ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে রাশিয়ার সাথে একীভূত হচ্ছে বেলারুশ!

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জুলাই ৩, ২০২২, ০৪:৪৪ পিএম

ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে রাশিয়ার সাথে একীভূত হচ্ছে বেলারুশ!

চলমান সামরিক অভিযানে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার অন্যতম মিত্র প্রতিবেশী দেশ হলো বেলারুশ। এই দুই দেশের সঙ্গে ইউক্রেনের দীর্ঘ স্থল সীমান্ত রয়েছে। কিন্তু রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, নজিরবিহীন ও সামাজিক চাপের ফলে বেলারুশ ও রাশিয়াকে একত্রীকরণের দিকে ঠেলে দিচ্ছে পশ্চিমারা।

বিভিন্ন ক্ষেত্রে মিল থাকায় স্বাধীন হওয়ার পরও রাশিয়া সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখে বেলারুশের সাথে। গত ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে দেশ দুটি একটি কনফেডারেশনের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করে আসছে। দেশ দুটির একীভূত হওয়ার ব্যাপারে ১৯৯৭ সালে চুক্তিও হয়েছিল।

১৯৯৭ সালে মিনস্ক-মস্কোর 'ইউনিয়ন ট্রিটি'-তে বলা হয়েছিল দেশ ২টি স্বাধীন থাকবে। তবে দুই দেশের নাগরিকরা যেকোনো দেশে বসবাসের পাশাপাশি সে দেশের নাগরিকত্ব নিতে পারবেন। এর মাধ্যমে সোভিয়েত ভেঙে যাওয়ার ক্ষত কিছুটা হলেও পূরণ করা যাবে। তবে নানা কারণে তা সম্ভব হয়ে ওঠেনি।

এই দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর আবার রাশিয়া-বেলারুশ প্রসঙ্গটি সামনে এলো রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের 'একত্রীকরণ' মন্তব্যের মধ্য দিয়ে।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত শুক্রবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জানান, পশ্চিমের চলমান নিষেধাজ্ঞা রাশিয়া ও বেলারুশের 'একত্রীকরণ'কে ত্বরান্বিত করছে।

আল-জাজিরার প্রতিবেদন অনুসারে, এক ফোরামে রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, “পশ্চিমের দেশগুলোর 'অপ্রত্যাশিত রাজনৈতিক ও সামাজিক চাপ' এবং তাদের ক্রমবর্ধমান নিষেধাজ্ঞা বেলারুশকে দ্রুত রাশিয়ার সঙ্গে মিশে যেতে 'উদ্বুদ্ধ' করেছে।”

ভ্লাদিমির পুতিন মনে করেন, রাশিয়ার সঙ্গে বেলারুশ 'মিশে' গেলে পশ্চিমের দেশগুলোর 'অবৈধ' নিষেধাজ্ঞার ক্ষতি অনেকটা পুষিয়ে নেওয়া যাবে। তারা এক হয়ে বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে পারবে। নতুন কর্মদক্ষতার সুযোগ তৈরি হবে।

ইউক্রেন যুদ্ধে বেলারুশকে ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করছে রাশিয়া-এমন অভিযোগ থাকলেও বেলারুশ তা অস্বীকার করেছে। ২০২০ সালে বেলারুশে বড় ধরনের সরকারবিরোধী বিক্ষোভ হয়। ওই সময় দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপক চাপের মুখে পড়ে অ্যালেক্সান্ডা লুকাশেঙ্কো সরকার। তবে ওই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল পুতিন প্রশাসন।

এদিকে গত রবিবার বেলারুশের প্রেসিডেন্ট লুকাশেঙ্কো রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবুর্গ সফর করেন। সে সময় পুতিনের সঙ্গে দেখা করেন তিনি। সেই বৈঠকে পুতিন বলেন, “খুব অল্প সময়ের মধ্যেই রাশিয়া বেলারুশকে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করবে।”

প্রসঙ্গত, ১৯৯০ সালের জুলাইয়ে বেলারুশ স্বাধীন হওয়ার প্রায় ৫ বছর পর দেশটিতে ক্ষমতায় আসেন সোভিয়েত বাহিনীর সাবেক রাজনৈতিক প্রশিক্ষক আলেক্সান্ডার লুকাশেনকো। বেলারুশে তিনি প্রায় ২৭ বছর ধরে ক্ষমতায় আছেন।

২০২০ সালে নির্বাচনের বিজয়ী হয়ে আবার ক্ষমতায় আসেন লুকাশেনকো। তবে ওই নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগে তার সরকারের বিরুদ্ধে গণআন্দোলন শুরু হয়। ওই সময় আলেক্সান্ডার লুকাশেনকো কঠোর হাতে তা দমন করেন। আর তার বিতর্কিত ভূমিকাকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় নিন্দা জানালেও প্রকাশ্য সমর্থন দেয় ক্রেমলিন। আর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে উঠলে পুতিনের সঙ্গে লুকাশেনকো।

Link copied!