এপ্রিল ১০, ২০২১, ০৬:৫৯ পিএম
ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের ৭৩ বছরের জীবনসঙ্গী প্রিন্স ফিলিপ ৯৯ বছর বয়সে শুক্রবার উইন্ডসর প্রাসাদে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। ব্রিটিশ রাজ পরিবারের ইতিহাসে কোন রাজা বা রানীর এত দীর্ঘসময়ের জীবনসঙ্গী আর কেউ ছিলেন না।
ডিউক অফ এডিনবারা মূলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ব্রিটিশ রাজ পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ একজন ব্যক্তিতে পরিণত হন। রানির জীবনসঙ্গী হলেও ফিলিপের কোনো সাংবিধানিক দায়িত্ব ছিল না। কিন্তু রাজ পরিবারের এতো ঘনিষ্ঠ ও গুরুত্বপূর্ণ তিনি ছাড়া আর কেউ ছিলেন না।
রানীর আদেশেই ব্রিটিশ রাজতন্ত্রে একসময় তিনি হয়ে ওঠেন দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। জীবনসঙ্গী হিসেবে রানীকে তার কাজে সহযোগিতা করলেও বিশেষ কিছু কাজের ব্যাপারে প্রিন্স ফিলিপের বিশেষ আগ্রহ ছিল।
পরিবেশ ও তরুণদের জন্যে অনেক কাজ করেছেন তিনি। স্পষ্টভাষী হিসেবেও প্রিন্স ফিলিপের বেশ পরিচিতি ছিল। এই দীর্ঘ সময় ধরে রানি ও ব্রিটিশ রাজ পরিবারের প্রতি একনিষ্ঠ সমর্থন ও সহযোগিতার জন্যে তিনি যথেষ্ট শ্রদ্ধাও অর্জন করেন।
রাজ পরিবারের নানা আনন্দ উৎসব আর কঠিন চ্যালেঞ্জের সময় তিনি সবসময় রানীর পাশে ছিলেন। নিজের ভূমিকার কথা বলতে গিয়ে তিনি একবার বলেছিলেন, তাঁর কাছে যেটা সবচেয়ে ভাল মনে হয়েছে তিনি সেই কাজটাই করেছেন।
ব্রিটিশ রাজকুমারী এলিজাবেথের মন কেড়ে নেয়া গ্রিক রাজপুত্রের জীবনের ১০টি চমকপ্রদ তথ্য তুলে ধরা হলো-
১. প্রিন্স ফিলিপের জন্ম গ্রিসের এক রাজপরিবারে। হেলেনসের রাজা প্রথম জর্জের ছেলে প্রিন্স অ্যান্ড্রু ছিলেন তাঁর বাবা। আর মা ছিলেন ব্যাটেনবার্গের প্রিন্সেস অ্যালিস। ইংল্যান্ডের রাজপরিবারের মাউন্টব্যাটেনরা ছিলেন তাঁর মায়ের দিকের আত্মীয়।
২. জন্ম সনদে প্রিন্স ফিলিপের জন্ম তারিখ লেখা ১৯২১ সালের ২৮ মে। যদিও তিনি জন্মগ্রহণ করেন ১৯২১ সালের ১০ জুন। তৎকালীন গ্রিসে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসরণ করা হতো না বলে এই বিপত্তি।
৩. ১৯২২ সালে গ্রিসে এক অভ্যুত্থানে রাজপরিবার ক্ষমতা হারায়। বিপ্লবীরা তাদের নির্বাসনে পাঠায়। ইংল্যান্ডের রাজা পঞ্চম জর্জ যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়ে পুরো পরিবারকে উদ্ধার করে ফ্রান্সে নিয়ে আসেন।
৪. প্রিন্স ফিলিপের মা পরবর্তী জীবনে স্কিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। তাকে একটি মানসিক রোগীদের চিকিৎসা কেন্দ্রে পাঠানো হয়। মায়ের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল খুবই ক্ষীণ।
