তুরস্ক-সিরিয়ায় ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি হবে: জাতিসংঘ

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৩, ১২:৩৪ এএম

তুরস্ক-সিরিয়ায় ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি হবে: জাতিসংঘ

তুরস্ক ও সিরিয়ার সীমান্তে শতাব্দীর প্রলয়ংকরী ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ২৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন বহু মানুষ। ক্রমেই নিভে যাচ্ছে আশার আলো। ধ্বংসস্তূপ সরানোর সাথে সাথে বেরিয়ে আসছে মৃতদেহ। এমন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের পর জাতিসংঘের জরুরি ত্রাণবিষয়ক সমন্বয়কারী মার্টিন গ্রিফিথস বলছেন, ভূমিকম্পে দেশ দুটিতে মোট মৃত্যু বর্তমান সংখ্যার দ্বিগুণের বেশি হবে।

এদিকে ভূমিকম্প এলাকার ভূখণ্ডে দুটি ফাটলের সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। স্যাটেলাইট চিত্র থেকে দেখা গেছে, এর মধ্যে একটি ফাটল ৩০০ কিলোমিটার লম্বা। আরেকটি ফাটলের দৈর্ঘ্য ১২৫ কিলোমিটার। বিজ্ঞানীরা বলছেন, সোমবার তুরস্ক ও সিরিয়ায় আঘাত হানা ভূমিকম্প কতটা শক্তি নির্গত করেছিল, ফাটলগুলো তার প্রমাণ।

ফাটলগুলোর সন্ধান পেয়েছেন যুক্তরাজ্যের সেন্টার ফর দ্য অবজারভেশন অ্যান্ড মডেলিং অব আর্থকুয়াকস, ভলকানোস অ্যান্ড টেকটোনিকসের (কমেট) বিজ্ঞানীরা। সেন্টিনেল-১ নামের একটি স্যাটেলাইট থেকে ভূমিকম্পের আগে ও পরে তোলা ছবি যাচাই করে ফাটল দুটি খুঁজে বের করেছেন তারা।

সোমবার তুরস্ক ও সিরিয়ায় শক্তিশালী দুটি ভূমিকম্প আঘাত হানে। সেদিন ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে আঘাত হানা ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৮। এর ৯ ঘণ্টা পরে ৭ দশমিক ৫ মাত্রার আরেকটি ভূমিকম্প হয়।

শুক্রবার এক টুইট বার্তায় কমেট জানায়, দুটি ফাটলের মধ্যে বড়টি ভূমধ্যসাগরের উত্তর-পূর্ব প্রান্ত থেকে আরও উত্তর-পূর্বে ৩০০ কিলোমিটার পর্যন্ত গিয়েছে। দ্বিতীয় ফাটলটি ১২৫ কিলোমিটার। ৭ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্পটি আঘাত হানার সময় এ ফাটল সৃষ্টি হয়।

ফাটল দুটি নিয়ে কমেটের প্রধান টিম রাইট বলেন, ভূমিকম্পের ফলে সৃষ্টি হওয়া ফাটলটি দৈর্ঘ্যের দিক দিয়ে একটি রেকর্ড। আর মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে পরপর দুটি শক্তিশালী ভূমিকম্প হওয়ার বিষয়টিও অস্বাভাবিক।

তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্পের অনেক ছবি ও ভিডিও ইন্টারনেটে প্রকাশ করেছেন উপদ্রুত অঞ্চলের মানুষ। সেখানেও ভূখণ্ডে দীর্ঘ ফাটল দেখা গেছে। কমেট জানিয়েছে, ওই ফাটলগুলোই মহাকাশ থেকে সেন্টিনেল-১ স্যাটেলাইট ধারণ করেছে।

সেন্টিনেল-১ ফাটলের ছবিগুলো তুলেছে শুক্রবার সকালে। এ সময় সেটি ভূপৃষ্ঠের ৭০০ কিলোমিটার ওপর দিয়ে তুরস্কের উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে যাচ্ছিল। সেন্টিনেল-১ দিন ও রাতের যেকোনো সময় ভূপৃষ্ঠের ছবি তুলতে পারে। এ ছাড়া ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলগুলো খতিয়ে দেখে সেটি।

নিহতের সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি হবে

ভূমিকম্পের ভয়াবহতা নিয়ে জাতিসংঘের জরুরি ত্রাণবিষয়ক সমন্বয়কারী মার্টিন গ্রিফিথস বলছেন, ‘আমার মনে হয়, ভূমিকম্পে কত মানুষের মৃত্যু হবে, তা এখনই নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন। কারণ, ধ্বংসস্তূপগুলোতে এখনো খোঁজ চালিয়ে যেতে হবে। তবে আমি নিশ্চিত মৃত্যুর সংখ্যাটা দ্বিগুণ বা এর চেয়ে বেশি হবে।’ যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যম স্কাই নিউজের সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি এমন আশংকার কথা বলেন।

শনিবার সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্য মতে, সোমবারের ভূমিকম্পে শুধু তুরস্কে ২১ হাজার ৮৪৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর সিরিয়ায় মারা গেছেন ৩ হাজার ৫৫৩ জন। ফলে দুই দেশে মোট মৃত্যু দাঁড়িয়েছে ২৫ হাজার ৪০১ জনে। এই সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এদিকে তীব্র ঠান্ডাসহ নানা প্রতিকূলতার মধ্যে উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন উদ্ধারকর্মীরা। এখনো অনেককেই ধ্বংসস্তূপ থেকে জীবিত উদ্ধার করা হচ্ছে। 

মার্টিন গ্রিফিথস বলেন, ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো মানুষ আটকা পড়ে আছে, এটা বেদনাদায়ক। তাঁদের অনেকেই জীবিত। কোনো দুর্যোগের পর প্রথম ৭২ ঘণ্টা উদ্ধারের জন্য ‘সোনালি সময়’ ধরা হয়। সেই সময়টা পেরিয়ে গেছে। তবে এখনো যেহেতু জীবিত মানুষকে উদ্ধার করা হচ্ছে, তাই কখন উদ্ধারকাজ বন্ধ করা হবে, সে সিদ্ধান্ত নেওয়টা কঠিন।

সূত্র: গার্ডিয়ান।

 

Link copied!