পিএইচডি, মাস্টার্স ডিগ্রি মূল্যহীন: নতুন তালেবান শিক্ষামন্ত্রী

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

সেপ্টেম্বর ৮, ২০২১, ০৭:০৭ পিএম

পিএইচডি, মাস্টার্স ডিগ্রি মূল্যহীন: নতুন তালেবান শিক্ষামন্ত্রী

আফগানিস্তানে নতুন তালিবান সরকার গঠনের পরই তালেবান শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। বুধবার (৮ সেপ্টেম্বর) নতুন আফগান শিক্ষামন্ত্রী শেখ মৌলবি নুরুল্লা মুনির বলেছেন, ‘পিএইচডি বা মাস্টার্স ডিগ্রির এখনকার দিনে আর মূল্য নেই। তার কারণ মোল্লাদের এই ডিগ্রি নেই। তবুও তারাই নাকি শ্রেষ্ঠ’!

মুনিরের এই মন্তব্যের কড়া সমালোচনা শুরু হয়েছে। আফগানদের একাংশের আশঙ্কা, গত ২০ বছরে আফগানিস্তানে যে শিক্ষাব্যবস্থা চালু হয়েছিল, এই তালিবান শাসনে তা ভেঙে পড়তে পারে।

আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর কট্টরপন্থা থেকে সরে আসার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তালেবান, নতুন সরকার গঠনের পর ইতোমধ্যে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম নিউজ ১৮ এক প্রতিবেদনে জানা যায়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে তালেবানের নতুন শিক্ষামন্ত্রী শেখ মৌলভি নুরুল্লাহ মনিরকে উচ্চশিক্ষার যৌক্তিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে দেখা গেছে।

ওই ভিডিওতে মৌলভি নুরুল্লাহকে বলতে শোনা যায়, ‘আজকের দিনে পিএইচডি ডিগ্রি, মাস্টার্স ডিগ্রির কোনো মূল্য নেই। দেখুন আজকে ক্ষমতায় থাকা মোল্লা এবং তালেবানের কারোরই পিএইচডি, এমএ এমনকি হাইস্কুল ডিগ্রিও নেই, কিন্তু তারাই সবার চেয়ে বড়।’

এক টুইটার ব্যবহারকারী এর প্রতিক্রিয়ায় লিখেছেন, ‘এই লোক কেন শিক্ষা নিয়ে কথা বলছে।’ আরেকজন লিখেছেন, ‘উচ্চশিক্ষা তদারককারী মন্ত্রী বলছেন উচ্চশিক্ষার কোনো মূল্য নেই।আরেকজন লিখেছেন, ‘চিন্তাভাবনাগুলো লজ্জাজনক এবং এটি যুবক ও শিশুদের প্রভাবিত করবে।

এদিকে তালেবানের সর্বোচ্চ নেতা হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা বুধবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘ভবিষ্যতে আফগানিস্তানের শাসন ও জীবনের সব কিছুই নিয়ন্ত্রিত হবে শরিয়াহ আইনের মাধ্যমে।’

ঘোষণায় আখুন্দজাদা বলেন, ‘এখন থেকে শাসনতান্ত্রিক সব বিষয় ও সিদ্ধান্ত এবং আফগানিস্তানের জনজীবন ইসলামি শরিয়া আইন অনুযায়ী পরিচালিত হবে।’

শরিয়া আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়- এমন সব আন্তর্জাতিক আইন, চুক্তি ও প্রতিশ্রুতির প্রতি বর্তমান ক্ষমতাসীন তালেবান সরকার শ্রদ্ধাশীল থাকবে বলেও প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।

এর আগে মঙ্গলবার আফাগনিস্তানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করেছে তালেবান। সেই সরকারের প্রধান হিসেবে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তালেবান বাহিনীর শীর্ষ ধর্মীয় নেতা হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদাকে। অন্যান্য নির্বাহী সদস্যের মধ্যে রয়েছেন- মোল্লা মোহাম্মদ হাসান আখুন্দ (প্রধানমন্ত্রী), সিরাজউদ্দিন হাক্কানি (স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী), আব্দুল গনি বারাদার (উপ প্রধানমন্ত্রী), এবং মোহাম্মদ ইয়াকুব (প্রতিরক্ষামন্ত্রী)। এই মন্ত্রিসভায় কোনো নারী সদস্যের জায়গা হয়নি।

এর আগে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তানে তালেবান শাসনে মেয়েদের স্কুলে যাওয়ার অধিকার ছিল না। কিন্তু এবার কাবুলের দখল নেওয়ার পরেই তারা জানিয়ে দেয়, মেয়েরা স্কুল–কলেজে যেতে পারবেন। তবে শরিয়তি আইন মেনে। অর্থাৎ হিজাব পরতে হবে তাদের। ছেলে–মেয়েদের আলাদা বসতে হবে বলেও জানায় তারা।

তালেবানের এই নির্দেশ মেনে নেন ছাত্রীরা। কিন্তু পরবর্তীকালে তালেবান জানায়, শুধু হিজাব নয় আবায়া ও নিকাবও পরতে হবে তাদের। এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন ছাত্রছাত্রীদের একাংশ। ফলে কাবুলে বিশ্ববিদ্যালয় খুললেও ক্লাসরুম প্রায় ফাঁকা। তালেবানি ফতোয়ার প্রতিবাদ করেছেন অধ্যাপকরাও।

Link copied!