ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবি: ৫৭ অভিবাসনপ্রত্যাশীর মৃত্যুর শঙ্কা

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

জুলাই ২৭, ২০২১, ০৬:৩৩ পিএম

ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবি: ৫৭ অভিবাসনপ্রত্যাশীর মৃত্যুর শঙ্কা

অবৈধভাবে ইতালি যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগরের লিবিয়া উপকূলে এবটি নৌকা ডুবে যাওয়ার ঘটনায় অন্তত ৫৭ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীর মৃত্যুর আশঙ্কা করা হচ্ছে।

জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার (আইওএম) মুখপাত্র সাফা মেহলি জানান, লিবিয়ায় পশ্চিম উপকূলীয় শহর খুমসের কাছে স্থানীয় সময় রবিবার (২৫ জুলাই)এই দুর্ঘটনা ঘটে। নৌকাটিতে কমপক্ষে ৭৩ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী ছিলেন বলে আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে।

টুইটার বার্তায় আইওএম মুখপাত্র জানান, ডুবে যাওয়া নৌকা থেকে জেলে আর লিবিয়ার কোস্টগার্ড সদস্যরা ১৮ জনকে উদ্ধার করে তীরে নিয়ে আসেন। দুর্ঘটনায় পড়া ওই নৌকাটিতে নাইজেরিয়া,ঘানা ও গাম্বিয়ার নাগরিকরা ছিলেন।

বেঁচে যাওয়া অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বরাত দিয়ে আলজাজিরার খবরে বলা হয়, ইতালি যাওয়ার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া নৌকাটি ভূমধ্যসাগরের লিবিয়া উপকূলে পৌঁছলে ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়।পরে বৈরি আবহাওয়ার কারণে নৌকাটি ডুবে যায়।নৌকাটিতে কমপক্ষে ২০ জন নারী ও ২ জন শিশু ছিল।

কেন ভূমধ্যসাগর দিয়ে ইউরোপ?

অবৈধভাবে ইউরোপের দেশগুলোতে পৌঁছানোর পথে ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবির ঘটনা বেড়েই চলেছে। অভিবাসন প্রত্যাশীদের ঠেকাতে ভূমধ্যসাগরে নজরদারি বাড়লেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনেকে সাগর পাড়ি দিচ্ছেন। আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্য থেকে দারিদ্র্যের কারণে হাজার হাজার অভিবাসী সম্প্রতি ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়েছেন। এসব অভিবাসীর বেশিরভাগেরই গন্তব্য ইতালি। ২০২১ সালে অভিবাসীদের যাওয়ার হার আবার বেড়েছে।

উন্নত জীবন আর বেকারত্বের অভিশাপ ঘোচাতে অবৈধভাবে যারা ইউরোপের দেশগুলোতে  প্রবেশ করতে চায়, তাদের জন্য সুবিধাজনক জায়গা হচ্ছে আফ্রিকার দেশ লিবিয়া।

বাংলাদেশ ,ভারত, ইন্দোনেশিয়াসহ এশিয়া,  আফ্রিকা ও মধ্যপা্চ্যের বিভিন্ন দেশের নাগরিকেরা উন্নত জীবন গড়া ও ভাগ্যের  চাকা বদলানোর উদ্দেশ্য নিয়ে নানা উপায়ে লিবিয়া পৌঁছে। তারপর দেশটির  জুয়ারা উপকূল  থেকে নৌকায় করে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে অনেকে ইতালি পৌঁছে থাকে। জীবনের  ঝুঁকি নিয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে নৌকাডুবিতে অনেকের মৃত্যু ঘটে।

নৌকাডুবির সাম্প্রতিক ঘটনাবলি  

গত ২৪ জুলাই ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাওয়ার পথে তিউনিসিয়ার মাহদিয়া প্রদেশে দুটি নৌকাডুবির ঘটনায় ৫৩ জন অভিবাসন প্রত্যাশীকে উদ্ধার করা হয়।

এর আগে, গত ১৯-২২ জুলাই ভূমধ্যসাগর থেকে ৩৬৮ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীকে উদ্ধার করে মরক্কোর নৌবাহিনীর সদস্যরা। চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম সিনহুয়ার খবরে এ তথ্য জানা গেছে।

গত ২১ জুলাই অবৈধভাবে সাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপের ইতালি যাওয়ার সময় ভূমধ্যসাগরে একটি নৌকাডুবির ঘটনায় অভিবাসনপ্রত্যাশী ১৭ জন বাংলাদেশি নিহত হন। এসময় তিউনিশিয়ার কোস্টগার্ড সদস্যরা ৩৮০ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীকে উদ্ধার করে বলে আন্তর্জাতিক সংস্থা রেডক্রিসেন্ট তিউনিশিয়া শাখা জানায়।

তিউনিশিয়া রেডক্রিসেন্ট কর্মকর্তা মংগি স্লিমের বরাত দিয়ে স্থানীয় সময় বুধবার (২১ জুলাই) সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়, লিবিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় উপকূল জুয়ারা থেকে অভিবাসপ্রত্যাশীদের নিয়ে ওই নৌকাটি ইউরোপের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে ভূমধ্যসাগরে তিউনিশিয়ার উপকূলে ডুবে যায়। পরে ওই ডুবে যাওয়া নেীকা থেকে ১৭ বাংলাদেশির মরদেহ ও ৩৮০ জনের বেশি মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

বাংলাদেশসহ সিরিয়া, সুদান, মিশর, মালি ও ইরিত্রিয়ার এসব অভিবাসনপ্রত্যাশী লিবিয়া থেকে নৌকাযোগে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাওয়ার চেষ্টা করছিল বলেও তিউনিশিয়ান রেডক্রিসেন্টের ওই কর্মকর্তা জানান।

এর আগে,গত ০৮ জুলাই অবৈধভাবে সাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে যাওয়ার সময় আফ্রিকার  তিউনিশিয়ার উপকূলে এবটি নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। ডুবে যাওয়া ওই নৌকা থেকে অভিবাসনপ্রত্যাশী ৪৯ জন বাংলাদেশিকে তিউনিশিয়ার কোস্টগার্ড সদস্যরা উদ্ধার করে।

২০১৯ সালের মে মাসে লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাওয়ার পথে নৌকাডুবিতে অন্তত ৪০ বাংলাদেশি নাগরিকের মৃত্যু ঘটে।

জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থা- ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশনের (আইওএম) তথ্যমতে চলতি বছরের জানয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত এই পাঁচ মাসে আফ্রিকা থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি ও মাল্টা যাওয়ার পথে পাঁচ শতাধিক অভিবাসন প্রত্যাশী মারা গেছেন।  

Link copied!