নভেম্বর ২১, ২০২৪, ০৮:৫২ এএম
ভারতের ধনকুবের গৌতম আদানির বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
৬২ বছর বয়সী ধনকুবের আদানির বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ভারতের সরকারি কর্মকর্তাদের ২৫ কোটি মার্কিন ডলার ঘুষ দিয়েছিলেন। এমনকি তথ্যটি তিনি বিনিয়োগকারীদের কাছে গোপন রেখে এ বিষয়ে মিথ্যা বলেছিলেন।
বুধবার, ২১ নভেম্বর নিউইয়র্কে এসব ফৌজদারি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ এই ধনকুবেরের বিরুদ্ধে।
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, গ্রিন এনার্জি যুক্তরাষ্ট্র থেকে, আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে বিনিয়োগের অর্থ সংগ্রহ করার চেষ্টা করে আদানি গ্রুপ। এ জন্য তারা বন্ড ছাড়ে। এক্ষেত্রে তারা প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতিবিরোধী ও ঘুষবিরোধী প্রচেষ্টার বিষয়ে মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর তথ্য-উপাত্ত দিয়েছিল।
এ বিষয়ে এক বিবৃতিতে ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি ব্রিয়ন পিস জানান, অভিযুক্ত ব্যক্তিরা ঘুষের বিষয়ে মিথ্যা বলেছিলেন। তারা যুক্তরাষ্ট্র থেকে, আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে বিনিয়োগের মূলধন সংগ্রহ করতে চেয়েছিলেন।
এই অভিযোগে গৌতম আদানি ছাড়াও সাতজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে সাগর আদানি ও আদানি গ্রিন এনার্জির সাবেক সিইও ভিনেত এস জেইন উল্লেখযোগ্য।
এদিকে গৌতম আদানি ও সাগর আদানির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে বলেও জানা গেছে। এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে তাৎক্ষণিকভাবে গৌতম আদানির আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে সাগর আদানির আইনজীবী এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান হিনডেনবার্গ রিসার্চ আদানির বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এরপর থেকে এই মেগা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রে অনেকটা গোপনে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করছে।
প্রসিকিউটররা জানিয়েছেন, ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্র আদানির এই কোম্পানিতে অনুসন্ধান শুরু করেছিলো। কিন্তু তারা এতে বাধাগ্রস্ত হয়। তারা অভিযোগ করেছেন কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলো থেকে তিন বিলিয়ন ডলারের ঋণ ও বন্ড সংগ্রহ করেছেন।
ঘুষের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠানটির ঘুষবিরোধী অনুশীলন এবং নীতি সম্পর্কে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর বিবৃতিও দেয়া হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি ব্রায়ান পিস এক বিবৃতিতে অভিযোগ করে বলেছেন, “অভিযুক্ত হিসাবে আসামীরা বিলিয়ন ডলার মূল্যের চুক্তি সুরক্ষিত করার জন্য ভারতীয় সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুষ দেয়ার জন্য একটি বিস্তারিত স্কিম সাজিয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্র এবং আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে মূলধন সংগ্রহ করার জন্য ঘুষের স্কিম নিয়ে মিথ্যা কথা বলেছিল।”
আরও বলেন, “আমার অফিস আন্তর্জাতিক আর্থিক বাজার থেকে দুর্নীতির শেকড় উপড়ে ফেলতে প্রতিশ্রুতি-বদ্ধ। আমাদের আর্থিক বাজারের যে উচ্চ নৈতিক মান রয়েছে সেটিকে জলাঞ্জলি দিয়ে যারা অর্থ উপার্জন করতে করতে চায় তাদের হাত থেকে বিনিয়োগকারীদের রক্ষা করতেও আমরা প্রতিশ্রুতি-বদ্ধ।”
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঘুষের স্কিম আরো এগিয়ে নিতে বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানে আদানি ব্যক্তিগতভাবে সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে দেখা করেছেন।
গত বছর জানুয়ারিতে এক সপ্তাহেই প্রায় ২৫০০ কোটি ডলারের ব্যক্তিগত ধনসম্পদ উধাও হয়ে যায় আদানির। সে সময় নিউইয়র্ক-ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান হিনডেনবার্গ রিসার্চের বিতর্কিত এক রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার পর গৌতম আদানির মালিকানাধীন বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারের মূল্যে ধস নামে।
বিনিয়োগ সংক্রান্ত গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিনডেনবার্গ রিসার্চ গতবছর তাদের রিপোর্টে আদানির বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে “কর্পোরেট জগতের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ধোঁকাবাজির” অভিযোগ করেছে।
নিউ ইয়র্ক-ভিত্তিক এই কোম্পানির “শর্ট-সেলিং” এর ব্যাপারে বিশেষত্ব রয়েছে। এই পদ্ধতিতে কোনো কোম্পানির শেয়ারের মূল্য পড়ে গেলে, সুবিধা অর্জনের জন্য, ওই শেয়ারের ব্যাপারে আর্থিক অবস্থান নিয়ে থাকে।
হিনডেনবার্গ রিসার্চের রিপোর্টে মরিশাস এবং ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের মতো বিভিন্ন ট্যাক্স হেভেনে বিভিন্ন কোম্পানিতে আদানি গ্রুপের মালিকানা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
রিপোর্টেও এও দাবি করা হয় যে আদানি গ্রুপের বিভিন্ন কোম্পানির “উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ঋণ” রয়েছে - যা পুরো গ্রুপটির আর্থিক ভিত্তিকে নড়বড়ে করে তুলেছে।
প্রতিবেদনে আরো অভিযোগ করা হয় যে ভারতে লেনদেন হওয়া শেয়ারের মূল্য নিজেদের পক্ষে নির্ধারণ করার জন্য এসব অফশোর কোম্পানিগুলোকে ব্যবহার করা হয়েছে।
সেই সময় আদানি গ্রুপ অত্যন্ত ক্ষোভের সঙ্গে এই রিপোর্টের প্রতিবাদ জানিয়েছে। একই সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগও তারা অস্বীকার করেছে।
গৌতম আদানি এই হিনডেনবার্গ রিসার্চের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দিয়েছেন। এর পরপরই হিনডেনবার্গ তাদের প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছে যে তারা এবিষয়ে আদালতে লড়াই করতে প্রস্তুত।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ঠ সহযোগী ধনকুবের আদানি। বিরোধী দলের রাজনীতিবিদরা দীর্ঘদিন ধরেই দাবি করে আসছিলো আদানি তার রাজনৈতিক সম্পর্কের কারণে উপকৃত হচ্ছেন। যদিও তিনি তা অস্বীকার করেন।
যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার মাত্র কয়েক সপ্তাহ পরেই এই অভিযোগটি দায়ের করা হয়েছে।
এদিকে গত সপ্তাহে গৌতম আদানি নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। একই সাথে যুক্তরাষ্ট্রে ১০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করার প্রতিশ্রুতিও দেন।