীন সরকার গঠন করেছে ইসরায়েল
হামাস-ইসরায়েল সংঘাতের মধ্যেই বিরোধী দলকে সাথে নিয়ে যুদ্ধকালীন সরকার গঠন করেছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
রাজনৈতিক বৈরিতা ভুলে বিরোধীদলীয় নেতা বেনি গাৎজকে সাথে নিয়ে বুধবার তিনি যুদ্ধকালীন সরকার গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন।
বেনি গাৎজ বলেছেন, সরকার এবং নিরাপত্তা বাহিনীকে বিরোধী দলগুলো পুরোপুরি সমর্থন দিয়ে যাবে।
দুই প্রতিদ্বন্দ্বী ইরানের প্রেসিডেন্ট ও সৌদি যুবরাজের বিরল টেলিফোন আলাপ
ইসরাইল-গাজা সংঘাত নিয়ে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ও সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান বুধবার টেলিফোনে আলোচনা করেছেন। তেহরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম এই খবর দিয়েছে।
দীর্ঘ সময় ধরে চলা আসা বৈরি সম্পর্কের পর দুই বছর আগে চীনের মধ্যস্থতায় দেশ দুটির মাঝে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়। এই মধ্যস্থতার পর ফিলিস্তিন ইস্যূতে প্রথমবার এই ধরনের টেলিফোন আলাপের কথা প্রকাশ্যে জানা গেল।
ইরানের গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, “প্রেসিডেন্ট রাইসি ও যুবরাজ মোহাম্মদ ‘ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ বন্ধের প্রয়োজনীয়তা’ নিয়ে আলোচনা করেছেন”।
‘বর্তমান উত্তেজনা নিরসন করতে আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক সব পক্ষের সঙ্গে সব রকমের যোগাযোগ করছে সৌদি আরব’। সৌদি যুবরাজের বরাত দিয়ে সৌদি রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা এসপিএ একথা জানিয়েছে।
মার্কিন জিম্মিদের মুক্তির দাবি থাকবে ব্লিঙ্কেনের আলোচনায়
বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) ইসরায়েলে পৌঁছেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। সেখানে তিনি বর্তমান সংঘাতের অবসান নিয়ে আলোচনা করবেন বলে জানা গেছে। তবে ব্লিঙ্কেন এখনও পর্যন্ত কোন যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাননি।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পরিষ্কার বার্তা হলো, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের সঙ্গে রয়েছে, সেটা আজ, আগামীকাল এবং ভবিষ্যতেও।
এই সফরে ইসরায়েলি কর্মকর্তা আর ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সাথে বৈঠক করবেন অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন।
হামাসের হাতে জিম্মি মার্কিন নাগরিকদের মুক্তির বিষয়টিই ব্লিঙ্কেনের আলোচনায় বিশেষ গুরুত্ব পাবে। বেশ কয়েকজন মার্কিন নাগরিক হামাসের হাতে জিম্মি রয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। তবে কীভাবে তাদের উদ্ধার করা হবে, সেই সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি।
হামাসের সশস্ত্র সদস্যরা শিশুদের শিরোচ্ছেদ করছে এমন ছবি দেখেছেন বলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যে দাবি করেছিলেন- সে বিষয়ে মন্তব্য করেছে হোয়াইট হাউজ। তারা জানিয়েছে, বাইডেন আসলে এ ধরনের কোন ছবি দেখেননি।