শরণার্থীদের প্রচণ্ড বিক্ষোভে উত্তাল পোল্যান্ড-বেলারুশ সীমান্ত

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক

নভেম্বর ৯, ২০২১, ০৬:৫১ পিএম

শরণার্থীদের প্রচণ্ড বিক্ষোভে উত্তাল পোল্যান্ড-বেলারুশ সীমান্ত

ইউরোপের দেশ পোল্যান্ডে প্রবেশের জন্য দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় বেলারুশ সীমান্তে হাজারো শরণার্থীর বিক্ষোভ চলছে।তবে বিক্ষোভকারীদের প্রবেশ ঠেকাতে মোতায়েন করা হয়েছে ১২ হাজারের বেশি পোলিশ সেনা।

বেলারুশের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ইরাক থেকে আসা এসব শরণার্থীদের বেআইনিভাবে প্রবেশের ব্যবস্থা করে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে পোল্যান্ড। একে শত্রুভাবাপন্ন আচরণ বলেও আখ্যায়িত করেছে পোল্যান্ড। এই নিয়ে সোমবার উত্তাল হয় দুই দেশের সীমান্ত।

কয়েকটি ভিডিও ফুটেজ দেখিয়ে পোল্যান্ড দাবি করেছে, বেলারুশ ইচ্ছাকৃতভাবে এ কাজ করছে। শরণার্থীদের তারা ইউরোপে ঢোকানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। তাদেরই পরিকল্পনায় পোল্যান্ডের এই শরণার্থী রুট তৈরি হয়েছে। যে ভিডিও-র কথা বলা হচ্ছে, তা স্থানীয় কিছু সংবাদমাধ্যমের বলে দাবি করা হচ্ছে। তিবে এর সত্যতা নিশ্চিত করা যায়নি।

আরেক ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, কীভাবে শরণার্থীদের বেলারুশের পুলিশ নেতৃত্ব দিয়ে সীমান্ত পর্যন্ত পৌঁছে দিচ্ছে। এরপর সীমান্ত পেরনোর পরামর্শ দিচ্ছে। সংঘর্ষের পর অবশ্য সীমান্তেই ক্যাম্প তৈরি করে আছেন শরণার্থীরা।

ইরাক থেকে এসেছেন এসব শরণার্থী। মূলত কুর্দ সম্প্রদায়ের এসব মানুষ ইরাক থেকে বেলারুশ হয়ে পোল্যান্ডে প্রবেশের চেষ্টা করছেন। এর আগে এই রুট দিয়ে শরণার্থীরা যাতায়াত করতেন না বলে পোল্যান্ডের দাবি।

পোল্যান্ডের অভিযোগ, ইউরোপীয় ইউনিয়নের উপর চাপ সৃষ্টি করার জন্যই এই রাস্তা তৈরি করেছে বেলারুশ। শরণার্থীদের ঢুকিয়ে তারা পোল্যান্ড-সহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের একাধিক দেশে বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা করছে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির খবরে বলা হয়, শরণার্থীদের প্রবেশে বাধা দিয়েছে পোল্যান্ডের নিরাপত্তা বাহিনী। ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে কাঁটাতার ঘেরা সীমান্তের কাছে কয়েকশ মানুষ ভিড় জমিয়েছে। এসব শরণার্থী মাঝে মাঝে কাঁটাতার পার হয়ে পোল্যান্ডে প্রবেশের চেষ্টা করছে। এ ছাড়া কয়েক হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশী পোল্যান্ড সীমান্তের উদ্দেশে রওনা হয়েছে বলে বিবিসির খবরে বলা হয়।

সোমবার(৮ নভেম্বর) এ নিয়ে জরুরি সভা করেছে পোল্যান্ড সরকার। ওই সভায় শরণার্থীদের প্রবেশ ঠেকাতে দেশটির পূর্বাঞ্চলে ১২ হাজার সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

পোল্যান্ড, লিথুয়ানিয়া ও লাটভিয়ার সরকার সম্প্রতি জানিয়েছে, বেলারুশ থেকে কয়েক মাসে তাদের দেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। অনুপ্রবেশকারীদের অনেকেই এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে আগত।

পোল্যান্ডের কেন এই অভিযোগ

পোল্যান্ড সরকার বেশ কিছুদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে যে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বেলারুশের রাষ্ট্রপ্রধান লুকাশেঙ্কোর উপর চাপ সৃষ্টি করছে। বেলারুশের উপর একাধিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। তারই বদলা নেওয়ার চেষ্টা করছে বেলারুশ। শরণার্থী ঢুকিয়ে তারা পাল্টা ইউরোপীয় ইউনিয়নের উপর চাপ তৈরি করছে। নিষেধাজ্ঞার প্রতিশোধ নিতে বেলারুশের কর্তৃত্ববাদী প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্দার লুকোশেঙ্কো এ ধরনের অনুপ্রবেশে ইন্ধন যোগাচ্ছেন বলে মনে করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

বেলারুশের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ পোল্যান্ডের শুধু একার নয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধান উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েনও একই সুরে অভিযোগ করেছেন। বেলারুশের উপর নিষেধাজ্ঞা আরো কড়া হতে পারে বলে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন।

জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রীও বেলারুশ সরকারের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ করেছেন। সীমান্তে উত্তেজনায় পোল্যান্ডকে সবরকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। বস্তুত এর আগেও পোল্যান্ড-জার্মান সীমান্তে পোল্যান্ডের সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে সাহায্য করেছে জার্মান প্রশাসন। জার্মানির বক্তব্য, শরণার্থীরা পোল্যান্ড দিয়ে জার্মানি ঢোকার চেষ্টা চালাচ্ছেন।

এদিকে,  বেলারুশ-পোল্যান্ড সীমান্তে শরণার্থীদের মধ্যে প্রচণ্ড খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে।  নাসরুদ্দিন আহমেদ নামে ইরাক থেকে আসা এক শরণার্থী বিবিসিকে জানান, অভিবাসনের আশায় স্ত্রী, তিন সন্তানসহ বেলারুশে আছেন তিনি।গত মাসে বেলারুশের রাজধানী মিনস্কে পৌঁছেছেন তারা।

নাসরুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সীমান্তে লোকজনের কাছে তেমন কোনো খাবার-দাবারও নেই। মানবেতর অবস্থায় সেখানে দিনাতিপাত করছে অভিবাসনপ্রত্যাশীরা।’

 সূত্র: বিবিসি, ডয়েচে ভেলে. আলজাজিরা

Link copied!