৫. প্রিন্স ফিলিপের সঙ্গে প্রিন্সেস এলিজাবেথের প্রথম দেখা হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর প্রাক্কালে। তখন প্রিন্সেস এলিজাবেথের বয়স মাত্র ১৩। রাজা ষষ্ঠ জর্জ এসেছিলেন ডার্টমুথ কলেজ সফরে। সঙ্গে প্রিন্সেস এলিজাবেথ এবং প্রিন্সেস মার্গারেট। তখন প্রিন্স ফিলিপ সেখানে নৌবাহিনীর এক তরুণ ক্যাডেট। এই দুজনকে দেখভাল করার দায়িত্ব দেয়া হয় প্রিন্স ফিলিপের ওপর। সুদর্শন প্রিন্স ফিলিপ এই সময় প্রিন্সেস এলিজাবেথের মনে গভীর ছাপ রাখতে সক্ষম হন। এরপর দুজনের মধ্যে প্রেম এবং চিঠি চালাচালি শুরু হয়। প্রিন্স ফিলিপ বেশ কয়েকবার রাজপরিবারের সঙ্গে থাকার জন্য আমন্ত্রিত হন। সেসময় প্রিন্সেস এলিজাবেথের ড্রেসিং টেবিলে শোভা পেত প্রিন্স ফিলিপের ছবি।
৬. ১৯৪৩ সালে প্রিন্স ফিলিপ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রিন্সেস এলিজাবেথকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। কিন্তু তাতে আপত্তি তুলেছিলেন রাজপরিবারের অনেকেই। প্রিন্স ফিলিপকে ‘রুক্ষ এবং অভদ্র’ বলেও বর্ণনা করেছিলেন তারা। বাগদানের আগে প্রিন্স ফিলিপকে গ্রিসের নাগরিকত্ব ত্যাগ করে ব্রিটিশ নাগরিকত্ব নিতে হয়েছিল।
৭. এই যুগলের বিয়ে হয় ১৯৪৭ সালের ২০ নভেম্বর। তাঁদের অভিনন্দন জানিয়ে বাকিংহাম প্রাসাদে এসেছিল ১০ হাজারের বেশি টেলিগ্রাম। সারা বিশ্ব থেকে পাঠানো হযয়েছিলো প্রায় আড়াই হাজার উপহার।
৮. প্রিন্স ফিলিপ প্রকৃতি এবং বন্য প্রাণী সংরক্ষণে তাঁর কাজের জন্য পরিচিত। কিন্তু ১৯৬১ সালে ভারত সফরকালে বাঘ শিকার করে সেটার সঙ্গে ছবিও তুলেছিলেন। এ নিয়ে সে সময় তীব্র বিতর্ক হয়েছিল।
৯. প্রিন্স ফিলিপ নানা সময়ে মুখ ফসকে এমন সব মন্তব্য করেছেন, যার জন্য তাকে এবং রাজপরিবারকে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়েছে। ১৯৮৬ সালে রানীর সঙ্গে তিনি এক সরকারি সফরে চীনে গিয়েছিলেন। সেখানে চীনা মেয়েদের ‘কুতকুতে চোখওয়ালা’ বলে মন্তব্য করেন। অস্ট্রেলিয়া গিয়ে এক আদিবাসী ব্যবসায়ীকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘তোমরা কি এখনো একজন আরেকজনের দিকে বর্শা নিক্ষেপ করো?’
১০. বাবা হিসেবে প্রিন্স ফিলিপ নাকি ছিলেন বেশ কড়া মেজাজের। বাবার ধমক খেয়ে ছোটবেলায় প্রিন্স চার্লসকে প্রকাশ্যে কাঁদতেও নাকি দেখা গেছে। পুত্রবধূ প্রিন্সেস ডায়ানার সঙ্গে তার ব্যবহার নিয়েও অনেক রকম কথা চালু ছিলো। ডায়ানার প্রেমিক ডোডি আল ফায়েদের বাবা মোহাম্মদ আল ফায়েদ অভিযোগ করেছিলেন, ডায়ানাকে প্রিন্স ফিলিপের নির্দেশে হত্যা করা হয়। কিন্তু এই অভিযোগের কোনো সত্যতাই পাওয়া যায়নি সরকারি তদন্তে। বরং পরবর্তীকালে রাজপরিবারের তরফে প্রকাশ করা প্রিন্সেস ডায়ানার কিছু চিঠিতে বরং দুজনের মধ্যে চমৎকার সম্পর্কেরই প্রমাণ পাওয়া যায়। এসব চিঠিতে প্রিন্সেস ডায়ানা প্রিন্স ফিলিপকে ‘ডিয়ার পা’বলে সম্বোধন করেন।
সূত্র: বিবিসি