মুখ্যমন্ত্রিত্ব টিকিয়ে রাখার লড়াইয়ে মমতা জিতবে তো?

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

অক্টোবর ১, ২০২১, ০৬:৫২ এএম

মুখ্যমন্ত্রিত্ব টিকিয়ে রাখার লড়াইয়ে মমতা জিতবে তো?

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা উপনির্বাচনে ভবানীপুর আসনের ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রিত্ব টিকিয়ে রাখার এই লড়াইয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখোমুখি হয়েছেন বিজেপি প্রার্থী প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়ালের। বৃহস্পতিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত এই নির্বাচন মমতার কাছে তৃতীয়বার মুখ্যমন্ত্রিত্ব ধরে রাখার চেষ্টা। আর বিজেপি প্রার্থীর কাছে প্রতিদ্বন্দ্বিতার চেষ্টা। সিপিআইএম প্রার্থীর কাছে জামানত বাঁচানোর লড়াই।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই ভবানীপুর কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ নিয়ে টানটান উত্তেজনা শুরু হয়। ১৪৪ ধারা জারি করা হয় এলাকায়। কিন্তু তা সত্ত্বেও সমস্ত দোকানপাট খোলা বলে অভিযোগ করেন বিজেপি প্রার্থী। এ নিয়ে পুলিশকে সরাসরি প্রশ্ন করেন প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল। তারপরই রিপোর্ট তলব করে নির্বাচন কমিশন। অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করা হয় এই কেন্দ্রে।

একইদিনে মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর ও সামশেরগঞ্জে আরও দুই বিধানসভা আসনে নির্বাচন হলেও পশ্চিমবঙ্গবাসী সবার নজরে ভবানীপুর। পশ্চিমবঙ্গের বাংলা দৈনিক আনন্দবাজার বলছে, বিপুল ভোট পড়ছে শমসেরগঞ্জ ও জঙ্গিপুরে। সেই তুলনায় ভোটদানের হারে অনেকটা পিছিয়ে ভবানীপুর। ভবানীপুরে বৃহস্পতিবার ভোটগ্রহণ শুরু হয় সকাল ৭টায়। ভোটগণনা শেষে আগামী ৩ অক্টোবর ফল প্রকাশ করা হবে।

নির্বাচন কমিশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বিকেল ৫টা পর্যন্ত মুর্শিদাবাদের শমসেরগঞ্জে ভোট পড়েছে ৭৮ দশমিক ৬০ শতাংশ। একই জেলার জঙ্গিপুরে দুপুর ৩টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে ৭৬ দশমিক ১২ শতাংশ। কলকাতার ভবানীপুরে দুপুর ৩টা পর্যন্ত ভোটদানের হার ৫৩ দশমিক ৩২ শতাংশ।

মুখ্যমন্ত্রিত্ব টিকিয়ে রাখতে ভবানীপুরের এই উপনির্বাচনে জয়ের বিকল্প নেই মমতার। কারণ গত এপ্রিল-মে মাসে পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রাম বিধানসভা আসনের নির্বাচনে হেরে গিয়েছিলেন মমতা। ভারতের নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী, কোনও জনপ্রতিনিধি ভোটে হেরে পদে আসীন হতে গেলে তাকে ছয় মাসের মধ্যে ফের নির্বাচনে জয়ী হতে হয়।

৭২ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটকেন্দ্রে ভবানীপুর উপনির্বাচনের বিজেপি প্রার্থী প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল মদন মিত্র ইচ্ছাকৃতভাবে এই কেন্দ্রে ভোট মেশিন বন্ধ করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ তোলেন। তিনি বলেন, ‘‌আমরা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আশাবাদী। নিরাপত্তা মোতায়েন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এলাকার ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করছি। রাজ্য সরকার এখন ভয়ে আছে।’‌

তৃণমূলের কেন্দ্রীয় নেতা ফিরহাদ হাকিম পাল্টা বলেন, ‘‌ভবানীপুরে পদ্মশিবিরের কোনও শক্তি না থাকায় এই ধরনের অভিযোগ করছেন।’‌

আগামী ৩ অক্টোবর এই উপনির্বাচনের ফল প্রকাশ করা হবে। তার মধ্যেই ১৪৪ ধারা জারি সত্ত্বেও বিভিন্ন জায়গায় দোকানপাট খোলা বলে অভিযোগ তোলেন বিজেপি প্রার্থী। তারই প্রেক্ষিতে রিপোর্ট তলব করে নির্বাচন কমিশন। ৩৫ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয় ভবানীপুরের উপনির্বাচনে। কিন্তু সকাল থেকে বুথ ছাড়া আর কোথাও কেন্দ্রীয় বাহিনীর দেখা যায়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। 

গত ৫ মে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পদে তৃতীয়বার শপথ নেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যে কারণে আগামী ৫ নভেম্বরের মধ্যে তাকে বিধানসভার সদস্য হয়ে সাংবিধানিক শর্ত পূরণ করতে হবে। ভবানীপুর কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত তৃণমূল বিধায়ক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় ২১ মে পদত্যাগ করেন। সেই আসনের উপনির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন মমতা।

কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব দাবি করেছেন, ‘ভবানীপুর থেকে জিতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হয়ে আসছেন। এই উপনির্বাচনেও সেই ধারা অব্যাহত থাকবে। আর জয়ের ব্যবধানে তিনি নিজের রেকর্ডকে ছাপিয়ে যাবেন।’

এদিকে ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্রে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জয় সুনিশ্চিত। ওই কেন্দ্রে ভোট চলাকালীনই বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন  বিজেপির জাতীয় কার্যকরী কমিটির সদস্য ও রাজ্য বিজেপির সহ-সভাপতি জয় বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তিনি বলেছেন, ‘ওই কেন্দ্রে আজকে নির্বাচন হচ্ছে । ইতিমধ্যে 35 শতাংশ ভোট হয়েছে । নির্ধারিত সময় অতিক্রম হলে দেখা যাবে তা প্রায় ৬৫  শতাংশের উপরে চলে যাবে। আমি বিজেপির কর্মী হয়েও দাবি করছি, এই কেন্দ্রে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জিতবেন । কারণ যে ভুল গত বিধানসভা নির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টি করেছিল । সেই একই ভুল এবারের উপনির্বাচনেও তারা করছে ৷’

অন্যদিকে, পার্টি অফিসে লাল পাঞ্জাবি পরে বসে থাকলেও তিনি নিশ্চিন্তে নেই বলে জানালেন বামপ্রার্থী শ্রীজীব বিশ্বাস ৷ সকাল থেকে দুটো ওয়ার্ড ঘুরেছেন, আরও ঘুরবেন ৷ বকুলবাগানে লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিলেন ৷ তবে ভোটের শতাংশের হিসেব দেখে তাঁর মত, মানুষের উপর চাপিয়ে দেওয়া এই উপনির্বাচনকে প্রত্যাহার করছে জনসাধারণ, তারা ভোট বিমুখ হয়ে গিয়েছে ৷

সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস, আনন্দবাজার।

Link copied!