জানুয়ারি ১৫, ২০২৩, ০৭:২৪ পিএম
নেপালে বিমান দুর্ঘটনা একেবারে নতুন নয়। গত এক দশকে বিশ্বের মধ্যে হিমালয় কন্যা হিসেবে খ্যাত এই দেশটিতে সবচেয়ে বেশি বিমান দুর্ঘটনা ঘটেছে। গত ১২ বছরে অন্তত ৮টি বিমান দুর্ঘটনায় যাত্রী ও ক্রু মিলে অন্তত দেড় শতাধিক নিহত হয়েছে। রবিবারের ঘটনায়ও ৭২ জন যাত্রীর সবাই মৃত বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
নেপালের মাঝ আকাশে কখনও বিমানে আগুন। কখনও অবতরণের সময় ধাক্কা খেয়ে ভেঙে পড়া। কিংবা রানওয়ে ছাড়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই পাহাড়ের বুকে হারিয়ে যাওয়া। সব মিলিয়ে ৩০ বছরে ৩০টিরও বেশি মারাত্মক বিমান দুর্ঘটনা ঘটেছে দেশটিতে। এতে প্রাণ হারিয়েছেন অনেক মানুষ। কেন বারবার এই দেশে ঘটছে বিমান দুর্ঘটনা?
নেপালে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বিমান দুর্ঘটনা
নেপাল অ্যাভিয়েশন সূত্রে জানা যায়, ১৯৪৯ সালে নেপালের মাটিতে প্রথম উড়োজাহাজ অবতরণ করে। ১৯৬২ সালের ১ আগস্ট দেশটিতে প্রথম বারের মতো বিমান দুর্ঘটনা ঘটে। রয়্যাল নেপাল এয়ারলাইন্সের ডগলাস ডিসি-থ্রি নামের বিমানটি গৌচার বিমানবন্দর থেকে ভারতেরন পালাম বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে বিধ্বস্ত হলে ৪ ক্রুসহ ১০ জনের মৃত্যু হয়। এর সাত বছর পর ১৯৬৯ সালের ১২ জুলাই একই এয়ারলাইন্সের আরেকটি বিমান বিধ্বস্ত হলে ক্রুসহ ৩১ জনের মৃত্যু হয়।
এছাড়া, দেশটির উল্লেখযোগ্য বিমান দুর্ঘটনার মধ্যে রয়েছে- ১৯৯২ সালে থাই এয়ারওয়েজের এয়ারবাস এ-থ্রিওয়ান জিরো, ১৯৯২ সালে পিআইএর এয়ারবাস এ-থ্রি জিরো জিরো, ২০০০ সালে নেপালের রয়্যাল নেপাল এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট, ২০০৬ সালে ইয়েতি এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট, ২০০৬ সালে শ্রী এয়ারের ফ্লাইট, ২০১০ সালের অগ্নি এয়ারের ফ্লাইট ওয়ান জিরো ওয়ান, ২০১০ সালে তারা এয়ারের ফ্লাইট, ২০১১ সালে বুদ্ধা এয়ারের ফ্লাইট ওয়ান জিরো থ্রি, ২০১২ সালে অগ্নি এয়ারের ফ্লাইট, ২০১২ সালে সিতা এয়ারের ফ্লাইট সিক্স জিরো ওয়ান এবং ২০১৬ সালে তারা এয়ারের ফ্লাইট ওয়ান নাইন থ্রি ইত্যাদি।
২০১৮ সালের ১২ মার্চ নেপালের কাঠমান্ডু বিমানবন্দরে বিধ্বস্ত হয় বাংলাদেশি ইউএস বাংলা এয়ারলাইনসের একটি উড়োজাহাজ। ঘটনাস্থলে নিহত হন ড্যাশ এইট উড়োজাহাজটির চার ক্রুসহ ৫১ আরোহী।এদের মধ্যে ২৬ জন বাংলাদেশি, ২৪ জন নেপালি ও একজন চীনের নাগরিক। দুর্ঘটনায় যে ২০ জন প্রাণে বেঁচে ফিরেছেন, তাদের অনেকেরই আঘাত ছিল গুরুতর।
দুর্ঘটনার কারণ:
নেপালে বারবার বিমান দুর্ঘটনার পেছনে তিনটি কারণকে দায়ি করছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রথমত, নেপালের ভূপ্রাকৃতিক গঠন। এভারেস্টসহ পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু ১৪ টি পর্বতের ৮টিই নেপালে অবস্থিত। তাছাড়া, দেশটির অবস্থান সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে সাড়ে ছয় হাজার মিটারের বেশি। একারণে বিমানে বিমান পরিষেবা দেওয়া খুবই কঠিন। অন্যদিকে, পোখরা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটির কাছাকাছি রয়েছে হিমালয়ের একাধিক শৃঙ্গ। যার কারণে দুর্ঘটনা বেশি ঘটে।
বিমান দুর্ঘটনার জন্য বিশেষজ্ঞরা দ্বিতীয় কারণ হিসেবে আবহাওয়া বা কুয়াশার দাপটকে দায়ি করেছেন। নেপাল প্রশাসনের দাবি, বিমান দুর্ঘটনার বেশিরভাগই ঘটেছে ঘন কুয়াশার জেরে। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশটির আবহাওয়া হটাৎ করেই বদলে যায় এবং বেশিরভাগ এয়ারস্ট্রিপ দুর্গম পাহাড়ি এলাকায়। এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ বিমানবন্দরগুলোতে অবতরণ করতে অত্যন্ত চৌকস ও অভিজ্ঞ বৈমানিকদেরও বেগ পেতে হয়। শীতকালে দৃশ্যমানতা কমে যাওয়ায় অনেক সময়ই বিমান ওড়ার সময় সোজা গিয়ে ধাক্কা মারে পাহাড়ের গায়ে।
নেপালের অর্থনীতিকে দেখছেন বিমান দুর্ঘটনার তৃতীয় কারণ হিসেবে। কাঠমান্ডুর আর্থিক অবস্থা ভাল না হওয়ায় মেয়াদ উত্তীর্ণ বিমান চালানোর অভিযোগ রয়েছে। এর জেরেও দুর্ঘটনা ঘটছে বলে দাবি বিশেষজ্ঞদের।