সিরিয়ায় ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার হওয়া সেই ‘অলৌকিক নবজাতক’ সুস্থ হয়ে উঠছেন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৩, ১১:০৮ পিএম

সিরিয়ায় ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার হওয়া সেই ‘অলৌকিক নবজাতক’ সুস্থ হয়ে উঠছেন

গত ৬ ফেব্রুয়ারি শক্তিশালী ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত হয় তুরস্ক ও সিরিয়ার বেশ কয়েকটি প্রদেশ। ভূমিকম্পের দিনই সিরিয়ার একটি ধ্বংসস্তূপের নিচে জন্ম হিয়েছিল একটি শিশুর।সিরিয়ার জেন্দেরিস শহরে ভূমিকম্পের সময় আয়াকে জন্ম দেওয়ার পর তার মা মারা যান।

উদ্ধারকর্মীরা ধ্বংসস্তূপ থেকে মায়ের মৃতদেহের সাথে সংযুক্ত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে। সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন মতে, শিশুর মা ওই ভবনে শ্রমিকের কাজ করতেন। কিন্তু ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত ভবনের ধ্বংসস্তুপে আটকে পড়েন। এরপর সেখানেই সন্তান জন্ম দেন তিনি। কিন্তু উদ্ধারের আগেই তিনি মারা যান।

ভূমিকম্পে ওই শিশুটির বাবা ও ভাই-বোনসহ পরিবারের সবাই মারা গেছে। বেঁচে আছে শুধু ওই শিশুটি। তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর নাম রাখা হয় আয়া। আরবিতে যার অর্থ অলৌকিক। হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিয়ে বর্তমানে শিশুটি ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছে।

শিশুটিকে ‘অলৌকিক’ বলা হচ্ছে। কারণ জন্ম নেয়ার পরপরই মাকে হারিয়েছে সে। কিন্তু তার কোনো ক্ষতি হয়নি। গত ৭ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এ ঘটনা উঠে এসেছে।হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর শিশুটিকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন তার বাবার চাচা। ভূমিকম্পে তার সালাহ আল-বাদরান শহরের বাড়িটি ধ্বংস গেছে। তাই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে একটা তাঁবুতে আশ্রয় নিয়েছেন।

শিশু আয়াকে ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধারের ঘটনার একটা ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ওই ভিডিওতে দেখা যায়, ধসে পড়া চারতলা ভবনের ধ্বংসস্তূপ থেকে এক ব্যক্তি দৌড়ে এসে ধুলোয় ঢেকে থাকা একটা ছোট শিশুকে জড়িয়ে ধরেছেন।

ভিডিওতে দ্বিতীয় ব্যক্তিকে দেখা যায় (শূন্যের নিচে থাকা তাপমাত্রা) শিশুটির জন্য একটা কম্বল নিয়ে দৌড়ে আসতে এবং তৃতীয়জন তাকে হাসপাতলে নেওয়ার জন্য একটা গাড়ির জন্য চিৎকার করছেন।

এদিকে, সিরিয়ার  এই অলৌকিক শিশুটিকে দত্তক নিতে এরই মধ্যে  হাজারেরও বেশি মানুষ প্রস্তাব দিয়েছেন বলে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়।

বর্তমানে শিশুটি সিরিয়ার আফরিন শহরের নিকটবর্তী একটি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছে। তার শরীরে ক্ষত আছে। এ ছাড়াও অতিরিক্ত ঠাণ্ডায় ঠিকমতো শ্বাস নিতে পারছে না সে। এক চিকিৎসকের স্ত্রীকে দেখা গেছে শিশুটিকে বুকের দুধ খাওয়াতে। তবে ধীরে ধীরে শিশুটি সুস্থ হয়ে উঠছে।

কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রচণ্ড ঠাণ্ডার কারণে শিশুটির হাইপোথোর্মিয়া হয়েছে। তার শরীরের তাপমাত্রা বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে তাকে ক্যালশিয়াম দেওয়া হয়েছে।

আফরিন শহরের নিকটবর্তী  ওই হাসপাতালের ম্যানেজার খালিদ আত্তিয়াহ জানান, চার মাস বয়সী এক কন্যাসন্তান রয়েছে তাঁর। আত্তিয়াহর স্ত্রী আয়াকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন বলে জানান তিনি। 

শিশু আয়াকে দত্তক নিতে চেয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অসংখ্য ফোনকল এসেছে বলে জানিয়ে আত্তিয়াহ বলেন, ‘এখনই দত্তক দেওয়া হবে না আয়াকে। ওর কোনো আত্মীয়স্বজন না পেলে তারপর ভেবে দেখব। এখন ও আমার সন্তানের মতোই থাকবে।’ 

এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও শিশু আয়াকে দত্তক নেওয়ার জন্য হাজারো মানুষ আবেদন করেছেন। একজন লিখেছেন, ‘আমি শিশুটিকে দত্তক নিতে চাই এবং তাকে একটি সুন্দর জীবন দিতে চাই।’

কুয়েতের এক টেলিভিশন উপস্থাপক লিখেছেন, ‘আমি তাকে দত্তক নেওয়া ও দেখভালের জন্য প্রস্তুত, যদি নিয়মকানুন মেনে আমাকে দেওয়া হয়।’ 

নবজাতকটির এক দূর সম্পর্কের আত্মীয় খলিল আল-সুওয়াদি জানান, আয়াকে উদ্ধারের সময় তিনি সেখানে ছিলেন এবং আফরিনের হাসপাতালে চিকিৎসক মারুফের কাছে নিয়ে যান। 

 

প্রসঙ্গত, সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) স্থানীয় সময় ভোররাতে তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ওই ভূমিকম্পে তুরস্ক-সিরিয়া সীমান্ত এলাকা ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৩৬ হাজারের বেশি মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে।

Link copied!