চিঠিটি আসার একদিন পরেই অনাস্থা প্রস্তাব আনেন তারা: ইমরান খান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

মার্চ ৩১, ২০২২, ০৫:৪০ পিএম

চিঠিটি আসার একদিন পরেই অনাস্থা প্রস্তাব আনেন তারা: ইমরান খান

পাকিস্তানের বর্তমান সরকার হটানোর জন্য বিদেশী ষড়যন্ত্রের বিষয়ে আরও খোলাসা করে তথ্য দিয়েছে দেশটির সরকার। রবিবার  ইসলামাবাদে  তেহরিক-ই-ইনসাফের বিশাল সমাবেশে দলটির নেতা ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান দাবি করেন, পার্লামেন্টে উত্থাপিত বিরোধিদের অনাস্থা প্রস্তাব মূলত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিদেশী ষড়যন্ত্রের অংশ। প্রমাণ হিসেবে একটি চিঠি পাওয়ার কথাও জানান ইমরান।  তবে চিঠির বিষয়ে সমাবেশে বিস্তারিত জানাননি ইমরান খান। 

রবিবার ইসলামাবাদে দলীয় জনসভায় ভাষণ দেন ইমরান খান।

পাকিস্তানের শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ডন’র প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই চিঠিটি দেশের প্রধান বিচারপতির কাছে উপস্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয় সরকারের উচ্চ পর্যায়। কিন্তু পরবর্তিতে ওই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে সরকার। প্রধান বিচারপতির কাছে ওই চিঠি উপস্থাপন না করে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান মন্ত্রিসভার সদস্যদের বিস্তারিত জানান। যেহেতু এ ধরণের কূটনৈতিক পর্যায়ের চিঠি প্রকাশের ক্ষেত্রে আইনে বাধা থাকে, তাই মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকের সময় কয়েকজন সাংবাদিককে চিঠির বিষয়ে কিছু তথ্য দেওয়া হয়। 

ডনের প্রতিবেদনে বলা হয়, একটি তার বার্তার মাধ্যমে মূলত পাকিস্তানের পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটটি উত্থাপন করতে বলা হয়। চিঠিটি কোন দেশ থেকে দেওয়া হয়েছে সে বিষয়ে সরাসরি কিছু বলা হয়নি। তবে পাকিস্তানি এক রাষ্ট্রদূতকে বিদেশি একজন সিনিয়র কর্মকর্তা ইমরান খানের ব্যাপারে হুশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, সম্প্রতি ইমরান খানের রাশিয়া সফর নিয়ে তাদের আপত্তি রয়েছে। এছাড়া আরও বলা হয়েছে, পাকিস্তানের সাথে ওই দেশটির সম্পর্ক ভবিষ্যতে কেমন হবে, তা নির্ধারণ করবে পাকিস্তানের পার্লামেন্টে উত্থাপন করা অনাস্থা ভোটের ফল। অনাস্থায় ইমরানের সরকার টিকে গেলে মারাত্বক পরিণতি হতে পারে বলে ওই চিঠিতে সতর্ক করা হয়। 

তবে চিঠিটি যে দেশ থেকে পাঠানো হয়েছে উচ্চ পর্যায়ের সুত্রের সঙ্গে আলোচনা করে তার একটি ইঙ্গিত দিয়েছে পাকিস্তানের গণমাধ্যম ডন। গত ৭ মার্চ ওই তার বার্তাটি পাঠানো হয়। এর একদিন পরই পার্লামেন্টে  অনাস্থা প্রস্তাব আনেন পাকিস্তানের বিরোধী দল।  মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত (বর্তমানে বেলজিয়ামে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত) আসাদ মজিদ ওই তার বার্তাটি পাঠিয়েছেন। দক্ষিণ এবং মধ্য এশিয়া বিষয়ক মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোলান্ড লু এর সঙ্গে বৈঠকের পর ওই তার বার্তাটি পাঠানো হয়।

ছবিতে আসাদ মজিদ এবং ডোনাল্ড লু

মজিদ এবং লু এর মধ্যকার বৈঠক নিয়ে ইসলামাবাদ এবং ওয়াশিংটনের মধ্যে কূটনৈতিক পর্যায়ে বিতর্ক চলছে। পাকিস্তানের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ওই বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান অনেকটা কঠোর ছিলো। সম্প্রতি ইউক্রেনে পাকিস্তানের অন্যতম মিত্র দেশ রাশিয়া হামলা শুরুর কয়েকদিনের মাথায় মস্কো সফরে যান ইমরান খান। আর রাজনৈতিক অবস্থানে সামরিক পরাশক্তি রাশিয়াই এখন যুক্তরাষ্ট্রের মাথা ব্যাথার একমাত্র কারণ।

যদিও চিঠির বিষয়টি অস্বীকার করেছে হোয়াইট হাউজ। তবে, মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট জানিয়েছে, ইমরানের ওই সফরে খুশি ছিলো না যুক্তরাষ্ট্র। এজন্য সফরের প্রাক্কালে সফর বাতিল করতে কূটনৈতিক তৎপরতা চালানো হয়েছিলো। এরপর ১ মার্চ ইসলামাবাদে নিযুক্ত পশ্চিমা কূটনৈতিকরা একটি বিবৃতির মাধ্যমে একযোগে পাকিস্তানের প্রতি আহবান জানিয়েছিলো, ইউক্রেনের হামলার কারণে পুতিনের বিরুদ্ধে নিন্দা জানাতে এবং জাতিসংঘে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ভোট দিতে। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে রাশিয়ার বিরুদ্ধে উত্থাপিত নিন্দা প্রস্তাবে ভোট দানে বিরত থাকে পাকিস্তান এবং কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে সংকট সমাধানের আহবান জানায় দেশটি। এছাড়া ইমরানের পররাষ্ট্র নীতি নিয়ে মার্কিনীরা সন্তুষ্ট নন।

আগামী ৩ এপ্রিল পাকিস্তানের পার্লামেন্টে ইমরানের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অনাস্থা প্রস্তাবের বিষয়ে ভোট হতে যাচ্ছে।

Link copied!